আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বরিশাল-১ : বিএনপির কেন্দ্রীয় তিন নেতার নেতৃত্বে তৃনমূল ঐক্যবদ্ধ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বরিশাল-১ : বিএনপির কেন্দ্রীয় তিন নেতার নেতৃত্বে তৃনমূল ঐক্যবদ্ধ

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বরিশাল-১ : বিএনপির কেন্দ্রীয় তিন নেতার নেতৃত্বে তৃনমূল ঐক্যবদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া-১২১) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় চার নেতা ও তাদের অনুসারিদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লড়াই শুরু হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে লেখালেখি। সাবেক সংসদ সদস্য স্বপনের বিরদ্ধে বিএনপির কেন্দ্রীয় তিন নেতার নেতৃত্বে তৃনমূল ঐক্যবদ্ধ। বরিশাল-১ আসনটি দক্ষিনাঞ্চলের গরুত্বপূর্ন একটি আসন। এ আসনটিকে দক্ষিনাঞ্চলের রাজনৈতিক মেরুকরনের আসন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এ এলাকার ভোটাররা মনে করেন আগামি নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকের একক প্রার্থী হবেন বরিশাল জেলা আ’লীগের সভাপতি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।

বিএনপি মনোনয়ন লড়াইয়ে মাঠে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহীর উদ্দিন স্বপন, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, ২০০৮ সালের দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও কেন্দ্রীয় সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবি সমিতির সুপ্রীম কোর্ট শাথার সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল।

বরিশাল-১ আসনে স্বাধীনত্তোর সময়ে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আ.লীগ ছয় বার, জাতীয় পার্টি দুইবার এবং বিএনপি তিনবার জয়লাভ করেছে। ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনে এই আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামীলীগ। ১৯৭৯, ২০০১ ও ২০১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেছে বিএনপি। সর্বশেষ মেয়াদে এ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুর ভাগনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। তিনি বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাদের পুত্র।

বিএনপির দলীয় নেতাকর্মি সদস্যরা জানান, বরিশাল-১ বিএনপির ভোটাধিক্য থাকা সত্বেও দলীয় কোন্দলের কারণে ১৯৯১ সালে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী সুপ্রীম কোর্ট বারের সভাপতি ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আইনজীবি কাজী গোলাম মাহবুব আওয়ামীলীগ প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর কাছে ১ হাজার ৮ আটশত বিয়াল্লিশ ভোটে পরাজিত হন।

১৯৯৩ সালে বিএনপিতে যোগদান করেন জহির উদ্দিন স্বপন। দলে যোগদানের পর জহির উদ্দিন স্বপন দলের মধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরী করেন। ১৯৯৬ সালে এ আসনে মনোনয়ন পান কাজী গোলাম মাহবুব। এ সময় এম, জহির উদ্দিন স্বপন মনোনয়ন না পেয়ে তার সমর্থকদের নিয়ে কাজী গোলাম মাহবুবের বিরোধিতা করেন। ফলে কাজী গোলাম মাহবুব ২ হাজার ২শত তিরানব্বই ভোটে পরাজিত হন।

গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনোয়ার সাদাত তোতাসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মি অভিযোগ করে বলেন, ‘৯৬ সালে জহির উদ্দিন স্বপন দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে কাজী গোলাম মাহবুবকে পরাজিত করতে প্রতিপক্ষ আ.লীগের প্রার্থীর সঙ্গে গোপন আতাত করেন।

কাজী গোলাম মাহাবুবকে পরাজিত করতে জহির উদ্দিন স্বপন বিশ্বস্ত অনুসারি মিজানুর রহমান মুকুল, সৈয়দ সরোয়ার ও জহীর সাজ্জাত হান্নান শরীফসহ অন্যান্যদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিতে গোপনে নির্দেশ দেন। যে কারণে ১৯৯৬’র নির্বাচনে কাজী গোলাম মাহবুব আ.লীগ প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লার কাছে পরাজিত হন।

২০০১ সালে বিএনপির গণজোয়ারের বছর নির্বাচনে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জহির উদ্দিন স্বপন। ২০০৮ সালে এ আসনে মনোয়ন পান ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান। ওই নির্বাচনে নিজ অনুসারিদের নিয়ে সোবাহানের বিরোধিতা করেন জহির উদ্দিন স্বপন। এমনকি জহির উদ্দিন স্বপন তার একান্ত সচিব খোন্দকার কাওছার হোসেনকে দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানের মনোনয়ন বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে মামলা করেন এবং নিজে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানের বিরুদ্ধে হরিন মার্কায় নির্বাচন করেন।

১/১১র কুশীলব বিএনপির সাবেক নেতা জহির উদ্দিন স্বপন “জিয়া পরিবার এই পরিমান দূর্নীতি করেছে যে বিএনপির সাংসদ পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে” মিডিয়ার কাছে এমন মন্তব্য করে দলীয় নেতাকর্মির ক্ষোভের মুখে পরেন। সেই থেকে দলের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। ২০১৮ সালে ১/১১র রুপকারদের সহায়তায় বরিশাল-১ আসনে মনোনয়ন পান। মনোনয়ন পেয়ে ২০১৮ সালে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে আবার আঁতাত করে প্রার্থী হয়ে নিজ বাড়ি সরিকলে এসে উঠেন এবং নির্বাচনের পরে বাড়ি থেকে চলে যান। একদিনের জন্যও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনার জন্য মাঠে নামেননি। অভিযোগ রয়েছে, কোথায়ও একটা পোষ্টার লাগাননি। যে কারণে স্বপনের উপর ক্ষুব্দ হয়ে প্রায় ৪/৫ হাজার নেতাকর্মী আওয়ামীলীগে যোগদান করেন।

কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘৯৬ ও ২০০৮ সালের দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করতে কাজ করেছেন জহির উদ্দিন স্বপন। স্বপন ও তার অনুসারিদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করে ২০০৮ সালে আমাকে পরাজিত করেন। এমনকি ১/১১ সময়ে বিএনপির বিরুদ্ধে চক্রান্তে জড়িত জহির উদ্দিন স্বপন এখনো দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তবে বিএনপি এতটাই শক্তিশালী যে, আগামি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয়লাভে বিরোধ কোন বাধা হবে না।

আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার বিরোধী বিগত আন্দােলনে যারা ভূমিকা রাখছেন এমনি ত্যাগী, নির্যাতিত, যোগ্য ও কর্মিবান্ধব নেতাকে মনোনয়ন দিলে আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। দলীয় বিরোধ সম্পর্কে আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়া, জাতীয় নির্বাচন ও বিএনপিকে শক্তিশালী করার প্রশ্নে বিএনপিতে আভ্যন্তরীন কোন বিরোধ নেই, প্রতিযোগীতা আছে। তবে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় বিপদগামি কিছু নেতা আছেন। দলের মধ্যে তাদের অবস্থান পরিস্কার ও চিহ্নিত।

তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় তিন নেতা বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, ২০০৮ সালের দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও কেন্দ্রীয় সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবি সমিতির সুপ্রীম কোর্ট শাখার সাধারন সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল ঐক্যবদ্ধ হয়ে একই সূরে বলেন, বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে আমরা ১/১১র দালাল জহীর উদ্দিন স্বপনকে বর্জনের আহবান জানিয়েছি।

এছাড়া আমাদের নেতৃত্বে তৃনমূল নেতাকর্মীরা স্বপনকে ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে আছে। দলের সাথে বিশ্বাসঘাতক বা কোন গাদ্দারকে তৃনমূল নেতাকর্মীরা মেনে নিতে চায় না। ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান আরো বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে গত ১৪ বছর মার খেয়েছি, মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি, অর্থ ব্যয় করেছি। নির্যাতিতা নেতাকর্মিদের সাথে নিয়ে প্রতিকূল অবস্থায় দলকে টিকিয়ে রেখেছি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল যাকে মনোনয়ন দিবে তাকে প্রার্থী হিসেবে মেন নিবো। দল যদি কুদ্দুসুর রহমান, গাজী সজলকে মনোনয়ন দেন কোন সমস্যা নাই।

তৃনমূল নেতাকর্মীরা ১/১১র কোন দালালকে মেনে নিবো না। আকন কুদ্দুসুর রহমান আরো বলেন, ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, হামলা-মামলা-জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তারপরেও দলকে সু-সংগঠিত করেছি। তখন ১/১১র দালাল কথিত নেতা আমাকে হত্যার জন্য প্রশাসনের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে ক্রসফায়ার দেয়ার চেষ্টা করেছে।

বরিশাল উত্তর জেলা ও গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার আহবায়ক কমিটি বাতিলের বিষয় নিয়ে সম্প্রতি গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলার শীর্ষ স্থানীয় ও তৃনমূল নেতাকর্মীরা বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর গুলশানস্থ বাসভবনে সাক্ষাত করেন। এ সময় আব্দুল আউয়াল মিন্টু জহীর উদ্দিন স্বপনের বিরুদ্ধে করা তৃনমূল নেতাকর্মীর অভিযোগ শুনেন। সেখানে আকস্মিকভাবে জহীর উদ্দিন স্বপন উপস্থিত হন। স্বপনের সামনেই তাকে ১/১১র দালাল আখ্যা দিয়ে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী ও বিএনপির চেয়ার পারসনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও সুপ্রীম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট কাজী গোলাম মাহবুব ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানকে পরাজিত করতে জহীর উদ্দিন স্বপনের ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জহীর স্বপনের উপস্থিতিতে গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তৃনমূল নেতাকর্মীরা স্বপনকে বর্জনেরও ঘোষনা দেন।

বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও আকন কুদ্দুসুর রহমানের অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক সাংসদ ও সাবেক বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon