আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৩:০১ অপরাহ্ন
আজ পবিত্র শবে মেরাজ
বিশেষ প্রতিবেদক ॥
আজ শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে। শবে মেরাজ মুসলমানদের কাছে বিশেষ মর্যাদার রাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে এ মূল্যবান রাত কাটান। এই দিন অনেকে নফল রোজাও রাখেন।
ইসলাম ধর্মে শবে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এ রাতেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) পবিত্র নগরী মক্কা থেকে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে সপ্তম আসমান পেরিয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাক্ষাৎ লাভ করে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসেন।
তাঁর এ সফরেই উম্মতে মোহাম্মদির জন্য প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়। এ রাত সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র।
মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, মহানবী (স.) এ রাতে প্রথমে কাবা শরিফ থেকে বোরাক নামের বাহনে করে পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে যান। সেখানে অন্যান্য নবী-রাসুলের সঙ্গে দুই রাকাত নফল নামাজে ইমামতি করেন। এরপর ঊর্ধ্বলোকে সফর শুরু করেন। এ সময় তিনি নভোমণ্ডল, বেহেশত-দোজখ ও সৃষ্টির বিভিন্ন রহস্য প্রত্যক্ষ করেন এবং পূর্ববর্তী নবীদের সাক্ষাৎ লাভ করেন। সপ্তম আসমান পেরিয়ে মহানবী (স.) মহান আল্লাহর দিদার লাভ করেন।
উল্লেখ্য, দুনিয়ার সফরের পালা শেষে শুরু হয় ঊর্ধ্বজগতের সফর। নবী কারীম (স.) বুরাকের উপরই ছিলেন। একে একে প্রতি আকাশের দ্বার তাঁর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো। প্রথমে দুনিয়ার দৃশ্যমান আসমানে এসে জিবরীল (আ.) দ্বার উন্মুক্ত করতে অনুরোধ করেন। অপর প্রান্ত হতে প্রশ্ন হয়, কে আপনি? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। প্রশ্ন করা হয়, কে আছেন আপনার সাথে? বললেন, মুহাম্মাদ। প্রশ্ন হয়, আপনি কি তাঁর কাছে প্রেরিত হয়েছেন? বললেন, হ্যাঁ
অতঃপর প্রথম আসমানের দ্বার খুলে দেওয়া হয়। তাঁরা এর উপরে উঠে আসেন। নবীজি বলেন, ওখানে এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, যার ডানদিকে রূহের একটি ঝাঁক দেখা গেল, বামদিকেও তেমনি একটি ঝাঁক।
ওই ব্যক্তি ডানদিকে তাকালে হাসেন আর বামদিকে তাকালে ক্রন্দন করেন। তিনি আমাকে দেখে অভ্যর্থনা জানালেন এবং বললেন, মারহাবা হে মহান পুত্র! মারহাবা হে মহান নবী! নবীজি জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে? তিনি বললেন, তিনি আদম (আ.)। তাঁর ডান ও বামদিকে যাদের দেখলেন তারা তাঁর আওলাদ। ডানদিকে যারা তারা জান্নাতী; আর বামদিকে যারা, তারা দোজখি। আর তাই তিনি ডানদিকে তাকিয়ে হাসেন এবং বামদিকে তাকিয়ে কাঁদেন। (বুখারী : ৩৪৯)।
এরপর জিবরীল (আ.) নবীজিকে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশের পানে ছুটলেন। সেখানেও দ্বার উন্মুক্ত করতে বলা হলে জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? তিনি জবাব দিলেন, জিবরীল। প্রশ্ন করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দিলেন, মুহাম্মাদ। আবার প্রশ্ন হলো, তিনি কি আহূত হয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে আনার জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি। দ্বার উন্মুক্ত করা হলে সেখানে দু’খালাত ভাই অর্থাৎ হযরত ঈসা (আ.) ও ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো। তাঁরা উভয়ই নবীজিকে মারহাবা বলে দয়া করলেন।
এরপর জিবরীল তাঁকে তৃতীয় আকাশে নিয়ে গিয়ে পূর্বের মতো প্রশ্নোত্তর পর্বের পর দ্বার উন্মুক্ত হলে, সেখানে হযরত ইউসুফ (আ.)-এর সাথে মুলাকাত হলো। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে গোটা রূপ-সৌন্দর্যের অর্ধেকটাই দান করেছিলেন। তিনিও নবীজিকে মারহাবা বলে উষ্ণ অভিবাদন জ্ঞাপন করলেন।
একই পদ্ধতিতে চতুর্থ আকাশে পৌঁছালে, সেখানে হযরত ইদরিস (আ.)-এর সাথেও শুভেচ্ছা বিনিময় হলো। নবীজি বলেন, আমরা যখন সেখান থেকে সন্মুখে অগ্রসর হচ্ছিলাম, তখন হযরত মূসা (আ.) ক্রন্দন করতে লাগলেন। কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এই যুবক আমার পরে প্রেরিত হয়েছে। তদুপরি তাঁর উম্মত আমার উম্মতের চেয়েও অনেক বেশি জান্নাতে যাবে। একথা ভেবেই আমি কাঁদছি। সেখান থেকে নবীজিকে সপ্তম আকাশে নিয়ে যাওয়া হলে, সেখানে তিনি হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে দেখলেন, তিনি বায়তুল মামুরে ঠেস দিয়ে উপবিষ্ট। বায়তুল মামুর সেই স্থান, যেখানে প্রত্যহ এমন সত্তর হাজার ফেরেশতা ইবাদত করার জন্য প্রবেশ করে, যাদের পালা এরপর আর কখনও আসে না।
হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও নবীজিকে দেখে অভ্যর্থনা জানালেন। অতঃপর তিনি নবীজিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, মুহাম্মাদ! আপনার উম্মতকে আমার সালাম বলুন এবং তাদেরকে অবগত করুন যে, জান্নাতের মাটি পবিত্র, এর পানি সুমিষ্ট। জান্নাত হচ্ছে খুব পরিচ্ছন্ন ও সমতল।
অতঃপর নবী কারীম (স.) কে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলো। পৃথিবী থেকে যেসকল বস্তু অথবা রূহ উপরে আরোহণ করে, সেগুলো এখানে পৌঁছে থেমে যায়। তদ্রুপ ঊর্ধ্বজগৎ থেকে নিম্নে আগমনকারী সব কিছু এখানে এসে থেমে যায়। নবীজি বলেন, সিদরাতুল মুনতাহার পাতা ছিল হাতির কানের মতো, আর ফল ছিল বড় মটকার মতো। আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ যখন বৃক্ষটিকে ঘিরে নিল, তখন সে এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হলো। কোনো মানুষের সাধ্য নেই সে সৌন্দর্য বর্ণনা করার। নবীজি বলেন, সিদরাতুল মুনতাহা পেরিয়ে এত ঊর্ধ্বে পৌঁছে যাই, যেখান থেকে আমি আল্লাহর হুকুম-আহকাম লিপিবদ্ধ করার কাজে ব্যস্ত ফেরেশতাদের ‘কলমের’ আওয়াজ শুনতে পেলাম।
আজ দিবাগত রাতে মহান রাব্বুল আলামিনের রহমত কামনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদে-মসজিদে, নিজগৃহে ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোরআনখানি, জিকির-আজগার এবং ইবাদত-বন্দেগীর মধ্যদিয়ে পবিত্র শবে মেরাজ উদযাপন করবেন।