আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০১:১৯ অপরাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
গৌরনদী উপজেলা হাসপাতাল দালালের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ রোগীরা

গৌরনদী উপজেলা হাসপাতাল দালালের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ রোগীরা

গৌরনদী উপজেলা হাসপাতাল দালালের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

প্রতিনিয়ত সরকারি হাসপাতালে আগত রোগীর চেয়ে নামসর্বস্ত্র বিভিন্ন প্যাথলজির দালালের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের উৎপাতে চিকিৎসক থেকে শুরু করে সাধারণ রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। পাশাপাশি রোগীদের জন্য চিকিৎসকের লিখে দেওয়া ব্যবস্থাপত্র বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা টেনে নিয়ে মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলার ঘটনা প্রকাশ্যে হলেও বিষয়গুলো দেখার যেন কেউ নেই। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের।

হাসপাতালের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা নামসর্বস্ত্র অসংখ্য প্যাথলজিতে বর্তমানে ১৫ জন নারী ও প্রায় অর্ধশতাধিক পুরুষ দালাল কাজ করছে। তারা হাসপাতালের মধ্যকার চিকিৎসকদের রুমের মধ্যে সর্বদা ঘুর ঘুর করতে থাকেন। রোগী এসে তাদের সমস্যার কথা বলতে না বলতেই ওইসব দালালরা উল্টো চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিভিন্ন চেস্ট করানোর জন্য। সূত্রে আরও জানা গেছে, ওইসব দালালরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়া চিকিৎসকরা নাজেহাল হওয়ার ভয়ে তাদের (দালাল) কথা অনুযায়ী রোগীদের টেস্ট করতে বলেন। ফলে শুরুতেই রোগীরা ওইসব দালালদের কারণে নামসর্বস্ত্র প্যাথলজিতে গিয়ে প্রতারনার স্বীকার হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, নোংরা ও দুর্গন্ধের কারণে গৌরনদী উপজেলা হাসপাতাল এখন নিজেই রোগী হয়েছে। দুর্গন্ধমুক্ত হাসপাতালের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কোন নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার।

সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শওকত আলী গত ৩১ অক্টোবর সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের অংশগ্রহনে গৌরনদীতে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সভা করেছেন। ওই সভায় অসংখ্য ভূক্তভোগীরা গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের করুন অবস্থাসহ উল্লেখিত বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে তুলে ধরেন। পরবর্তীতে ওইসভায় বিভাগীয় কমিশনার স্বাস্থ্য খাতে গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের করুন দশার কথাশুনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আব্দুল্লাহ খানকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মচারীরা অভিযোগ করে বলেন, কর্মচারীদের বিভিন্ন বিলে পূর্বের কর্মকর্তাদের কোন পার্সেন্টিজ দেওয়া না লাগলেও ডাঃ মনিরুজ্জামান হাসপাতালে যোগদান করার পর থেকেই ৩০ থেকে ৪০ পার্সেন্ট পর্যন্ত দাবী করে আসছেন। বিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক কর্মচারী তার (মনিরুজ্জামান) বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেননা। হাসপাতালের একাধিক স্বাস্থ্য সহকারী অভিযোগ করে বলেন, ডাঃ মনিরুজ্জামান তাদের কাছ থেকে বিলের ২০% আদায় করে নিচ্ছেন। হাসপাতালের প্রধান সহকারী রিয়াজুল ইসলামের যোগসাজসে পার্সেন্টিজ আদায় করা হয় বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন কর্মচারী। তারা অভিযোগ করে বলেন, আমরা চাকরি করে সাধারণভাবে জীবনযাপন করলেও হাসপাতালের প্রধান সহকারী রিয়াজুল ইসলাম আশোকাঠী এলাকায় জমি ক্রয়ে করে বিলাশবহুল ভবন নির্মান করে বসবাস করে আসছেন। যা চাকরির বেতনের টাকা দিয়ে কোনভাবেই সম্ভব নয়। তবে যোগসাজসে পার্সেন্টিজ আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে হাসপাতালের প্রধান সহকারী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এ অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। তিনি আরও বলেন, প্রায় ২০ বছর পূর্বে জমির দাম যখন কম ছিলো তখন আমি জমি ক্রয় করেছি এবং লোন নিয়ে ভবন নির্মান করেছি।

তিন টাকার টিকিট পাঁচ টাকায় বিক্রি॥

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগে দীর্ঘদিন থেকে টিকিট বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বর্হিবিভাগে ডাক্তার দেখাতে রোগীপ্রতি টিকিটের মূল্য তিন টাকা নির্ধারিত হলেও এ হাসপাতালে আদায় করা হচ্ছে পাঁচ টাকা করে। হাসপাতালের একটি সূত্রের দাবী, সরকারি খাতে রোগীপ্রতি তিন টাকা করে জমা দেওয়া হলেও রোগীপ্রতি অতিরিক্ত নেওয়া দুই টাকা ডাঃ মনিরুজ্জামানের পকেটে ঢুকছে। তবে টিকিট ক্লার্ক জাবেদ হোসেন জানিয়েছেন, তিন টাকা করেই রোগীদের কাছ থেকে টিকিটের মূল্যে নেয়া হয়। অনেক সময় ক্যাশে কিংবা রোগীদের কাছে খুচরা টাকা না থাকায় রোগীরা পাঁচ টাকা দিয়ে যায়। এক্ষেত্রে কারো কাছ থেকে জোর করে আদায় করা হচ্ছেনা।

২৩ লাখ টাকায় নলকূপ স্থাপন॥

দীর্ঘদিন যাবত লবনাক্ত পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগীদের। সেই সমস্যা সমাধানে অতিসম্প্রতি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে রহস্যজনকভাবে পূর্বের পাম্পের মাত্র ১০ ফিট দূরত্বে স্থাপন করা হয়েছে নতুন সাবমারসিবল পাম্প। কিন্তু সেই পাম্প দিয়েও উঠছে লবনাক্ত পানি। প্রশ্ন উঠেছে সরকারি অর্থ আত্মসাত করতেই পূর্বের পাম্পের পাশে স্থাপন করা হয়েছে নতুন সাবমারসিবল পাম্প। তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুজ্জামান বলেন, একটি মহল আমার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করতে না পেরে মিথ্যে অপপ্রচার করছে। একইভাবে মেহেন্দীগঞ্জে থাকাকালীন সময়েও আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অভিযোগ তুলেছিলো। যা পরবর্তীতে মিথ্যে প্রমানিত হয়েছে। বরিশালের সিভিল সার্জন ডাঃ মারিয়া হাসান বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon