আজ শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০২ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
অবশেষে ইরানের রাজধানীতে হামলা চালালো ইসরায়েল। তেহরানের চারপাশে বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে শনিবার (২৬ অক্টোবর) ভোররাত থেকে ওই হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা ও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যেই ইরানে হামলা করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের হামলার জবাব দেওয়া সম্পন্ন করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
তবে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, রাজধানী তেহরান, খুজিস্তান ও ইলাম প্রদেশের বিভিন্ন স্থাপনায় ইসরাইল যে হামলা চালিয়েছে তা ব্যর্থ হয়েছে। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলা ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তারপরও কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
হ্যাগারির এ ঘোষণার আগে ইসরায়েলি হামলা প্রতিহত করার কথা জানায় ইরান। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েলি ড্রোনগুলো আকাশেই ধ্বংস করার দাবি করে। এ–সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ অনলাইনে দেখা গেছে।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ জানিয়েছে যে তারা ইরানের ‘সামরিক স্থাপনায় সুনির্দিষ্ট হামলা’ চালিয়েছে। ‘কয়েক মাস ধরে ইরানের ধারাবাহিক হামলার’ জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। অন্যদিকে হোয়াইট হাউজ বলছে ‘আত্মরক্ষার’ অংশ হিসেবে ইরানে এই হামলা করেছে ইসরায়েল।
ইরানের এয়ার ডিফেন্স ফোর্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তেহরান, খুজেস্তান ও ইলাম প্রদেশে কয়েকটি ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে।
তারা বলেছে এসব হামলাকে সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করা হয়েছে। তবে কিছু জায়গায় ‘সীমিত ক্ষতি’ হয়েছে।
অন্যদিকে আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে ইসরায়েলে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত স্থাপনায় তারা হামলা করেছে।
দেশটি বলেছে হামলা শেষে তাদের বিমানগুলো নিরাপদে দেশে ফিরেছে।
এছাড়া ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রক্রিয়াসহ ইরানের আকাশ সক্ষমতাকে টার্গেট করে হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলেছে তেহরানের দুই বিমানবন্দরের কার্যক্রম ‘স্বাভাবিক’ ভাবেই চলছে। যদিও ইরানের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন।
তবে তারা বলেছেন এই শব্দ ‘ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম কার্যকর’ করার কারণে হতে পারে।
ইরানের রিভল্যুশনারি গার্ডের ঘনিষ্ঠ একটি বার্তা সংস্থা বলছে তেহরানের পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে কিছু সামরিক ঘাঁটিকে টার্গেট করা হয়েছে।
অন্যদিকে সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বলছে দেশটির মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে কিছু সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে।
তবে ইরানের বাইরে অন্য কোথাও হামলার বিষয়ে এখনো কোন মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে ইসরায়েলের হামলার মধ্যে নিজের আকাশসীমা বন্ধ করেছে ইরান।
দেশটির সিভিল এভিয়েশনের মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে ইরনা জানিয়েছে পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে ২০২৩ সালের সাতই অক্টোবরের পর ইরান এবং ওই অঞ্চল জুড়ে তাদের ছায়া সহযোগী বিরামহীন হামলার জবাব দেয়ার অধিকার বিশ্বের অন্য সব সার্বভৌম দেশের মতো ইসরায়েল রাষ্ট্রেরও আছে।
“ইসরায়েল রাষ্ট্র ও জনগণের সুরক্ষার জন্য যা করা দরকার আমরা তাই করবো,” সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
হোয়াইট হাউজ বলছে আত্মরক্ষার চর্চার অংশ হিসেবে ইসরায়েল ইরানে এই হামলা চালিয়েছে বলে তারা মনে করে।
“আমরা বুঝতে পারছি যে ইসরায়েল ইরানের সামরিক স্থাপনায় অভিযান চালাচ্ছে। পহেলা অক্টোবর ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা ও আত্মরক্ষার চর্চা থেকেই তারা এটা করেছে,” ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র সিবিএসকে একথা বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পুরো পরিস্থিতি ‘অবহিত করা হয়েছে এবং তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন’ বলে সিবিএস জানিয়েছে। তবে শনিবারের এই হামলার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে পেন্টাগন জানিয়েছে।
ইরান মাসখানেক আগেই ইসরায়েলে প্রায় দুশো ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছিল। এরপর থেকেই মূলত ইরানে ইসরায়েল হামলা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিলো।
নিন্দা :
তবে ইরানে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া।
সৌদি আরব জানিয়েছে, এটি একটি দেশের সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক আইন ও রীতির লঙ্ঘন।
সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এই অঞ্চলে ধারাবাহিক উত্তেজনার বিরোধীতা করে সৌদি আরব। তাছাড়া এই অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে এমন সংঘাতও চায় না সৌদি আরব।
একই সঙ্গে সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম ও উত্তেজনা কমানোরও আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
এদিকে ইরানে ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে মালয়েশিয়াও। এই হামলাকে সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেছে দেশটি।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পাশাপাশি ধারাবাহিক সংঘাতের ইতি টানার কথা বলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার কারণে অঞ্চলটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে বলেও জানানো হয়েছে।