আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১২:৫৫ অপরাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাস হচ্ছে ‘পবিত্র রমযান’

পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাস হচ্ছে ‘পবিত্র রমযান’

পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাস হচ্ছে ‘পবিত্র রমযান’

 

পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাস হচ্ছে ‘পবিত্র রমযান’

বিশেষ প্রতিবেদক ॥

অফুরন্ত নিয়ামতপূর্ণ মাস পবিত্র রমযান। এই মাস তাকওয়া অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাস। আর তাকওয়া হলো হিদায়াত লাভের পূর্ব শর্ত। মাহে রমজানের রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করার জন্য সুবর্ণ সুযোগ।

তাই মাহে রমযান হচ্ছে তাকওয়া অর্জনের মাস। সহমর্মিতার মাস। প্রতি বছরই সংযম ও নেক আমলের বার্তা নিয়ে এ মাসের আগমন ঘটে। এ মাসের প্রতিটি দিনই সাহরী, ইফতার, তারাবীহ, নফল নামায, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার ও দান-খয়রাতের মতো বহুবিধ ইবাদতের সমাহার। আর তাই এ মাসে মুসলমানদের দৈনন্দিন রুটিন, আমলের প্রস্তুতি, আমলের উপলক্ষ ও নেক কাজের আগ্রহ বরাবরই একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। পাশাপাশি এ মাসের অনিবার্য বিষয় যেহেতু, শারীরিক অবসাদ ও ক্লান্তিবোধ, যা রোযার দীর্ঘ উপবাসের কারণে হয়ে থাকে- তাই এ সময় অন্যের একটু সহায়তা ও সহমর্মিতা খানিকটা হলেও স্বস্তি এনে দিতে পারে রোযাদারের মনে।

সুতরাং বরকতপূর্ণ এই মাহে রমযানে রোযা ও অন্যান্য ইবাদতে বরকত লাভের একটি অনিবার্য অনুষঙ্গ হচ্ছে, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা। তাছাড়া পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা একটি স্বতন্ত্র নেক আমলও। বলা বাহুল্য, মাহে রমযানে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অন্যান্য ইবাদতের মতোই বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। নেক কাজ ও তাকওয়া অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যের সহায়তা ও সহযোগিতা করা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন। (সূরা মায়েদা : ২)।

হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে : যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের পার্থিব কষ্টসমূহের একটি দূর করে দেয়, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার একটি কষ্ট দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করে, আল্লাহ তাআলা তার দুনিয়া ও আখেরাতের অভাবের কষ্ট লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আল্লাহ তাআলা বান্দার সহায়তায় থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহায়তায় থাকে। (সহীহ মুসলিম : ৩৮)।

রমজান মাস হচ্ছে, একজন মুমিনের জন্য নিজেকে নিষ্পাপ করে গড়ার মোক্ষম সময়। তাই আসুন আল্লাহভীতি অর্জন করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দাসত্বে নিজেকে নিয়োজিত করি। পরিশেষে তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালার এই বাণীই প্রণিধানযোগ্য, ‘যারা ইমান এনেছে এবং তাকওয়া অর্জন করেছে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া এবং আখেরাতে সুসংবাদ।’(সুরা ইউনুস: ৬৩-৬৪)।

আরেক হাদিসে এসেছে : তোমাদের মধ্যে যে তার ভাইয়ের উপকার করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন তা করে। (সহীহ মুসলিম : ৬১)। ‘শুআবুল ঈমান’ ও ‘সহীহ ইবনে খুযাইমা’র এক রেওয়ায়েতে রমযান মাস সম্পর্কে এসেছে : (রমযান মাস) সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মাস। (শুআবুল ঈমান : ৩৩৩৬)।

কুরআন ও সুন্নাহর বাণীগুলো এ বিষয়ে সুস্পষ্ট যে, নেক কাজে মুসলিম ভাইয়ের সহযোগিতা করা অনেক বড় নেক আমল। আল্লাহ তাআলা নিজেই এর আদেশ করেছেন এবং আল্লাহ তাআলা সহায়তাকারীর সাহায্যে থাকার সুসংবাদ দিয়েছেন। আর তা যদি হয় মাহে রমযানে! রোযাদারের সহযোগিতা করার কারণে! তাহলে তো ‘নূরুন আলা নূর’।

নেক কাজে মুসলিম ভাইয়ের সহযোগিতা, বিশেষভাবে রোযাদারের সহযোগিতা একটি বিশাল ও বিস্তৃত অধ্যায়। এখানে শুধু রোযাদারের সহযোগিতার কয়েকটি আঙ্গিক ও দিক সংক্ষিপ্তাকারে পেশ করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের এগুলোর ওপর আমল করে রমযানের বরকতকে বহুগুণে বাড়িয়ে নেয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
প্রথমেই আসি ঘরের কাজে। রমযানের বাড়তি আয়োজনের সাথে সাথে ঘরের কাজও একটু বেড়ে যায়। সংসারের অন্যান্য কাজ ছাড়াও ইফতার, রাতের খাবার ও সাহরীর খাবার প্রস্তুতির বাড়তি একটা চাপ থাকে। তবে পারস্পরিক সহযোগিতা এই বাড়তি চাপ কাটিয়ে উঠতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমন- ঘরের কাজে সাধারণত যাদের প্রয়োজন পড়ে না তারা ঘরণীর কাজে সহযোগিতা করতে পারেন। ঘরের পুরুষ লোকেরা স্ত্রীলোকদের সহায়তা করতে পারেন। পুত্রবধূ শাশুড়ির কাজে, শাশুড়ি পুত্রবধূর কাজে সহায়তা করতে পারেন। ননদ ভাবির কাজে, মেয়ে তার মায়ের কাজেও সহায়তা করতে পারেন ইত্যাদি।

আরেকটি বিষয়, বিশেষ প্রয়োজন না হলে মাহে রমযানে রান্নাবান্নার বিশাল বড় আয়োজন না করাই ভালো। যেমন- বন্ধুদের নিয়ে ইফতারির আয়োজন। অফিসের সকল কর্মচারীকে নিয়ে কোনো একজনের বাসায় বড় কোনো আয়োজন। আর যদি করতে হয়, তবে খেয়াল রাখতে হবে, ঘরণীর ওপর যেন বাড়তি চাপ না হয়ে যায়। আর যদি করতেই হয় তবে তাদের ওপর যেন চাপ না হয় সে ব্যবস্থা করা। তা হতে পারে বাইরে থেকে কিনে এনে আয়োজন করার মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনোভাবে।

মোটকথা খেয়াল রাখতে হবে, এ মাসে আমার দ্বারা যেন কোনো রোযাদারের কষ্ট না হয়, আমলে ব্যাঘাত না ঘটে। বরং আমি যেন তাদের কষ্ট লাঘব করতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে।

মাহে রমযানের সব হক আদায় করে রোযাব্রত পালন করলেই তাকওয়ার প্রত্যাশিত গুণাবলি অর্জনে আমরা সক্ষম হতে পারব। আর তাকওয়ার গুণাবলি যদি আমরা ধারণ করতে পারি, তাহলে আমাদের কোনো ভয় নেই। কেননা এর মাধ্যমেই আমরা ইহকালীন শান্তি ও কামিয়াবি এবং পরকালীন মুক্তি ও স্বস্তির পথকে প্রশস্ত করতে পারব।

এই মাসে দীনি মজলিশ আয়োজন করা, অধীনস্থ কর্মচারী ও শ্রমিকদের কাজের চাপ কমিয়ে দেয়া এবং তাদের পূর্ণ মজুরি ও অতিরিক্ত সম্মানী প্রদান করা, বেশি বেশি দান-খয়রাত করা ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, হালাল বা বৈধ উপার্জন এবং হালাল রিজিক বা পবিত্র খাদ্য ছাড়া নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ কোনো ইবাদতই মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হবে না।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে তাকওয়া অর্জনে তাওফিক দান করুন। -ছুম্মা আমিন

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon