আজ শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক॥
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তারা গাজায় স্থল, বিমান ও নৌ হামলার পরিকল্পনা করছে। তবে কখন এই হামলা শুরু করবে সে সম্পর্কে তারা কোন সুনির্দিষ্ট সময়সীমা জানায়নি। গাজায় দেশটির সামরিক বাহিনীর বড় ধরনের স্থল অভিযানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে আগেই এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “পরবর্তী ধাপ আসছে”।
শুধু শনিবারেই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছে তিনশ মানুষ। সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছে আরও অন্তত আটশ মানুষ।
গাজার উত্তরাঞ্চলে বসবাসকারী এগার লাখ মানুষকে ওই এলাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে যেতে বলেছে ইসরায়েল। এরপর অসংখ্য মানুষকে গাড়ীতে বা পায়ে হেঁটে ওই এলাকা থেকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। এমনকি গাজায় এমন একটি বেসামরিক গাড়ীতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নারী ও শিশু নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় এবং এতে প্রায় ১৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। জিম্মি করা হয়েছে আরও অন্তত দেড়শ জনকে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইসরায়েল ব্যাপক বোমা বর্ষণ করায় গাজায় নিহত হয়েছে ২২০০ ফিলিস্তিনি।
গাজা ছেড়ে পালাতে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের একটি কনভয়ে প্রাণঘাতী হামলার ফুটেজ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি। ঘটনার খুব কাছে থেকেই ওই হামলার ভিডিও করা হয়েছে, যেখানে শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকরা মারা গেছে বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থলে অনেকগুলো যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হতে ও আগুনে জ্বলতে দেখা গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজার শহরতলী থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এ ঘটনা ঘটেছে।
মূলত ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ীর কনভয় লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়েছিলো। এ ঘটনায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। শিশুদের বয়স দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। অন্য একটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে হামলার শিকার ব্যক্তিদের দেহ রাস্তায় পড়ে আছে। আর আগুনে জ্বলছে যানবাহনগুলো।
হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানের সাথে সাক্ষাত করেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমির আব্দোল্লাহিয়ানের হামাসের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবেন বলে সম্মত হয়েছেন বলে হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। কাতারের রাজধানী দোহায় তাদের মধ্যকার সভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েলে হামলার জন্য হামাসের প্রশংসা করেছেন। তিনি এটিকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে বিপুল সংখ্যক ইহুদি ও মুসলিম বাস করে। বিবিসি নিউজের আলিম মকবুল জানিয়েছেন এসব মানুষ নিজ নিজ সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ইহুদিদের অনেকের স্বজন কিংবা পরিচিত আছেন ইসরায়েলে।
শুক্রবার লেবাননে নিহত হওয়া রয়টার্স সাংবাদিক ইসাম আব্দাল্লাহর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তাদের দাবি ওই সাংবাদিকদের মৃত্যুর সময় ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ হামলা চালাচ্ছিলো এবং তাদের ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের সীমান্ত বেষ্টনীতে আঘাত করেছে। এরপর ইসরায়েলি সেনারা তাদের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় ট্যাংক ও আর্টিলারি ব্যবহার করে পাল্টা জবাব দেয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর ওই সাংবাদিকের আহত হওয়া ও পরে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় বলে তারা দাবি করেছে এবং জানিয়েছে যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্বের বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোটের আয়োজন করার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আহবান জানিয়েছে রাশিয়া। ওই প্রস্তাবে মানবিক সহায়তার জন্য যুদ্ধবিরতিও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সহিংসতার নিন্দা করা হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। জাতিসংঘে রাশিয়ার ডেপুটি রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলছেন শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যকে প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে এবং তিনি আশা করছেন সোমবার নাগাদ ভোটের আয়োজন করা হবে।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতময় অঞ্চলে দ্বিতীয় বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শত্রুতাপূর্ণ কার্যক্রম’ মোকাবেলার জন্য। পেন্টাগন এক বিবৃতিতে এটি নিশ্চিত করেছে। এতে জানানো হয় যে আইজেনহাওয়ার রণতরী পূর্ব ভূমধ্যসাগরে পাঠানো হচ্ছে রণতরী জেরাল্ড আর ফোর্ডসহ সেখানে থাকা আরও যুদ্ধজাহাজকে সহায়তার জন্য।
গাজার হাসপাতালগুলোর মর্গে আর জায়গা নেই, তাই ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের লাশগুলো আইসক্রিম ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, গাজা শহর থেকে পালিয়ে আসা কনভয়গুলিতে ইসরাইলি বিমান হামলায় মহিলা ও শিশু সহ গত ২৪ ঘন্টায় ৩২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গাজায় ইসরাইলের নিরবিচ্ছিন্ন বোমা বর্ষণের ফলে চলমান রক্তপাত বন্ধে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরান। ‘খুব দেরি’ হওয়ার আগেই ইসরাইলকে যুদ্ধ থামাতে বলেছে দেশটি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান লেবাননে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসরাইলকে এ সতর্ক করেন। তিনি বলেন, ইসরাইলি বর্ণবাদের যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি ঘটতে পারে, যার দায় জাতিসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং কাউন্সিলকে মৃত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া রাষ্ট্রগুলোর।
হামাস-ইসরায়েল সংঘাত অষ্টম দিনে পদার্পণ করলো। উত্তর গাজার হাসপাতালগুলোকেও খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে জোর করে রোগীদের সরিয়ে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের সমান। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের নেতা মাহমুদ আব্বাসের সাথে কথা বলেছেন।