আজ শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক॥
এ ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী যেহেতু পরীক্ষাক্ষেত্র। তাই নানাভাবে মানুষের জীবনে বিভিন্নমুখী পরীক্ষা আসবে। নানারকম বিপদাপদ আসবে। তাকে এ পরীক্ষায় ও বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সেই কঠিন বিপদাপদে তাকে উত্তীর্ণ হতে হবে। তাই আল্লাহ-তায়ালা মানুষকে পবিত্র কুরআন মাজীদের নানা জায়গায় ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ-তাআলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সৃষ্টির লক্ষ্য তিনি কুরআন মাজীদে নানা শব্দ-বাক্যে ব্যক্ত করেছেন। কুরআন মাজীদের এক জায়গায় বিষয়টি এই শব্দ-বাক্যে ব্যক্ত করেন-
তিনিই সেই সত্তা, যিনি জীবন-মৃত্যুকে এ পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন যে, তোমাদের মধ্যে কে অধিক উত্তম আমল করে। আর তিনিই পরাক্রমশালী ও অধিক ক্ষমাশীল। -সূরা মুলক (৬৭) : ২
তিনি তাঁর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.)-কে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে বলেন : (সুতরাং হে রাসূল!) তুমি সবর অবলম্বন কর, যেমন সবর অবলম্বন করেছিল দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ এবং তুমি তাদের (অর্থাৎ কাফেরদের) বিষয়ে তাড়াহুড়া করো না। তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে, যেদিন তারা তা দেখবে, সেদিন (তাদের মনে হবে) তারা যেন (দুনিয়ায়) দিনের এক মুহূর্তের বেশি অবস্থান করেনি। এটাই সেই বার্তা, যা পৌঁছিয়ে দেয়া হলো। অতঃপর ধ্বংস তো হবে কেবল এমন সব লোক, যারা অবাধ্য। (সূরা আহকাফ : ৩৫)।
আল্লাহ-তাআলা মানুষের এ পরীক্ষা নেয়ার জন্য সৃষ্টি করেছেন পৃথিবী। মানুষ পৃথিবীতে এসে আল্লাহ-তাআলার পক্ষ থেকে নানা রকম পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে থাকে। মানুষের প্রবৃত্তি তার জন্য এক পরীক্ষার বস্তু। এই প্রবৃত্তি-পূজা থেকে বেরিয়ে নিজেকে সঠিক পথের দিশারী বানানো- আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশাল এক পরীক্ষা। অনুরূপ মানুষ ও জিনদের মধ্যে যারা সদা অন্যায়ের পথে ডাকছে- তারা সঠিক পথের অনুসন্ধিৎসুদের জন্য বড় পরীক্ষা। তাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দেওয়া- মুমিনের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা।
তিনি মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেন : হে মুমিনগণ! সবর অবলম্বন কর, মোকাবেলার সময় অবিচলতা প্রদর্শন কর এবং সীমান্ত রক্ষায় স্থিত থাক। আর আল্লাহকে ভয় করে চলো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আলে ইমরান : ২০০)। বিপদাপদে ধৈর্য ধারণকারীদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য করার ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ইরশাদ করেন : হে মুমিনগণ! সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন। (সূরা বাকারা : ১৫৩)।
যারা ধৈর্য ধারণ করে, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। জটিল থেকে জটিল অবস্থায় সহজ পথ দেখান। এবং জীবনের নানা ধাপে তাদেরকে সফলতা দান করেন। তিনি ইরশাদ করেন : যারা তাদের কোনো মুসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, আমরা সকলে আল্লাহরই জন্য এবং আমাদেরকে তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণা ও দয়া রয়েছে এবং এরাই আছে হেদায়েতের ওপর। (সূরা বাকারা : ১৫৬-১৫৭)।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে ধৈর্য ধারণকারীদেরকে বিভিন্ন প্রতিদানের কথা শুনিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন : তোমাদের কাছে যা কিছু আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা স্থায়ী। যারা সবর করে আমি তাদের উৎকৃষ্ট কাজ অনুযায়ী অবশ্যই তাদেরকে প্রতিদান দেব। (সূরা নাহল : ৯৬)।
আরো ইরশাদ হয়েছে : এরূপ ব্যক্তিদেরকে তাদের প্রতিদান দেয়া হবে দ্বিগুণ। কেননা তারা সবর অবলম্বন করেছে, তারা মন্দকে প্রতিহত করে ভালোর দ্বারা এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। (সূরা কাসাস : ৫৪)। তিনি আরো বলেন : আর আমি তাদের মধ্যে কিছু লোককেÑ যখন তারা সবর অবলম্বন করলÑ এমন নেতা বানিয়ে দিলাম, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করত এবং তারা আমার আয়াতসমূহে গভীর বিশ্বাস রাখত। -সূরা সাজদা (৩২) : ২৪
উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইসলামে সবর ও ধৈর্যের বিষয়টি কতো তাৎপর্যপূর্ণ ও কতো অর্থবহ। ইহকালের শান্তি ও রহমত থেকে শুরু করে পরকালের শান্তি ও সুখের নিশ্চয়তা দান করে এই সবর ও ধৈর্য। তাই তো রাসূলে কারীম (স.) সবর বা ধৈর্যকে আলো সাব্যস্ত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : সবর ও ধৈর্য হলো আলো। (মুসনাদে আহমাদ : ২২৯০২)।
অর্থাৎ সবর ও ধৈর্য জীবনকে আলোকিত করে। জীবনের সকল অঙ্গনকে করে দেয় দ্যূতিময়। তাই জীবনকে রাঙ্গাতে, জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে আলোর ছোঁয়া পেতে আমাদেরকে অবশ্যই সবর অবলম্বন করতে হবে।
অর্থাৎ সবর ও ধৈর্য জীবনকে আলোকিত করে। জীবনের সকল অঙ্গনকে করে দেয় দ্যূতিময়। তাই জীবনকে রাঙাতে, জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে আলোর ছোঁয়া পেতে আমাদেরকে অবশ্যই সবর অবলম্বন করতে হবে।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদেরকে যাবতীয় অর্থেই সবরকারী ও ধৈর্যশীল হওয়ার তাওফীক দান করুন। -ছুম্মা আমিন