আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
আল্লাহ জালিমের জুলুম থেকে মুসলিমদের হেফাজত কর : আখেরি মোনাজাতে চরমোনাই পীর

আল্লাহ জালিমের জুলুম থেকে মুসলিমদের হেফাজত কর : আখেরি মোনাজাতে চরমোনাই পীর

আল্লাহ জালিমের জুলুম থেকে মুসলিমদের হেফাজত কর : আখেরি মোনাজাতে চরমোনাই পীর

 

আল্লাহ জালিমের জুলুম থেকে মুসলিমদের হেফাজত কর : আখেরি মোনাজাতে চরমোনাই পীর

পল্লী জনপদ ডেস্ক॥

চরমোনাই’র ঐতিহাসিক ফাল্গুনের তিনদিনব্যাপী ৯৯তম বাৎসরিক মাহফিল আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে আমীরুল মুজাহিদীন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই ১১ মিনিটের মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা এবং তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতদের জন্য দোয়া করেন।

তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের দরবারে ফরিয়াদ করেন তিনি যেন জালিমদের জুলুম ও অত্যাচার থেকে মুসলিমদেরকে হেফাজত করেন।

আখেরী মোনাজাতে পীর সাহেব চরমোনাই ভারত, কাশ্মীর, মিয়ানমার, ফিলিস্তিন, সিরিয়াসহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের নিরাপত্তা ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করেন। বিশেষত তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতদের জন্য বিশেষ দোয়া করেন তিনি।

সমাপনী অধিবেশনের বয়ানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বাংলাদেশ আজ চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সর্বস্তরে ইসলামকে বিজয়ী করতে হবে। আমরা ইসলামকে বিজয়ী করার মাধ্যমে দেশের মানুষের সামনে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য উপস্থাপন করতে চাই।

তিনি বলেন, অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক বিবর্তনবাদসহ অসঙ্গতিতে ভরা পাঠ্য সিলেবাসের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে নাস্তিক বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে৷ এমন পাঠ্যসিলেবাস ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে চলতে দেয়া যায় না।

পীর সাহেব আরো বলেন, চরমোনাই মাহফিল দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে নয় বরং পথভোলা মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যই এই মাহফিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সুতরাং এখানে দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আসার প্রয়োজন নেই। যদি এমন কেউ এসে থাকেন তবে নিয়ত পরিবর্তন করে আত্মশুদ্ধির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং জাতিবিধ্বংসী পাঠ্যপুস্তক বাতিলের দাবিতে ২৫ ফেব্রুয়ারী সারাদেশে থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন পীর সাহেব চরমোনাই।

সমাপনী অধিবেশনের বয়ানে পীর সাহেব চরমোনাই মাহফিল বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আখেরী মুনাজাতে অংশ নেয়া প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সম্মানিত ওলামায়ে কেরাম এবং গণমাধ্যমকর্মীদের মোবারকবাদ জানান পীর সাহেব চরমোনাই।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারী’২৩) বাদ জোহর আমীরুল মুজাহিদীন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই’র উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয়ে শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারী’২৩) সকাল ৯টায় সমাপনী অধিবেশন ও আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় লক্ষ লক্ষ মুসল্লীদের আধ্যাত্মিক এ মিলনমেলা।

উদ্বোধনী অধিবেশনে আলোচনা করেন চরমোনাই পীর। সেখানে তিনি বলেন, যারা চরমোনাইতে নতুন এসেছেন, তারা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে দিয়ে আখেরাতের খেয়াল-ধ্যান অন্তরে যায়গা দেন। দিল থেকে বড়ত্ব এবং আমিত্ব ভাব বের করে দিয়ে আল্লাহর কুদরতি পায়ে নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। সদা-সর্বদা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দিলকে তরতাজা রেখে আল্লাহর ওলী হয়ে চরমোনাই থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।

এ বছর মাহফিলে দেশ ও দেশের বাইরের ওলামায়ে কেরাম অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান ও নসিহত করেন। এছাড়া মাহফিলের আগের মধ্যরাতে আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও বেফাকের সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসান চরমোনাই মাদরাসায় উপস্থিত হয়ে মাহফিলের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নেন এবং প্রয়োজনের পরামর্শ প্রদান করেন।

মাহফিল সূত্রে জানা যায়, মাহফিলে আগত মুসল্লীদের ৬,০০০ হালকায় বিভক্ত করে হাতে-কলমে সালাত ও ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাহফিলে আগত মুসল্লীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট অস্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। এতে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে আরো ৪০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবা পরিচালিত হয়। ৬ টি এ্যাম্বুল্যান্স ও ১ টি স্পীড বোর্ড মাহফিল হাসপাতালে কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিল। মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীকে মাহফিল হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত ছিল বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। ছয়টি মাঠে মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী।

চরমোনাই মাহফিলে আগত মুসল্লীদের মধ্য হতে ১৭,৫৪২ জন মুসল্লী মাহফিলের অস্থায়ী হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন।

চরমোনাই মাহফিলে আসা মুসল্লীদের মধ্যে মোট ৮ জন বার্ধক্যজনিত কারণ ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বলে চরমোনাই মাহফিল হাসপাতাল (সিএমএইচ) কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। মৃতদের তালিকাসমূহ ০১। হারুনুর রশীদ (৫০), পিতা মোঃ আঃ রহমান, নওগাঁ সদর। ০২। মোঃ সাদেক মিয়া (৬০), পিতা লিয়াকত মণ্ডল, ফুলপুর, ময়মনসিংহ। ০৩। মোঃ রওশন শেখ (৬৫), পিতা- মৃত তোফাজ উদ্দীন শেখ, মোকসেদপুর, গোপালগঞ্জ। ০৪। মোঃ জামাল উদ্দিন(৭০), পিতা মৃত মাহামুদ মুন্সী, মাদারগঞ্জ, জামালপুর। ০৫। মোঃ বাদল মিয়া (৭৫), পিতা মৃত আবু মিয়া, লাখাই, হবিগঞ্জ। ০৬। মোঃ হেবজু মিয়া (৬০), পিতা মৃত মোঃ আহাম্মদ আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর। ০৭। মোঃ বাবুল চৌকিদার (৬০), পিতা মৃত বাশার চৌকিদার, কাজীরহাট, বরিশাল। ০৮। মোঃ লিয়াকত আলী (৬০), পিতা মৃত সুরুজ মিয়া, রায়পুরা, নরসিংদী।

তাদের নামাজে জানাজা শেষে মরদেহ স্বজনদের নিকট পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon