আজ বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০৪:০৬ অপরাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
জুলাই আন্দোলনে শহীদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে (১৭) লামিয়াকে তার বাবার কবরের পাশেই সমাহিত করা হয়েছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে সন্ধ্যায় পাংঙ্গাশিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ফাহিম, জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজেদুল ইসলাম, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীতে বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় সে। এ ঘটনায় নিজে বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপর থেকে মানসিক যন্ত্রণা ও সামাজিক লজ্জার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সে। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশ হয়ে অবশেষে আত্মহননের পথ বেছে নেয় বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
ধর্ষণ মামলার দুই আসামি বর্তমানে পটুয়াখালী জেলা কারাগারে আটক রয়েছে। ঘটনাটি সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, তার বাবাকে পটুয়াখালীতে দাফন করা হয়। বাবার কবর জিয়ারত করার পর নানা বাড়ি যাওয়ার সময় দুমকি থানা এলাকায় আসামিরা মেয়েটির পিছু নেয়। এক সময় হঠাৎ মুখ চেপে ধরে তাকে সড়কের পাশের একটি বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে। তারা ধর্ষণের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
পরে আলোচিত ওই ধর্ষণের ঘটনার বিচার দাবি করে সমাজের নানা জায়গা থেকে আন্দোলন-প্রতিবাদ হয়, কিন্তু তাতে মেয়েটির আত্মহত্যা ঠেকানো যায়নি।
কিশোরীটির চাচা বলেন, “সে অত্যন্ত সাহসী মেয়ে ছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সে বুক চিতিয়ে লড়েছিল। কিন্তু বিচারহীনতার ভয়, সমাজের অবজ্ঞা ও মানসিক চাপ তাকে ভেঙে দিল। আজ সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করি।”
দুমকি থানার ওসি মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ”মামলার আসামীদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা এখনই কিছু প্রকাশ করতে চাইনা। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করব।”
শনিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকার শেখেরটেকের ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দেয় লামিয়া। পরে তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হন লামিয়ার বাবা জসিম উদ্দিন। পরে ১ আগস্ট শহীদ হন।