আজ বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন
দেশ এখন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে : মঈন খান
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতার মোহে অন্ধ নয়। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে। তিনি আরো বলেন, এ সরকার যদি দেশকে ভালোবাসে, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, মানুষকে ভালোবাসে, তাহলে এ জুলুম-অত্যাচারের পথ পরিহার করে জনগণের কাতারে এসে দাঁড়াক। আমরাতো জনগণের কাতারে আছি। তারপর দেশের ভোটাররা যাকে ভোট দিয়ে বানাবে সে দেশ পরিচালনা করবে। এতে আওয়ামী লীগের ভয় কীসের।
শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বরিশাল জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে ১০ দফা দাবিতে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মঈন খান আরও বলেন, বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্র চাই। আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা কোনোদিন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হতে পারেনা। আজ আওয়ামী লীগকে জবাবদিহি করতে হবে, কেন তারা সংসদে মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলে, কেন তারা বাকশাল ও বাকস্বাধীনতা হরণ করেছিল, কেন দিনের ভোট রাতে হয়। এ কথা আমরা বলিনি, বিদেশী পর্যবেক্ষরা বলেছে। আর এতে তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, জনগণের প্রতিনিধিত্ববিহীন সরকারকে বিদায় নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তৃণমূল মানুষের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে, দুর্নীতি করে সেসব মানুষকে নিঃস্ব করে ফেলেছে। এ অত্যাচারী সরকারকে বিদায় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, জোর করে ক্ষমতায় থাকা যায় কিন্তু মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়না।
মঈন খান বলেন, আজ যারা সমাবেশের মাঠে আছেন তাদের একটি লোককেও ভাড়া করে আনা হয়নি, সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছে। এ রকম ১০টি সমাবেশে আমরা এক কোটি লোক সম্পৃক্ত করেছি, আওয়ামী লীগের মতো লোক ভাড়া করে আনিনি। এদেশ থেকে অন্যায়, দুর্নীতি, অত্যাচার, সন্ত্রাস ও জুলুমকে দূর করতে হবে বলেই মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে। মনে রাখতে হবে ক্ষমতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করা যায়না।
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিএনপির ঝড়ের গতি বেড়ে গেছে, আর একটু ঝড় হলে গাছের মতো পরে যাবেন। আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। আর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এমন একটি দল যারা আপনাদের অধীনে নির্বাচনে যাবেনা। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া দেশে নির্বাচনও হবেনা।
বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির জাহিদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, স্যাংশন তো মাত্র ১০/১২ জনের। স্যাংশনের দেখছে কী? ওরা পালানোর জায়গাও পাবেনা। তিনি আরও বলেন, কিছু লোককে কিছু সময়ের জন্য আহাম্মক বানানো যায়, সব সময়ের জন্য সবাইকে আহাম্মক বানানো যায় না। বিএনপি আওয়ামী লীগের শত্রু না, আমরা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধী। আওয়ামী লীগের শত্রু এখন আওয়ামী লীগ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, যে জাতি রক্ত দিতে পারে, সে জাতিকে দাবিয়ে রাখা যায় না। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমাদের ভোট করতে হবে। সমাবেশে উপস্থিত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, গ্রেপ্তারকৃত বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি, জ্বালানী তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবী আদায়ে বরিশালের বিভাগীয় সমাবেশ অতীতের ন্যায় জনসমুদ্রে পরিনত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সমাবেশে আসতে বরিশাল বিভাগের জেলা ও উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ক্ষমতাসীন দলের লোকজনে বাধা দিয়েছে। তাদের সকল বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এখন আর বিএনপিকে কেউ বাধা দিয়ে আটকিয়ে রাখতে পারবেনা। সমাবেশ শুরুর পর অন্যান্যদের মধ্যে বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ এ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির সমাবেশের পাশে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ॥ বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শনিবার দুপুর দুইটায় বরিশাল জিলা স্কুল প্রাঙ্গণের শুরু হয়। সমাবেশ মঞ্চের মধ্যখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য চেয়ার খালি রেখে এ সমাবেশ শুরু করা হয়। তবে তাদের চেয়ারে স্ব স্ব ছবি রাখা হয়েছিলো। মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জাামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরুর আগে থেকেই জেলা, উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। সমাবেশ প্রাঙ্গণসহ সামনের সড়ক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠে।
অপরদিকে, বিকেল চারটায় বিএনপির সমাবেশস্থল থেকে প্রায় আটশ’ মিটার দূরত্বে নগর ভবনের সামনের সড়কে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। সমাবেশের প্রধান বক্তা ছিলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। উভয় দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় মুখোমুখি হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে উভয় সমাবেশস্থলের পাশাপাশি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কগুলোতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিলো।