আজ শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজারে ট্রলারে গলিত ১০ লাশ নিয়ে ত্রিমুখী বক্তব্য, ছয়টি হস্তান্তর
পল্লী জনপদ ডেস্ক॥
কক্সবাজারের নাজিরারটেক সমুদ্র উপকুলে ভাসমান ট্রলার থেকে ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ছয়জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় পরিবার প্রতি ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয় জেলা প্রশাসন।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে ছয়জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরিচয় শনাক্ত হওয়া ছয়জনের মধ্যে রয়েছেন- মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার বাসিন্দা সামশুল আলম প্রকাশ। তার মরদেহ গ্রহণ করেন স্ত্রী রোকেয়া বেগম। চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের জঙ্গলকাটা এলাকার বাসিন্দা তারেক জিয়ার মরদেহ গ্রহণ করেন তার বাবা, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা শওকত উল্লাহর মরদেহ গ্রহণ করেন তার ভাই আয়াত উল্লাহ, চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের বটতলী এলাকার মোহাম্মদ শাহজাহানের মরদেহ গ্রহণ করেন তার স্ত্রী হাফিজা বেগম, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের গণি ওসমানের মরদেহ গ্রহণ করেন তার মা জহুরা বেগম, একই ইউনিয়নের মোহাম্মদ হোসনের ছেলে নুরুল কবিরের মরদেহ গ্রহণ করেন তার বাবা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান ও পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলামের উপস্থিতিতে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাফন-কাফনের জন্য নিহতদের পরিবার প্রতি নগদ ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়।
এ সময় জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, “দাফনসহ অন্যান্য কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে এ অনুদান দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, “উদ্ধার ১০ জেলের মধ্যে ছয়জনের মরদেহ স্বজনরা শনাক্ত করার পর, যাচাই-বাছাই শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। অপর চারজনের লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নমুনা পরীক্ষা করার পর পরিচয় আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
পুলিশ সুপার বলেন, “শনাক্ত হওয়া যে ছয়জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে, তাদের থানায় এজাহার জমা দিতে বলা হয়েছে। এজাহার পাওয়ার পর মামলা নথিভুক্ত হবে।”
এর আগে রবিবার সকালে সাগরে ভাসমান অবস্থায় ট্রলারটি দেখে রশি দিয়ে টেনে মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেলে নিয়ে আসেন স্থানীয় জেলেরা। খবর পেয়ে দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
যে চারজনের মরদেহ এখনও হস্তান্তর করা হয়নি তারা হচ্ছেন- মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), শাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪) বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় হস্তান্তর করেননি পুলিশ।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাগর থেকে ফেরা ছয়জন এবং মাতারবাড়ী এলাকার বাইট্টা কামাল ও নুর হোসাইনকে আটক করা হয়েছে বলে তাদের স্বজনরা দাবি করেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সংস্থা বিষয়টি স্বীকার করেনি।
এদিকে, ঘটনা ঘিরে তিন ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পূর্বশত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। আবার অনেকেই বলছেন, গভীর সাগরে ১০ জেলেকে হত্যা করে ট্রলারটি ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে জলদস্যুরা। আবার নিহতদের সবাই জলদস্যু বলে ধারণা স্থানীয়দের।
নিহত ওসমানের বাবা মুসা আলী বলেন, শামলাপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮) আমার ছেলেসহ প্রায় পাঁচ যুবককে ট্রলারে মাছ ধরার কথা বলে সাগরে নিয়ে যায়। যা আমরা জানতাম না। নুরুল কবির একজন চিহ্নিত জলদস্যু।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের দেওয়া তথ্য মতে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাগরে ডাকাতির খবর শুনে ডাকাত দলকে ধাওয়া করতে যায় মাতারবাড়ীর বাইট্টা কামাল, নুর হোসাইন বহদ্দার, আবছার মাঝি ও বাবুল মাঝির মালিকানাধীন ট্রলার।
এ চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও সিআইডি।