আজ বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ অপরাহ্ন
বাউফল রণক্ষেত্র, জনমনে আতঙ্ক, থমথমে অবস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক॥
পটুয়াখালীর বাউফলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আনন্দ র্যালীতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। এ সময় তাকে (মোতালেব) বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তার অনুসারি আরো কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে।
জানাগেছে, শুক্রবার (১৭ মার্চ) বাউফল হাই স্কুল মাঠ থেকে স্থানীয় আওয়ামীলীগ কার্যালয় (জনতা ভবন) এর উদ্দেশ্যে আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের নেতৃত্বে একটি আনন্দ র্যালী শুরু হয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে পৌছলে পুলিশ দলীয় কার্যালয় যেতে বাঁধা দেয়।
জানা গেছে, বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষ একই সময় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ডাক দেয়। এর মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুটি পক্ষের কর্মসূচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে (জনতা ভবন) এবং আরেকটি মেয়র পক্ষের কর্মসূচি বাউফল প্রেসক্লাব সড়কের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগ আরেকাংশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। শুক্রবার সকাল থেকে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষের একই দিনে একই সময়ে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল নয়টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে দেখা যায়। বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হক ওরফে জুয়েলের পক্ষের নেতা-কর্মীরা বাউফল সরকারি মাঠে, সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের পক্ষের নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) সামনে জড়ো হয় ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারের পক্ষের নেতা-কর্মীরা বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হয়।
আবদুল মোতালেবের নেতৃত্বে সকাল ১১ টার দিকে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে আনন্দ র্যালিটি বের হয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) দিকে যাচ্ছিলেন। সোয়া ১১ টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষ এড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এতে বাধা দেন। তখন পুলিশ ও আবদুল মোতালেব হাওলাদারের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। আর অপর পাশেই লাঠিসোটা ও বগিদা নিয়ে অবস্থান করছিলেন আ স ম ফিরোজের কর্মী-সমর্থকেরা। আ স ম ফিরোজ একটি গাড়ির মধ্যে ছিলেন।
দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশের সঙ্গে আবদুল মোতালেবের কথা-কাটাকাটি হয় এবং তখন স্লোগান দিতে থাকে তাঁর নেতা-কর্মীরা। উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেবকে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায় তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তখনও দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকেরাই দলীয় ও নিজ নিজ নেতার নামে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশের বাধা উপপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কয়েক রাউণ্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। ওই সময় আবদুল মোতালেবের ওপর হামলা চালায় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ক্যাডার বাহিনী।
তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত আহত করা হয়।
এ সময় তাকে (মোতালেব)কে বাঁচাতে গেলে বগা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ নিজাম হাওলাদার (৪০), ইমরান (৩০), পলাশ দাস (৩৭), গৌতম চন্দ্র (৩৫), জাহিদ গাজী (৩০), রাজিব (২৮), পলাশ (৩৬), হাসান (২৭), বেল্লাল (২২)সহ প্রায় ২৫ জন নেতা কর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়।
আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি থানার মূল ফটকও আটকে দেওয়া হয়। আহত আবদুল মোতালেবকে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর নেতাকর্মীরা চলে যায়। তখনও সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের পূর্ব পাশে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁরা র্যালি নিয়ে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে তাঁদেরকেও বাধা দেয় পুলিশ।
পরে বেলা ১২ টার দিকে মেয়র জিয়াউলের নেতৃত্বে মিছিল সহকারে একটি বিশাল র্যালি নিয়ে উপজেলা চত্বরে ঢোকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে ফের মিছিল সহকারে চলে যান জিয়াউল ও তাঁর নেতা-কর্মীরা। এরপরে সোয়া ১২ টার দিকে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে র্যালিটি বাউফল শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ করে।
এ ঘটনায় বাউফল উপজেলা সদরে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এএসএম সায়েম বলেন, চেয়ারম্যান স্যার (আবদুল মোতালেব) ডান হাতের তৃতীয় আঙুলের (রিং ফিঙার) গোড়ালি কেটে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে আছে। তাঁর বুকের ডান পাশে ও ডান হাতের কনুইয়ের ওপরের অংশে কোপ রয়েছে। এছাড়াও পা ও মাথায় আঘাত রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আল মামুন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে লাঠি চার্জ করা হয়। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এতে তিনি (ওসি)সহ পুলিশের আরও ৬ জন সদস্য আহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।