আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
ইসরায়েলের হুংকার, হামাসের অনড় অবস্থান : রক্তাক্ত ফিলিস্তিনি জনপদ

ইসরায়েলের হুংকার, হামাসের অনড় অবস্থান : রক্তাক্ত ফিলিস্তিনি জনপদ

ইসরায়েলের হুংকার, হামাসের অনড় অবস্থান : রক্তাক্ত ফিলিস্তিনি জনপদ

পল্লী জনপদ ডেস্ক॥

ইসরায়েলের পদাতিক বাহিনী ট্যাংকের ছত্রছায়ায় গাজা ভূখণ্ডের ভেতরে অভিযান শুরু করেছে, যার লক্ষ্য হল অধিকৃত ওই ভূখণ্ড থেকে হামাস যোদ্ধাদের ‘নির্মূল’ করা। হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাংশে নজিরবিহীন হামলা চালানোর এক সপ্তাহের মাথায় এই স্থল অভিযান শুরু হল। রয়টার্স লিখেছে, গত শনিবারের ওই হামলার পর ইসরায়েলি বাহিনী কেবল আকাশপথেই গাজায় আক্রমণ চালিয়ে আসছিল। এবার তা স্থল যুদ্ধের রূপ নিল।

ইসরাইল প্রতিশোধ হিসেবে বিমান হামলা শুরু করার পর থেকে গাজায় এ পর্যন্ত ১৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে। আরো তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শনিবার ইসরাইলে হামাসের আক্রমণের পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আরো ১৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইসরাইলের তথ্যমন্ত্রী গালিত ডিস্টেল আটবারিয়ান পদত্যাগ করে বলেছেন, তার মন্ত্রণালয়ের অর্থ অন্য কোন খাতে যাতে ব্যবহার করা হয়। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন গতকাল ইসরাইল সফর করেন। এসময় তিনি হামাসের হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনও গতকাল ইসরাইল সফরে যান। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ইসরাইল সফরের পরের দিনই তারা দেশটি সফর করছেন।

নেটো জোট হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়ে একে ‘অযৌক্তিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। একই সাথে ইসরাইলের প্রতি তারা ‘সমানুপাতিক’ হারে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সহায়তার প্রশ্নে নেটো জোট ভুক্ত দেশগুলো জানায়, তারা ইসরাইলকে বাস্তবিক সহায়তা দিচ্ছে। একটি গ্রিক যুদ্ধ জাহাজ পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করার খবর পাওয়া গেছে। যুদ্ধ জাহাজটি ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত অবস্থান নেয়ার কথা রয়েছে। জার্মানি বলেছে, তাদের দুটি সশস্ত্র যুদ্ধ ড্রোন ইসরাইলি বাহিনী এরইমধ্যে ব্যবহার করেছে।

ইসরাইলের একজন নেতৃস্থানীয় ফিলিস্তিনি মানবাধিকার আইনজীবী পশ্চিমা নেতাদের সতর্ক করে বলেছেন যে, তারা ইসরাইলি নেতাদের দ্বারা গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে উপেক্ষা করে একটি নতুন নাকবাকে সক্ষম করছে। মিডল ইস্ট আই-এর সাথে কথা বলার সময়, আইনজীবী ডায়ানা বাট্টু বলেছিলেন যে, ফিলিস্তিনিরা ১৯৪৮ সালের মতোই ঘটনার ইসরাইলের সহিংসতার হুমকির মুখোমুখি। তিনি বলেছিলেন যে, তার বাবার পরিবার কয়েক হাজার লোকের মধ্যে ছিল যারা সে সময় তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। এবং এখন তিনি ভয় পাচ্ছেন যে তার নিজের পরিবারও একই পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে।

‘আমার প্রয়াত বাবা নাকবা প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং বেঁচে গিয়েছিলেন যখন তাকে আল-মাজদালে (বর্তমান আশকেলন} তার বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল এবং তিনি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন,’ বাট্টু বলেছিলেন, ‘তার বয়স ছিল নয়, আজ আমার ছেলের সমান। আমার মনের মধ্য দিয়ে যা যায় সম্ভবত সেই একই জিনিস যা আমার দাদি নিশ্চয়ই ৭৫ বছর আগে ভাবছিলেন।’ বাট্টু প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এর একজন আইনী উপদেষ্টা এবং মুখপাত্র ছিলেন যিনি ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় জড়িত ছিলেন। তিনি কানাডার নাগরিকত্বও ধারণ করেছেন কিন্তু গত দুই দশক ধরে ইসরাইলে বসবাস করছেন। তিনি হামাস যোদ্ধাদের দ্বারা শনিবারের মারাত্মক হামলার পর থেকে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের যুদ্ধের মিডিয়া রিপোর্টিংয়ের সমালোচনা করেছিলেন, যেখানে ইসরাইলি নেতারা ফিলিস্তিনিদের ‘মানব পশু’ ও ‘জন্তু’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং তাদের ‘ধ্বংস’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গাজায় সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহার করছে ইসরাইল : মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজা ও লেবাননে বিতর্কিত সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে। অতি দাহ্য এই রাসায়নিক অনেক সময় সামরিক বাহিনী তাদের সীমান্ত নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করে। কিন্তু এটা মানুষকে মারাত্মকভাবে পুড়িয়ে দিতে পারে। আর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হলে বিশেষ করে গাজার মতো এতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যবহার করা হলে এটি প্রচ- মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, ‘বর্তমানে গাজায় সাদা ফসফরাসযুক্ত অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে তারা সচেতন নন।’ তবে লেবাননের বিষয়ে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এইচআরডাব্লিউ বলছে, তারা গাজা এবং লেবাননে ধারণকৃত ভিডিও দেখে তা বিশ্লেষণ করে সাদা ফসফরাসযুক্ত আর্টিলারি শেল বিস্ফোরিত হতে দেখেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি এর তোলা ছবিতেও এর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ছবিতে উঠে এসেছে, গাজায় বিস্ফোরিত হওয়ার সময় সাদা রেখা তৈরি হয়েছে। সাদা ফসফরাস বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসলে তা ঘন সাদা ধোঁয়া তৈরি করে। এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্থাটি বলে, ‘গাজায় অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সাদা ফসফরাসের ব্যবহার বেসামরিক নাগরিকদের ঝুঁকি অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয় এবং তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন যেখানে বেসমারিক নাগরিকদের বিনা কারণে ঝুঁকি বাড়ানোর বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে।’

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, সাদা ফসফরাসের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় হয়নি কারণ এর বৈধ ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু মানুষের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে এর ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ২০০৮-০৯ সালে গাজায় সহিংসতার সময় ধোঁয়ার স্ক্রিন হিসেবে সাদা ফসফরাস ব্যবহার করেছিল। সেসময় অনেক মানবাধিকার সংস্থা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছিল। সামরিক বাহিনী ২০১৩ সালে বলেছিলে, ছদ্মবেশের জন্য এই রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ করে দেবে তারা।

মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে : ইসরাইল-ফিলিস্তিনি উত্তেজনা বৃদ্ধির সর্বশেষ দফার পরিপ্রেক্ষিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ইতিমধ্যেই তাদের যা কিছু করা সম্ভব করেছে’ এবং বাকি বিশ্বকে তাদের সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার বোঝা বহন করতে হবে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরকারি মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে অংশ নেয়ার জন্য ইসরাইলে তার বাহিনী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে না, হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের এ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রুশ কূটনীতিক বলেন, ‘আমি বলব, তারা ইতিমধ্যে যা যা করতে পারে তার সবই করেছে। সর্বদা, অন্যদের তাদের বিশৃঙ্খলার বোঝা বহন করতে হবে।’

ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ঐক্যের ডাক ইরান-সিরিয়ার : ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে অবস্থান নেয়ার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছাতে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা নুরনিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনে শান্তির একমাত্র উপায় দখলদারিত্বের অবসান : ইরাকের শীর্ষ শিয়া ধর্মগুরু আয়াতুল্লাহ আলী আল-সিস্তানি, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের চলমান নৃশংসতার আলোকে বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি জারি করেছেন। সেখানে তিনি বিশ্বকে জেগে উঠতে এবং ইহুদিবাদী ‘ভয়ানক বর্বরতা’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরাইল গাজায় হামলা চালাচ্ছে যাতে মোট প্রায় ৬ হাজার মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। সিস্তানি বলেছিলেন যে, ‘দখলকারী সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবরোধ আরোপ করছে, যার মধ্যে সম্প্রতি পানি, খাদ্য, ওষুধ এবং জীবনের অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে নিরুপায় ও অসহায় লোকেরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’

‘সাত দশক ধরে চলমান ফিলিস্তিনি জনগণের ট্র্যাজেডির অবসান ঘটানো, তাদের ন্যায্য অধিকার অর্জনের মাধ্যমে এবং তাদের দখলকৃত ভূমি থেকে দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোই এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জনের একমাত্র উপায়,’ সিস্তানি আরও বলেন। ‘এটি ছাড়া, আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে এবং সহিংসতার চক্র আরও নিরপরাধ জীবন দাবি করতে থাকবে,’ বিবৃতির উপসংহারে বলা হয়েছে। নাজাফ-ভিত্তিক শিয়া ধর্মগুরু আয়াতুল্লাহ আলী আল-সিস্তানি শিয়া সমাজে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিমের তালিকায় প্রথম দিকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

গাজায় খাদ্য সাহায্য বন্ধের ব্যাপারে ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি মিসরের : গাজায় খাদ্য সাহায্য বন্ধের ব্যাপারে ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি দিলেন মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ সুখরি। কায়রোতে জাতিসংঘের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে তিনি খাদ্যসহ অন্যান্য মানবিক সাহায্য বন্ধের প্রতিবাদ করেন। এসব সাহায্য বন্ধ করে সামগ্রিক জনগণকে শাস্তি দেয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জাতিসংঘের মিডল ইস্ট পিস প্রসেসের সমন্বয়কারী টর উয়েনেসল্যান্ড এবং ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজির কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজারিনির সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব বলেন। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনে জাতিসংঘকে মানবাধিকারসংক্রান্ত যে কোনো কার্যক্রমে সহোযোগিতা করবে বলে জানায়। এসময় তিনি গাজা উপত্যকায় ইউএনআরডব্লিউএ স্কুলে হামলার নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেন। এর আগে ফিলিস্তিনে মিসরের সাহায্যকারী যানবাহনে হামলার হুমকি দিলেও হামাসের সঙ্গে সমঝোতার জন্য মিসরের শরণাপন্ন হয় ইসরাইল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্টে বলা হয়, ইসরাইল মিসর সরকারকে হামাসের কাছে বন্দি ইসরাইলিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আলোচনায় সাহায্য করতে কায়রোকে অনুরোধ জানিয়েছে।

ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে হিজবুল্লাহ : লেবাননের হিজবুল্লাহ বলেছে যে, মার্কিন প্রশাসনের গৃহীত অবস্থান, পদক্ষেপ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ইসরাইলি আগ্রাসনের জন্য তাদের প্রকাশ্য সমর্থনে তারা মোটেও অবাক হয়নি। বুধবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, হিজবুল্লাহ বিবেচনা করে যে মার্কিন নীতি এই ইসরাইল-দখলকারী সত্তা প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আগ্রাসন ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করেছে।

গোষ্ঠীটি গাজায় শিশু, নারী ও বয়স্কদের সহ অরক্ষিত বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, অপরাধ, অবরোধ, বাড়িঘর ধ্বংস এবং ভয়ঙ্কর গণহত্যার জন্য সম্পূর্ণরূপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে। তারা আরব ও ইসলামিক দেশগুলির জনসাধারণকে, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কুৎসিত সত্য এবং ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে তাদের আগ্রাসন সম্পর্কে সচেতন, তাদের মার্কিন হস্তক্ষেপ এবং তার আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের নিন্দা করার আহ্বান জানিয়েছে।

মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান আল-আজহারের : মিশরের বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, দখলদার রাষ্ট্র ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের সমস্ত অধিকার লঙ্ঘন এবং তাতে পশ্চিমা সমর্থনের বিরুদ্ধে আরব ও মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে আল-আজহার বলেছে যে, অবরুদ্ধ ও বিচ্ছিন্ন গাজা উপত্যকায় শিশু, মহিলা এবং বৃদ্ধদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া উচিত।

সর্বোচ্চ ত্যাগ ও সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিকে জায়নবাদের থাবা থেকে মুক্ত করতে যারা সশস্ত্র লড়াই ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, আল আজহার তাদের প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানায়। মুক্তি সংগ্রামে নিয়োজিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি আল আজহার জানাচ্ছে, যেকোনো মূল্যে নিজেদের আপন ভূমিতে টিকে থাকতে হবে। এই ভূমি একবার হাতছাড়া হয়ে গেলে আর কোনোদিন ফিরে পাওয়া যাবে না এবং ফিলিস্তিন ইস্যুরও চিরতরে অবসান ঘটবে।

আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আল আজহার খোলা আহ্বান জানাচ্ছে যে, ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ভূমিকার দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সজাগ থাকা এবং অতিদ্রুত মানবিক সহায়তা প্রেরণ করা উচিত। আল আজহার সুস্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করছে যে, মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকে সরকারিভাবে নিপীড়িত ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি সমর্থন জানানো ও সাহায্য করা আবশ্যকীয় ধর্মীয় দায়িত্ব এবং মানবতার প্রতি সহমর্মিতার বহিঃপ্রকাশ। আজ যারা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াবে না, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে ভারত :

ভারত ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌম, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে। ইসরাইল-ফিলিস্তিনের যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই ফিলিস্তিন নিয়ে প্রথমবার মুখ খুলল নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘আমাদের নীতি দীর্ঘস্থায়ী এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ। ভারত সর্বদা ফিলিস্তিনের একটি সার্বভৌম, স্বাধীন এবং কার্যকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সরাসরি আলোচনা শুরু করার পক্ষে। তারা যাতে নিরাপদ এবং স্বীকৃত সীমান্তের মধ্যে বসবাস করে, ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিতে পাশাপাশি থাকে। ভারতের এই অবস্থান একই রয়েছে।’

গত ৭ অক্টোবর প্যালেস্তাইনের হামাস গোষ্ঠী ইসরাইলে রকেট হামলা চালানোর পর এই ইস্যুতে ভারতের পক্ষ থেকে এটাই প্রথম বিবৃতি, যা কূটনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুবার ইসরাইল-হামাস সংঘাত নিয়ে মুখ খুলেছেন। দুবারই তিনি ইসরাইলে হামাসের হামলার নিন্দা করেছেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করে তিনি এই কঠিন সময়ে ইসরাইলের প্রতি সমর্থনের বার্তাও দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই ফিলিস্তিন নিয়ে মোদি সরকারের অবস্থান ঠিক কী, তা নিয়ে রাজনৈতিকমহলের পাশাপাশি কূটনৈতিকমহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তাতেই শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিবৃতি দিল বলেই মনে করছে কূটনৈতিকমহলের একাংশ।

ইসরাইলি শহর, সামরিক ঘাঁটির বিস্তারিত মানচিত্র ছিল হামাসের কাছে : হামাসের হঠাৎ হামলায় কিছুটা হকচকিয়েই গিয়েছিল ইসরাইল। হামাস যে এতটা সামরিক পরিকল্পনা করে এগিয়েছিল, তা আন্দাজও করতে পারেনি তারা। সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদ। হামাস কিন্তু কাঁচা কাজ করে না, যাবতীয় পরিকল্পনা করেই যুদ্ধের ময়দানে নেমেছে তারা। সূত্রের খবর, হামাস বাহিনী ইসরাইলের বিস্তারিত মানচিত্র নিয়েই হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কোথায় মিলিটারি বেস রয়েছে, কোনদিকের সীমান্ত টপকানো সহজ, তা ম্যাপ দেখেই চিহ্নিত করেছিল হামাস। সেই অনুযায়ীই হামলা চালায় তারা।

ইসরাইল বলেছে, গত ছয় দিনে গাজায় হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে চার হাজার টন ওজনের প্রায় ছয় হাজার বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। দেশটির বিমানবাহিনী বলেছে, বিমান হামলায় মোট ৩৬ হাজারের বেশি স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় ‘শোচনীয়’ অবস্থা চলছে কারণ খাবার এবং পানি দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রায় ৫০ হাজার গর্ভবতী নারী প্রয়োজনীয় কোন সেবা গ্রহণ করতে পারছে না। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, গত শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ১১ জন স্বাস্থ্যকর্মী গাজায় নিহত হয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাদ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যাবতীয় পরিকল্পনা করেই ইসরাইলে অনুপ্রবেশ করে হামাস। ম্যাপে ইসরাইলের শহর ও মিলিটারি বেসগুলিকে আগে থেকেই চিহ্নিত করে রেখেছিল হামাস তারা। কোথা থেকে অনুপ্রবেশ করতে সুবিধা বেশি, কোথায় নিরাপত্তায় খামতি রয়েছে, তা চিহ্নিত করে রেখেছিল হামাস। ওই ম্যাপগুলি দেখেই আন্দাজ করা যাচ্ছে যে শুধুমাত্র হামলা বা অনুপ্রবেশ নয়, শহরের প্রাণকেন্দ্রে হামলা এবং নাগরিকদের বন্দি বানানোর পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনাও করে রেখেছিল হামাস। হামাসের কাছ থেকে ১৪ পাতার একটি নথিও উদ্ধার করা হয়েছে। আরবিক ভাষায় ‘টপ সিক্রেট’ লেখা ওই নথিতে কীভাবে কিবিবুটজে অনুপ্রবেশ করা হবে, নাগরিকদের কীভাবে বন্দি বানানো হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা লেখা ছিল। হামাস কীভাবে ইসরাইলে হামলা চালাবে, তার বিস্তারিত পরিকল্পনাও লেখা ছিল ওখানে। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর, তাস, মিডল ইস্ট আই।

এদিকে, ইসরায়েল ওই হুমকি দেওয়ার পর হামাস গাজার বাসিন্দাদের যার যার বাড়িতে থাকার আহ্বান জানায়। ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথাও তারা বলে। মসজিদের মাইক থেকেও স্থানীয়দের যার যার বাড়িতে অবস্থান করার আহ্বান জানানো হয়।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের ওই নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। না হলে ভয়ঙ্কর মানবিক সঙ্কট তৈরি হবে বলেও সতর্ক করা হয়।

কিন্তু ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়াল অ্যাডমিরাল দানিয়েল হাগারি পরে বলেন, তাদের পদাতিক বাহিনী ট্যাংকের সহায়তা নিয়ে গাজার ভেতরে অভিযান চালিয়েছে। ফিলিস্তিনি রকেট হামলাকারীদের ‘নির্মূল’ করার পাশাপাশি হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে তারা।

হামাস যোদ্ধারা গত শনিবার সীমান্ত পেরিয়ে তিন দিক থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণ অংশে ঢুকে পড়ে। তাদের হামলায় অন্তত ১৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়, হামাস যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করেছে আরও দেড়শ জনকে।

পাল্টা জবাবে ইসরায়েল গাজায় হামাসের সামরিক শাখা এবং অবকাঠামোতে জোর বিমান হামলা শুরু করে। গত ছয়দিনে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী গাজায় ৬ হাজারের বেশি বোমা ফেলে, তাতে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এর সাবেক কমান্ডার ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইয়াকভ আমিড্রোর স্বীকার করেছেন যে, হামাসের সঙ্গে লড়াই করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, হামাস যোদ্ধারা প্রবেশপথগুলোতে এবং রাস্তার অলি-গলিতে ফাঁদ কিংবা বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখবে।

ইসরায়েলের ধারণা, হামাসের প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা আছে। তাদের অস্ত্রের মধ্যে আছে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, রকেট চালিত গ্রেনেড, ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।

হামাসের আরও আছে রকেটের এক বিশাল ভান্ডার। যেগুলো তারা ইসরায়েলে নিক্ষেপ করে আসছে। লেখক ইয়াকভ কাটজ বলেন, হামাস নিজস্বভাবে আত্মঘাতী ড্রোনসহ ছোট ছোট ড্রোনও তৈরি করছে।

তাছাড়া হামাস গাজার বিভিন্ন অংশে হাজারো সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক তৈরি করে রেখেছে ইসরায়েলের সঙ্গে লড়ার জন্য, সেজন্যও ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

হামাসের যা নেই তা হচ্ছে, সাঁজোয়া যান, ট্যাংক এবং গোলাবারুদ- যেগুলো ইসরায়েলের আছে। কিন্তু স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের বড় চ্যালেঞ্জ হল ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে এলাকার ঘিঞ্জি পরিবেশে লড়াই করা।

কাটজ বলেন, ইসরায়েলি সেনারা দরকার না পড়লে সুড়ঙ্গে ঢুকে লড়াই করতে যাবে না। কারণ, সুড়ঙ্গের আদ্যপান্ত হামাসেরই ভাল জানা থাকবে। তাই ইসরায়েলি সেনারা সুড়ঙ্গে না ঢুকে বরং বিস্ফোরক দিয়ে সেগুলো ধ্বংস করবে।

হামাস যে ইসরায়েলিদের ধরে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করেছে, তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এই জিম্মিদের কারণে গাজায় স্থল আক্রমণ শানাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ইসরায়েলকে।

মেজর জেনারেল আমিড্রোর অবশ্য বলেছেন, জিম্মিরা কোনো কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। “আমরা শেষ পর্যন্ত হামাসের সঙ্গে লড়ে যাব এবং অভিযান চলাকালেই আমাদেরকে ওইসব জিম্মিকে খুঁজে বের করতে হবে।”

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon