আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
ওলামারা একত্র হলে বাতিলরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না : চরমোনাই পীর

ওলামারা একত্র হলে বাতিলরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না : চরমোনাই পীর

ওলামারা একত্র হলে বাতিলরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না : চরমোনাই পীর

পল্লী জনপদ ডেস্ক॥

দেশে ওলামাদের বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শতকরা ৯২ জনের মতো মুসলিম বসবাস করে। এ দেশে বিগত দিনে ডাকাত পর্যন্ত ওলামাদের সম্মান করতেন। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এখন ওলামাদের জেলে ঢুকাতে, আক্রমণ করতে, কটূক্তি করতে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত দ্বিধা করে না। এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ’ আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওলামা মাশায়েখ আইম্মাদেরকে উদ্দেশ্য করে চরমোনাই পীর বলেন, আপনারা যখন অসংখ্য ওলামা আজ রাজধানীতে একত্র হয়েছেন, তখন বাতিলদের ভয়ে কলিজা থরথর করে কাঁপছে। ওলামারা একত্র হলে বাতিলরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। ওদের কলিজার ভেতরে ভয়ের আগুন ধরিয়ে দিতে হবে। বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করতে হবে।

যদি আমরা ওলামারা একত্র হতে পারি, তাহলে বাতিল যতই শক্তিশালী হোক, দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, তামাম দুনিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখবো, স্পেনে যেখানে সাড়ে ৭০০ বছর পর্যন্ত মুসলিমরা রাজত্ব করেছিল। সেখানে এখন মুসলিম তালাশ করে বের করাও কঠিন। আমরা দেখি জুমার দিন মসজিদে মুসল্লির অভাব নেই। কিন্তু ওরা গোপনে গাছের নিচে থেকে শেকড় কাটছে। এক পর্যায়ে যখন কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে, গাছটি আস্তে ফেলে দিবে। এজন্য হক্কানী ওলামাদের একত্র হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা ইসলামের পক্ষে, দেশের পক্ষে, মানবতার কল্যাণের জন্য পরামর্শভিত্তিক উদ্যোগ যদি গ্রহণ করতে পারি, তাহলে বিজয় আমরা অর্জন করতে পারবো।

ভয় নেই, চিন্তা নেই, যদি আমরা মোমিনের চরিত্র অর্জন করতে পারি। সম্মেলনে শায়খ জাকারিয়া (রহ:) ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, ওলামা মাশায়েখদের শক্তিশালী একটি সংগঠন থাকা দরকার। এই প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হলো জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ। সমাজ নষ্ট হলে নবীওয়ালা সমস্ত কাজ ওলামাদেরকে করতে হবে। পরিপূর্ণ দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে বাধা আসলে তার মোকাবিলায় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করার দায়িত্ব ওলামায়ে কেরামের। দেওনার পীর সাহেব অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। ভোট ও খাদ্যের সংকট নিয়ে সকলে চিন্তিত। সংকটের মূল কারণ কোরআন সুন্নাহ থেকে আমাদেরকে বের করে আনতে হবে। আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক দূরত্বের কারণে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। নায়িকা-গায়িকারা যদি আইন প্রণয়ন করে তাহলে রাষ্ট্রের কল্যাণ হবে না। ড. আ ফ ম খালেদ হোসেন বলেন, আমাদের রিজার্ভ সাড়ে চার মাস চলবে তার পরে কি বাংলাদেশ অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে? এই মুহূর্তে আমাদের চোখ কান খোলা রেখে চলতে হবে। সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে আমরা হাতপাখাকে নির্বাচিত করতে ঘাম ঝরাবো। আর যদি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের চক্রান্ত হয় তবে ময়দানে নেমে তাজা রক্ত দিয়ে শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। খ্যাতিমান আলেম মুফতি ইয়াহইয়া মাহমুদ বলেন, যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি পচা, দুর্নীতি ও আবর্জনা। এখন দেশের মানুষ যাবে কোথায়? সাধারণ মানুষকে আলেমদের সঙ্গে সংযুক্ত করছে চরমোনাই পীর সাহেবদ্বয়।

আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, জামিল মাদ্রাসা বগুড়ার মোহাদ্দিস মাওলানা আবদুল হক আজাদ, খুলনা দারুল উলূম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোশতাক আহমদ, বরিশাল মাহমুদিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা ফরিদ উদ্দীন আল মোবারক, মাওলানা ড. বেলাল নূর আজিজী, মুফতি আবদুর রাজ্জাক কাসেমী, বাহাদুরের সাহেবজাদা হাফেজ হানজালা, মুফতি হেমায়েতুল্লাহ কাসেমী, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফী। জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিসহ ১৫ দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ’র সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।

প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, ইসলাম বিজয়ের আন্দোলনে সকল আলেম-ওলামাকে একসাথে কাজ করতে হবে। দেশের প্রতিটি সেক্টরে আলেম প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে।

প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের অনিবার্য দাবি। ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলাম ধ্বংসে কাজ করছে, তখন অনেক আলেম ওয়াজের ময়দানে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এতে ইসলামেরই ক্ষতি হচ্ছে। বিবেদ সৃষ্টি করে আলেমদের ঐক্য আশা করা যায় না।
মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ দেশের যে কোন জাতীয় সঙ্কট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, হকপন্থি সকল ওলামা মাশায়েখের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করবে এ সংগঠন। একইসাথে রাসূল (সা.) এর মৌলিক ৫টি কাজ দাওয়াত, তালিম, তাযকিয়া, ইলম ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ করা। তিনি বলেন, দ্বীন বিজয়ের চেষ্টা করা ফরজ। সে হিসেবে যার যার অবস্থান থেকে দ্বীন বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করা প্রয়োজন।

প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান চৌধুরী পীর সাহেব দেওনা বলেন, মুসলিম মিল্লাত সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। এত কঠিন সময় অতীতে আর আসেনি। জাতীয় সঙ্কট মোকাবলোয় সকল মত ও পথের আলেম-ওলামাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে ৭ বার শিক্ষা কমিশন গঠন হয়েছে। কিন্তু একটি কমিশনেও আলেমদের সদস্য রাখা হয়নি। তিনি বলেন, কমিশনে যারা থাকেন এর প্রায় সকলেই ইসলামী শিক্ষা বিরোধী, ইহুদি-নাসারাদের আদর্শে লালিত। এদের কেউ ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখে না। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। বর্তমানে যে শিক্ষা সিলেবাস করা হয়েছে, তা ভারতের সিলেবাসের আদলে করা হয়েছে। এই সিলেবাস পড়ে কোন শিক্ষার্থী ঈমানদার হতে পারবে না।

এছাড়া সম্মেলনে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিসহ ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবি আদায়ে আগামী তিন মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ। এরমধ্যে ১লা অক্টোবর থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরে ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন ও সিরাতুন্নবী মাহফিল। ১লা নভেম্বর থেকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত থানা উপজেলায় ইমাম, মুয়াজ্জিন ও ওলামা সম্মেলন। ডিসেম্বরে মাসব্যাপী সারা দেশে তাফসীরুল কোরআন মাহফিল ও গণকোরআন শিক্ষা কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon