আজ শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥
হাসপাতালের কর্মচারী, পথ্য সরবরাহকারীর কাছে পার্সেন্টিজ দাবী ও টিকিট বিক্রির অতিরিক্ত টাকা আত্মসাৎসহ নানান অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এঘটনায় হাসপাতালের কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, কর্মচারীদের বিভিন্ন বিলে পূর্বের কর্মকর্তাদের কোন পার্সেন্টিজ দেওয়া না লাগলেও ডাঃ মনিরুজ্জামান হাসপাতালে যোগদান করার পর থেকেই ৩০ থেকে ৪০ পার্সেন্ট পর্যন্ত দাবী করে আসছেন। বিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক কর্মচারী তার (মনিরুজ্জামান) বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেননা। হাসপাতালের এক স্বাস্থ্য সহকারী অভিযোগ করে বলেন, ডাঃ মনিরুজ্জামান তাদের কাছ থেকে বিলের ২০% আদায় করে নিচ্ছেন। হাসপাতালের প্রধান সহকারী রিয়াজুল ইসলামের যোগসাজসে পার্সেন্টিজ আদায় করা হয় বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন কর্মচারী। তারা অভিযোগ করে বলেন, আমরা চাকুরী করে সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করলেও হাসপাতালের প্রধান সহকারী রিয়াজুল ইসলাম আশোকাঠী এলাকায় জমি ক্রয়ে করে বিলাশবহুল ভবন নির্মান করে বসবাস করে আসছেন। যা চাকুরীর বেতনের টাকা দিয়ে কোনভাবেই সম্ভব না। তবে যোগসাজসে পার্সেন্টিজ আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে হাসপাতালের প্রধান সহকারী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এ অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। তিনি আরও বলেন, প্রায় ২০ বছর পূর্বে জমির দাম যখন কম ছিলো তখন আমি জমি ক্রয় করেছি এবং লোন নিয়ে ভবন নির্মান করেছি।
ঠিকাদারের কাছে পার্সেন্টিজ দাবী ॥ হাসপাতালের পথ্য সরবরাহকারী আহাদ মিয়া রাসেল অভিযোগ করে বলেন, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য ১২৫ টাকার বিপরীতে ৫০ টাকা বৃদ্ধি করে রোগি প্রতি ১৭৫ ধার্য করে ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সরকারি সেই প্রজ্ঞাপনকে অগ্রাহ্য করে আটমাস পর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন মাসে সরকারি প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন করে ডাঃ মনিরুজ্জামান। এতে রোগীরা যেমন সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তেমনি তিনিও (ঠিকাদার) আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, পূর্বে কোন কর্মকর্তাকে কাজের বিনিমিয়ে পার্সেন্টিজ দেওয়া না লাগলেও বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুজ্জামান তার (রাসেল) কাছে বিলের ১০% দাবী করেছিলেন। আসছেন। তিনি কোন পার্সেন্টিজ দিবেনা বলে জানিয়ে দিলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছে মনিরুজ্জামান।
জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে দিতে হয় টাকা ॥ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছ থেকেও অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, হাত ও পায়ে জখম নিয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে গেলে রোগী প্রতি চিকিৎসা সহকারীদের টাকা দিতে হয়। অন্যথায় চিকিৎসা না দিয়ে উন্নত চিকিৎসার অযুহাত দেখিয়ে বরিশালে প্রেরণ করা হয়। এসব বিষয়ে হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুজ্জামানকে অবহিত করা হলেও রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।
তিন টাকার টিকিট পাঁচ টাকায় বিক্রি ॥ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগে দীর্ঘদিন থেকে টিকিট বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী বর্হিবিভাগে ডাক্তার দেখাতে রোগীপ্রতি টিকিটের মূল্য তিন টাকা নির্ধারিত হলেও এ হাসপাতালে আদায় করা হচ্ছে পাঁচ টাকা করে। হাসপাতালের একটি সূত্রের দাবী, সরকারী খাতে রোগীপ্রতি তিন টাকা করে জমা দেওয়া হলেও রোগীপ্রতি অতিরিক্ত নেওয়া দুই টাকা ডাঃ মনিরুজ্জামানের পকেটে ঢুকছে। তবে টিকিট ক্লার্ক জাবেদ হোসেন জানিয়েছেন, তিন টাকা করেই রোগীদের কাছ থেকে টিকিটের মূল্যে নেয়া হয়। অনেক সময় ক্যাশে কিংবা রোগীদের কাছে খুচরা টাকা না থাকায় রোগীরা পাঁচ টাকা দিয়ে যায়। এক্ষেত্রে কারো কাছ থেকে জোর করে আদায় করা হচ্ছেনা।
মেহেন্দীগঞ্জেও ছিলো দূর্নীতির বিস্তর অভিযোগ ॥ দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জ হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থাকাকালীণ ডাঃ মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগে বরিশালের সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন ভুক্তভোগীরা।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুজ্জামান তার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি মহল আমার কাছ থেকে অনৈতক সুবিধা নিতে না পেরে মিথ্যে অপপ্রচার করছে। মেহেন্দীগঞ্জেও থাকাকালীণ সময়ে আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অভিযোগ তুলেছিলো। যা পরবর্তীতে মিথ্যে প্রমানিত হয়েছে। এব্যাপারে বরিশালের সিভিল সার্জন ডাঃ মারিয়া হাসান বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেহেন্দীগঞ্জে থাকাকালীণ সময়ে ডাঃ মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় তার (মনিরুজ্জামান) বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয়নি।