আজ শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০২ পূর্বাহ্ন
বান্দরবানে পাহাড়ি দুই গ্রুপে গোলাগুলি, নিহত ৮
পল্লী জনপদ ডেস্ক॥
বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাংপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে আটজন নিহত হয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান।
শুক্রবার (০৭ এপ্রিল) দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে রোয়াংছড়ি থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। ওসি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম রয়েছে। তবে এখনো তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম বলছেন, বান্দরবানের রোয়াংছড়ির উপজেলার খামতাংপাড়ায় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এবং ইউপিডিএফ এর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন আটজন। প্রাথমিকভাবে শুনেছি সাতজন কেএনএফের এবং আরেকজন ইউপিডিএফ’র। আমাদের তথ্য মতে ঘটনাটি ঘটে শুধু ইউপিডিএফের সাথে।
তিনি জানান, আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে চলে আসা ২০০ জন এলাকাবাসী রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আর বাকি ৭০ জন আশ্রয় নিয়েছে রুমা উপজেলার রুমা বম কমিউনিটি সেন্টারে। ঘটনার পর সেখানে লাশ উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ পাঠানো হয়।
এদিকে, বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম জানান, রোয়াংছড়ি থানাধীন খামতাংপাড়ায় কিছু মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর শুনি। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে আটটি লাশ উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় ।
তিনি আরো বলেন, নিহতদের নাম, পরিচয় বা ঠিকানা এখনো জানা যায়নি। তবে জানা গেছে দু’টি সশস্ত্র দলের মধ্যে এ ঘটানাটি ঘটেছে। দু’টি দলের কারা এর সাথে জড়িত এবং কেন ঘটনাটি ঘটল সে বিষয়টি অনুসন্ধান করছি।
রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়াদের খাবার বিতরণ করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এসময় উপস্থিত থাকা রোয়াংছড়ি জোনের আর্মি ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন ফাহিম মাহমুদ বলেন, খামতাংপাড়া এবং তার পাশর্^বর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়ে চলেছে। কেএনএফের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে চলার কারণে আজকে খামতাং পাড়ার স্থানীয় লোকজন তাদের উৎপাত এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে থাকতে না পেরে ওই পাড়া থেকে রোয়াংছড়ি ক্যাম্পে চলে এসেছে। আমরা তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছি, আশ্রয় দিয়েছি এবং খাবারের ব্যবস্থা করেছি। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের সাথে তাদের রাখব। ওই এলাকায় নিরাপত্তা সংগঠিত হওয়ার পর আমরা তাদের হস্তান্তর করব।
রোয়াংছড়ি উপজেলায় খামতাংপাড়া থেকে আসা অলিপার খিয়াং জানান, গতকাল আর ভোররাতে গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। কারা ওদের মেরে ফেলেছে সেটি জানি না। ভয়ে আমরা রোয়াংছড়ি সদরে এসেছি।
একই এলাকার বাসিন্দা শৈহ্লাপ্রু খিয়াং জানান, গতকাল রাতে গোলাগুলি হয়েছে। ভয়ে থাকতে পারি নাই। এখানে চলে এসেছি। এখন কোথায় থাকব, কি করব কিছুই জানি না।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা খামতাংপাড়া। গতকাল সন্ধ্যার দিকে সেখাানে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর পাড়ার বেশির ভাগ বাসিন্দা রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় এসে আশ্রয় নেন।
এদিকে প্রশাসন নিহতের সংখ্যা আটজন দাবি করলেও শুক্রবার দুপুরে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ভান্তে কুকি নামে একটি ফেসবুক পেজে তাদের নিহত সাত সদস্যর নাম পরিচয় প্রকাশ করেন। সংস্কার পন্থী গ্রুপ এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা দাবি করেন। ঘটনায় নিহতরা হলেন, ভান দু বম, সাং খুম , সান ফির থাং বম, বয় রেম বম, জাহিম বম, লাল লিয়ান ঙাক বম, লাল ঠা জার বম। নিহতদের ছয়জন উপজেলার জুরভারাং পাড়া এবং একজন পানখিয়াং পাড়ার বাসিন্দা।