আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!

অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!

 

অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার উদাসীনতায় হাসপাতালে অনিম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার একনায়কতন্ত্রে হাসপাতালটি নানা অনিয়মের জর্জরিত হয়ে পড়েছে। একের পর এক অনিয়ম করেও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮ জন ডাক্তার থাকলেও রোগিদের সেবা দিচ্ছেন মাত্র হাতে গোনা দু’একজন ডাক্তার। বেলা ১২টা ৩০ মিনিটের পরে দুই একজন ডাক্তার ছাড়া সকলে চলে গেছেন। সাড়ে বারোটায় মেডিকেলে প্রবেশ করে দেখা হয় টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা দেবশ্রী নামের এক কর্মচারীর সাথে তিনি জানান, টিকিট কাউন্টার ১ টায় বন্ধ করা হয়। তিনি আরো জানান, রোগী না থাকলে ডাক্তার অনেক সময় ১ টার আগেই চলে যায়। তখন রোগী আসলে ইমারজেন্সি বিভাগে ডাক্তার থাকেন তিনি দেখেন।

এছাড়াও দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে দেখা যায়, ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী রোগীকে সরকারি ঔষধ দেয়ার জন্য মেডিকেলে ফার্মাসিস্টের যে কক্ষটি রয়েছে সেটি কর্মচারীশূন্য। অথচ মেডিকেলের ভিতরে ফার্মেসিতে রোগী ও রোগীর স্বজনরা ভিড় জমিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে রয়েছেন ঔষধ নেয়ার জন্য। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা দেবশ্রী তিনি এসে রোগীদের ঔষধ দিতে শুরু করেন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ফার্মাসিস্ট মোস্তাফিজ ছুটিতে রয়েছেন। তার পরিবর্তে একজন সিস্টারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তিনি রোগীদের ঔষধ দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভুল ঔষধ চলে যাচ্ছে শিশু-বৃদ্ধ রোগীদের হাতে। ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছে রোগীরা। যাহা একজন রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত বয়ে আনতে পারে। বছরের পর বছর এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলেও ব্যবস্থা নেয়ার যেন কেউ নেই।

সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা হয় ভরপাশা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা শিউলি বেগম নামের এক নারীর সাথে তখন তিনি জানান, রুগী নিয়ে এসেছি প্রায় ১ ঘন্টা হয়েছে কিন্তু ডাক্তার নেই। কথা হয় একাধিক রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে তারা অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রায় ৫০ জন রোগীসহ অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতালে এসেছি। অথচ ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে আমরা ভিড় জমিয়ে বসে রয়েছি। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে বিভিন্ন ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত এক্স-রে, আলতা স্নো মেশিন এমারজেন্সি রুমের জেনারেটর আইপিএস নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অপারেশন থিয়েটারের বেড ভাঙ্গাচুরা মরিচা পড়ে রয়েছে। বেড একদিকে হেলে পড়েছে এক পাশের হাতল সিলিং ফ্যানের পাখা দিয়ে ঝালাই করে মেরামত করা হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারের বেডের উপর নেই লাইট। অনেক সময় অপারেশন চলাকালে বিদ্যুৎ চলে গেলে মোবাইলের ফ্লাশ লাইট ব্যবহার করে চিকিৎসা দেয়া হয়। সূত্র আরো জানায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জন্য একটা ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের বরাদ্দ হয়েছে। সেটাও এক্স-রে মেশিন রাখার উপযুক্ত রুম না থাকায় ঢাকা থেকে হাসপাতালে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ১৪ টি ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রতিদিন বেলা ১টা ৩০মিনিটের পরে নতুন ভবনের দুপাশ দিয়েই মূল ফটকের কেসিগেট তালাবদ্ধ পুরাতন ভবনের ফটক খোলা থাকলেও এমারজেন্সি বিভাগে ডাক্তার ব্যতিত নেই কোন ডাক্তার। অনেক সময় এমারজেন্সি বিভাগেও ডাক্তার থাকেও না তখন স্যাকমো রোগী দেখে। হাতে গোনা দু’তিনজন নার্স ও ব্রাদার দিয়েই চলছে রোগীদের সেবার কার্যক্রম।

এই বিষয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও ডাক্তার মো: আরিফুল ইসলাম জানান, ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সকল ডাক্তার থাকার কথা। তবে কেউ যদি আগে চলে যায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা বিভিন্ন রোগিদের ডাক্তারের চিকিৎসার প্রত্যয়ন দেয়ার নামে ১ থেকে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারিকরণে ওটি ফি দিতে হয় ৫০০ টাকা। মেডিকেলের নার্সদের দিতে হয় ১ হাজার টাকা। একজন সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির রোগীর বাহির থেকে ঔষধ ক্রয় করতে হয় ৭ হাজার টাকার।মেডিকেল থেকে কোনো প্রকার ঔষধ দেয়া হয় না। অভিযোগ রয়েছে সিজারের রুগীদের ৩-৪ দিন পার হয়ে গেলেও ড্রেসিং করানো হয় না। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সরকারি ঔষধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। করোনাকালিন প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা ভাতা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছিলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে টেস্ট বাণিজ্যের। রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষের নামে চলছে বাণিজ্য।
রোগীদের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার জন্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাচ্ছেন কমিশনের বিনিময়ে। এছাড়াও উপজেলার পৌর শহর ও গ্রামগঞ্জে অবৈধ ক্লিনিক ও ডেন্টাল ক্লিনিক থেকে অভিযানের ভয় দেখিয়ে মাসোহারা আদায় করছেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা। একাধিক ডাক্তার ও তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে শেয়ার থাকায় অধিকাংশ রোগীকে প্রয়োজন ছাড়াও বাহিরে টেস্ট করাণোর জন্য পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. শংকর কুমার প্রসাদ অধিকারী জানান, আমি যোগদানের পর থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা উন্নত করার চেষ্টা চালাচ্ছি।

সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। তবে যদি কেউ অনিয়ম করেন তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon