আজ শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন
আজ পহেলা ফাল্গুন, হাওয়ায় লেগেছে আগুন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
আজ পয়লা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। প্রকৃতিতে আজ কোকিল গান ধরেছে। হাওয়ায় লেগেছে ফাগুনের আগুন। মর্মে জেগেছে দোলা। প্রকৃতির এ অপরূপ আবাহন জানান দিচ্ছে, ঋতুচক্রে বছর ঘুরে আবার এসেছে বসন্ত। বরিশালসহ রাজধানী ঢাকার পথে পথে আজ হয়তো রক্তির পলাশের শোভা নেই। কোকিলের গান হয়তো হারিয়ে গেছে অজস্র যানবাহনের বিকট হর্নে। তাতে কী, বসন্ত যে আজ সত্যিই দুয়ারে দাঁড়িয়ে।
শীতের রিক্ততা মুছে প্রকৃতিজুড়ে সাজ সাজ রব। বিবর্ণ প্রকৃতিতে জেগে উঠেছে নতুন প্রাণ। কবিগুরুর ভাষায়-
‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
এই সংগীত-মুখরিত গগনে
তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।
এই বাহির ভুবনে দিশা হারায়ে
দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।’
বসন্তে গাছে গাছে নতুন পাতা আসে। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। ডালে ডালে কোকিল। রঙিন ফুলে প্রকৃতি সুশোভিত হয়ে ওঠে। এ সময়ে বাতাসে ফুলের রেণু ছড়ায়। প্রকৃতি হয়ে উঠে অপরূপ।
আজ ভালোবাসারও দিন—ভ্যালেন্টাইনস ডে। গত কয়েক বছর ধরে পয়লা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একই দিনে উদযাপন করা হচ্ছে। আগে পয়লা ফাল্গুন পড়ত ১৩ ফেব্রুয়ারি, তার পরদিন অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংস্কার করায় এখন ১৪ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয়।
বসন্তকে সামনে রেখে গ্রাম বাংলায় মেলা, সার্কাসসহ নানা বাঙালি আয়োজনের সমারোহ থাকছে। ভালোবাসার মানুষেরা মন রাঙাবে বাসন্তি রঙ্গেই। শীতের সঙ্গে তুলনা করে চলে বসন্তকালের পিঠা উৎসবও।
যদিও ভালোবাসার জন্য কোনো বিশেষ কোনো দিন-ক্ষণের আবশ্যকতা নেই। তবু, কয়েক বছর থেকেই পশ্চিমা রীতি অনুযায়ী ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ভালোবাসা দিবস বেশ উৎসাহের সঙ্গেই উদযাপিত হচ্ছে আমাদের দেশে। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্ম তাদের প্রিয়জনের কাছে হৃদয়ের গোপন কথাটি বলার জন্য এই দিনকে বেছে নেন। ভালোবাসা দিবসে যুগলের বেড়াতে যাওয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়া, উপহার বিনিময় আর মধুর বচনে প্রণয়ের কথোপকথনে কাটিয়ে দেন দিনটি।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আজ থাকছে বসন্ত উৎসবের আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে সেই তারুণ্যের সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে শাহবাগ, রমনা বটমূল, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে রাজধানীর পুরো এলাকায়; শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে নিভৃত পল্লীর ধুলোমাখা পথেও। দিনটিকে আরো উপভোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি।
বসন্ত যেমন আমাদের খুশির ঋতু; তেমনি বেদনারও বটে। ফাগুনে শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ মনে করিয়ে দেয় ১৯৫২ সালের ভাষাশহিদদের কথা। ফাল্গুন মনে করিয়ে দেয় ভাষা আন্দোলনের রক্তের ইতিহাস। এই মাসেই উদযাপন করা হবে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ফাল্গুনের সাথে মিশে আছে আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসও।