আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
পবিত্র রমজান মাসকে যেভাবে রাসুলুল্লাহ (স.) স্বাগত জানাতেন

পবিত্র রমজান মাসকে যেভাবে রাসুলুল্লাহ (স.) স্বাগত জানাতেন

 

পবিত্র রমজান মাসকে যেভাবে রাসুলুল্লাহ (স.) স্বাগত জানাতেন

বিশেষ প্রতিবেদক ॥

পুণ্যের ভরা মৌসুম রমজান সমাগত। রাসুলুল্লাহ (স.) রমজান মাসের আগমনে খুশি হতেন এবং রমজানের চাঁদকে অভিনন্দন জানাতেন। সাহাবায়ে কেরামও বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে রমজান মাসকে স্বাগত জানাতেন। হিশাম ইবনে হাসসান থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দৌহিত্র হাসান ইবনে আলী (রা.) চাঁদ দেখে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! এ মাসকে প্রাচুর্য ও জ্যোতির্ময় করুন, পুণ্য ও ক্ষমার মাধ্যম করুন।

হে আল্লাহ! আপনি (এ মাসে) আপনার বান্দাদের মাঝে কল্যাণ বিতরণ করবেন, সুতরাং আপনার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য যা বণ্টন করবেন, তা আমাদেরও দান করুন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)

পবিত্র রমযানুল মুবারক। বছরের অন্য এগারো মাসের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতময়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমযান মাস হলো- সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে পবিত্র কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যখন রমযানের আগমন হয় তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৯)

পবিত্র রমজান মাস রাসুল (স.)-এর কাছে এতটাই প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, তিনি এই মাস পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে খুব বেশি প্রার্থনা করতেন। রজব থেকেই তিনি রমজানের প্রস্তুতি নেওয়া এবং রমজান সংক্রান্ত আমল পরিপালনের বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করে দিতেন।

একবার আল্লাহর রাসুল (স.) তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে পরপর তিনবার প্রশ্ন করলেন– ‘কোন জিনিস তোমাদের স্বাগত জানাবে এবং তোমরা কোন জিনিসকে স্বাগত জানাতে যাচ্ছ?’

এর উত্তরে হজরত ওমর (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কোনও ওহি অবতীর্ণ হবে?’ রাসুল (স.) উত্তর দিলেন, ‘না’। ওমর বললেন, ‘কোনও শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হতে যাচ্ছে?’ রাসুল (সা.) এবারও উত্তর দিলেন, ‘না’। তখন ওমর (রা.) বললেন, ‘তাহলে কী?’ রাসুল (স.) বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ-তায়ালা রমজানের প্রথম রাতে কিবলাবাসী সকলকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ১৫০২)

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রজব মাসের চাঁদ উদিত হলে রাসুল (স.) এই দোয়া পড়তেন। দোয়াটির বাংলা উচ্চারণ হলো– ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দিন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (আল মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৩৯৩৯)

হজরত উসামা বিন জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি বললাম– হে আল্লাহর রাসুল, শাবান মাসে আপনি যে পরিমাণ রোজা রাখেন, অন্য মাসে তো আমি তা দেখি না। তখন আল্লাহর রাসুল (স.) বললেন, রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এই মাসটি এমন যে– এ মাসে মানুষ উদাসীন থাকে, অথচ এই মাসে বিশ্বপ্রতিপালকের কাছে আমলগুলো পেশ করা হয়। আর আমি চাই আমার আমল আমি রোজা রাখা অবস্থায় পেশ করা হোক।’ (মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল, হাদিস : ২১৮০১)

উম্মুল মুমিনিন হজরত উম্মে সালামাহ (রা.) বর্ণনা করেন যে– ‘তিনি কখনও আল্লাহর রাসুল (স.)-কে পরপর দুই মাস রোজা রাখতে দেখেননি, তবে তিনি শাবান মাসে বেশি পরিমাণে রোজা (নফল) রাখতেন। তাঁর এই রোজা রমজানের রোজার সঙ্গে মিলে যেতো।’ (নাসাঈ, হাদিস : ২১৭৫)

শাবান মাস রমজানের প্রস্তুতির সময়। এজন্য শাবানে ওই সব আমল বেশি পরিমাণে করা, যেগুলো রমজানে করতে হবে। যেমন– রোজা রাখা, নফল নামাজ পড়া ও পবিত্র কোরআনে কারিম তিলাওয়াত করা ইত্যাদি।

আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি তার গ্রন্থ লাতায়েফুল মাআরেফে লিখেছেন, ‘শাবান মাসে রোজা রাখা ও কোরআন তিলাওয়াতের পরিমাণ এজন্য বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে রমজানের বরকত ও রহমত পরিপূর্ণরূপে হাসিল করার প্রস্তুতি হয়ে যায় এবং মন রহমানের আনুগত্যের ওপর সন্তুষ্ট ও সুস্থির হয়ে যায়।’

হজরত আনাস (রা.) রমজানের আগের মাস শাবানে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর আমলের বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, ‘শাবান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুসলমানেরা পবিত্র কোরআনের প্রতি ঝুঁকে পড়তো এবং নিজেদের মাল-সম্পদের জাকাত প্রদান করতো, যাতে গরিব-মিসকিনরা রমজান মাসটি স্বাচ্ছন্দ্যে ও সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারে।’ (লাতায়েফুল মাআরেফ : ২৫৮)

দ্বীনের অনেক বুজুর্গ সম্পর্কেও বর্ণিত আছে যে, রমজান মাস এলে তারা সব সময় মসজিদে অবস্থান করতেন এবং অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত, চর্চা ও গবেষণা করতেন। আমল, তেলাওয়াত ও জিকির ছেড়ে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ ছেড়ে বাড়ি বা বাজারে যেতেন না। রমজান মাস এলে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাজিয়াল্লাহু আনহু ফতোয়া, মাসায়েল ইত্যাদি সব কিছু ছেড়ে দিয়ে তাসবিহ, তাহলিল, জিকির ও তেলাওয়াতে মশগুল হতেন। এতে রমজান মাসের মর্যাদা ও গুরুত্ব অনুধাবণ করা যায়। মূলত, আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত দেখা যায় রমজান মাসে, যা অনুসরণ করে রমজানকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পরিপূর্ণভাবে সদ্ব্যবহার করাই কল্যাণকর।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মুনাফিকি (বিশ্বাসঘাতকতা) থেকে রক্ষা করুন এবং মুমিনের মতো এ মাসকে স্বাগত জানানোর তাওফিক দান করুন। মুমিনের মতোই এই মূল্যবান সময় কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। পাশাপাশি মাহে রমজান সবার জীবনে মোবারক হোক। শুভ, কল্যাণকর ও ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনুক। ব্যক্তি ও সমাজজীবনের সব পাপ-পঙ্কিলতা ও আবিলতা দূর হয়ে যাক। মাহে রমজানের শিক্ষায় সবার চিন্তা-চেতনা, কথা-কাজ ও আচরণ-উচ্চারণে আলোকিত হয়ে উঠুক।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon