আজ বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
কোতয়ালী মডেল থানার এসআই রিয়াজের বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ বাদীর
স্টাফ রিপোর্টার ॥
তদন্তের নামে আসামীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এবং বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত হয়ে ফাইনাল রিপোর্ট উদ্দেশ্য মূলক মিথ্যা প্রতিবেদন আদালতে দেয়ায় কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (বিপিনং-৮২০২০৮৩৭৫৯) বিরুদ্ধে হুমকি ও দুর্নীতির বিচার চেয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী শেখ নজরুল ইসলামের স্ত্রী মুকুল বেগম। গতকাল বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিন) এর কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। এ ছাড়া অনিুলিপি প্রদান করা হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাস্ট্র মন্ত্রী, স্বরাস্ট্র সচিব ও আইজিপিসহ ১৫ জনকে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাদী মুকুল বেগম কোতয়ালী থানাধীন দক্ষিণ আলেকান্দা সাকিনের ১১নং ওয়ার্ডস্থ চাদমারী মাদ্রাসা সড়কের রেকর্ডীয় সম্পত্তিতে টিনসেড বিল্ডিং তৈরি করিয়া বসবাস করেন। এছাড়াও তার ১০নং ওয়ার্ডস্থ কেডিসি এলাকায় আরেকটি বাসা রয়েছে। আসামীরা বাদীর বাড়ীর মধ্যে জমি পাইবে দাবী করে বাদীকে সুষ্ঠু ভোগ দখলে নানা প্রকার বাধা বিঘœ সৃষ্টি করিতেছে। এমনকি তারা বাদীর তৈরিকৃত বাড়ী দখল করে নেওয়ার চেস্টায় লিপ্ত রয়েছে। ফলে বাদী প্রায়ই ১০নং ওয়ার্ডস্থ কেডিসি এলাকায় না থেকে চাদঁমারী মাদ্রাসা সড়কে তৈরিকৃত টিনসেড বিল্ডিংএ গিয়ে বাদী ও তার পরিবারের অপরাপর সদস্যরা রাত্রি যাপন করেন। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাত্র আনুমানিক ১০ টায় বাদী ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করাকালীন সময় বসত ঘরের সামনের দরজা খোলা অবস্থায় থাকার সুযোগে উক্ত আসামীগণ একে অপরের সহয়তায় বে-আইনি জনতাবদ্ধে দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাদী মুকুল বেগমের বসত গৃহে অনধিকার প্রবেশ করে বাদীকে বিল্ডিং ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে বলে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তখন বাদী আসামীগণকে বলেন তোমরা বিজ্ঞ আদালতে ৩টি মামলা করেছ। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত হতে সকল মামলার রায় আমার পক্ষেই হয়েছে। তোমাদের যদি সঠিক কোন কাগজপত্র থাকত তাহলে বিজ্ঞ আদালতই আমাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করার আদেশ দিত। এ সময় ১নং সৈয়দ মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী (৫০) ও ২নং মোসাঃ মরিয়ম বেগম (৪০) আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা বাদীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীর পরিধেয় বস্ত্রাদি ধরে টানা হেচড়া করে শ্লীলতাহানী ঘটায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারী কিল ঘুষি মেরে নীলা ফুলা বেদনাদায়ক জখম করে। মারধরের একপর্যায়ে বাদীর গলায় থাকা ১ ভরি ওজনের ১টি স্বর্ণের চেইন খুলিয়া ২নং আসামী নিয়ে যায় যার মূল্য অনুমান ৭০,০০০/- (সত্তর হাজার) টাকা। এই সময় বাদীর স্বামী ও ছেলে-মেয়ে আসামীগণের উক্ত কাজে বাধা প্রদান করলে ১নং আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের হাতে থাকা লাঠি নিয়ে এলোপাথারী পিটিয়ে ও কিল ঘুষি মেরে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা ফুলা বেদনাদায়ক জখম করে এবং তার বসত ঘরে থাকা আসবাবপত্র ভাংচুর করিয়া ক্ষতি সাধন করতে থাকে। এ সময় ৫ হাজার টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়। উক্ত আসামীগণ তার বসত গৃহে থাকা মালামাল ছড়াইয়া ছিটাইয়া ফেলে দেয় ও বসতগৃহের সামনের রুমের বিছানার নিচে রাখা নগদ ৭,৫০০/- (সাত হাজার পাঁচশত) টাকা ১নং আসামী নিয়ে যায়। এই সময় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা ডাক-চিৎকার করলে ডাক-চিৎকার শুনে কতিপয় সাক্ষী ও আশপাশ এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইলে উক্ত আসামীরা দ্রুত বাদীকে ভবিষ্যতে খুন জখম করিবে মর্মে হুমকি প্রদান করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। উক্ত ঘটনার বিষয়ে বহু সাক্ষ্য প্রমাণ আছে যাহা তদন্তকালে উপস্থাপন করবেন বলে জানান বাদী। এ ঘটনা বাদী মুকুল বেগম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: সাইফুল ইসলামকে ওই রাতে অবহিত করলে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং জি আর ৮৪৭/২০২২। মামলায় আসামী করা হয় বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানাধীন ১৪ নং ওয়ার্ডের মীরা বাড়ী হযরত কালু শাহ সড়কের মৃত সৈয়দ আব্দুল বারীর ছেলে সৈয়দ মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী (৫০) ও তার স্ত্রী মোসাঃ মরিয়ম বেগম (৪০)সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (বিপি নং-৮২০২০৮৩৭৫৯)। কিন্তু মামলা দায়ের করার পরপরই ১ নং আসামী সৈয়দ মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী আদালত থেকে জামিন নিয়ে মালয়শিয়া পালিয়ে যায়।
পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগে বাদী মুকুল বেগম আরও উল্লেখ করেন, ওই রাতে ঘটনার সময় এলাকার প্রায় ৩ থেকে ৪’শত লোক ঘটনাস্থলে জড় হয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: সাইফুল ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো: আলী আশরাফ ভূইয়া সহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। যাহার মামলা নং- ৮৪৭/২০২২। কিন্তু মামলা দায়েরের পর আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং আমাকে হুমকি প্রদান করতে থাকে। হুমকি দিয়ে বলে, যত টাকা লাগে তোকে প্রশাসন দিয়ে সাইজ করবো। মামলার পর এসআই রিয়াজুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ওই রাতে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন তদন্ত কর্মকর্তার সামনে বর্ননা করেন এবং ঘটনার সত্যতা তুলে ধরেন। এমনকি ওই বাসায় থাকা আমার আত্মীয়-স্বজনরাসহ এলাকার লোকজন ওই রাতের ঘটনা সত্য বলে তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান। কিন্তু এরপর তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের সাথে কোন রকম যোগাযোগ না করে মামলার ১নং আসামী সৈয়দ মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকিকে পালাতে সাহায্য করেন। তিনি মামলার পর পরই মালয়শিয়া চলে যান। তদন্ত কর্মকর্তা কোনরকম আইনগত ব্যবস্থা নেন নি। তাতে প্রমান হয় যে আসামীদের কাছ থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে আসামীদের পালাতে এবং এই মামলার তদন্ত না করেই নিজের মনগড়া ভাবে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী ফাইনাল রিপোর্ট উদ্দেশ্য মূলক মিথ্যা প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। যার নং ১৫/২০২৩। ধারা ১৪৩,৩২৩,৩৫৪,৪২৭,৪৪৮,৩৮০ও ৫০৬ পেনাল কোড ১৮৬০।