আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১২:০৮ অপরাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
বছর ঘুরে আবার এলো খুশির ঈদ

বছর ঘুরে আবার এলো খুশির ঈদ

 

বছর ঘুরে আবার এলো খুশির ঈদ

পল্লী জনপদ ডেস্ক॥

বাংলাদেশের আকাশে হিজরি ১৪৪৪ সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। শনিবার (২২ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক শেষে এ সংবাদ জানান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি মো. ফরিদুল হক খান।

এর আগে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা করতে সন্ধ্যা ৬ টা ৪৫ মিনিটে (বাদ মাগরিব) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক হয়।

অনাবিল আনন্দ ও উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় এ ঈদুল ফিতর। এ ঈদ আমাদের মুসলিমদের জাতীয় উৎসব। ঈদুল ফিতর মুসলিমদের জীবনে অশেষ তাৎপর্য ও মহিমায় অনন্য। একমাস রোজা পালনের পর এক ফালি উদিত চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদের আগমনী বার্তা। ‘ঈদ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ খুশি। আর ‘ফিতর’ মানে ভঙ্গ করা। দীর্ঘ একটি মাস কঠোর সিয়াম সাধনা ও ইবাদত-বন্দেগির পর বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ রোজা ভঙ্গ করে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপ যে আনন্দ উৎসব পালন করে সেটিই ঈদুল ফিতর। প্রকৃতপক্ষে ঈদ ধনী-দরিদ্র, সুখী-অসুখী, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সব মানুষের জন্য কোনো না কোনোভাবে নিয়ে আসে নির্মল আনন্দ। এ ঈদ ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস।

আমাদের মুসলিমগণের বছরে দু’টি উৎসব রয়েছে। একটি হচ্ছে ১ শাওয়াল তারিখে ঈদুল ফিতর এবং অপরটি হচ্ছে ১০ জিলহজ দিবসে ঈদুল আজহা। মুসলিম মিল্লাতের কাছে এ উৎসব প্রতিবছর আনন্দের দিন হিসেবে আসে। রোজা পালনের মাধ্যমে রোজাদার যে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সৌন্দর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, ইসলামের যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, উদারতা, ক্ষমা ও মহানুভবতা মনুষ্যত্বের গুণাবলী বিকশিত হয় এবং গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ঈদুল ফিতর আমাদের কাছে আসে।

পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস মাহে রমযান শেষে ১৪৪৪ হিজরী সালের পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনে মুসলমানরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। ঈদুল ফিতর ইসলামের রীতি-নীতি অনুযায়ী ধর্মীয় দায়িত্বসমূহ পালন করার মধ্যেই প্রকৃত শান্তি নিহিত রয়েছে। ঈদুল ফিতর মুসলিমদেরকে সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য এবং ইসলামি ভ্রাতৃত্ববোধ শিক্ষা দেয়। এভাবে ঈদুল ফিতরের উৎসব ইসলামি জীবন পদ্ধতির ভিত্তিতে একটি বিশ্বজনীন নীতির ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকে। এ আনন্দের দিনে প্রতিটি মুসলিম তার সামাজিক অবস্থান ভুলে যায় এবং ভ্রাতৃত্ববোধের পর তৃপ্তিতে একে অপরকে আলিঙ্গন করে। পার্থক্য থাকে না ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সবল-দুর্বল, বংশ গৌরব, কৌলিন্য ও মান-মর্যাদা। ঈদগাহে ময়দানে সারিবদ্ধভাবে জামাতের সঙ্গে ঈদুুল ফিতরের দু’ই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষেই সাম্যের অতুলনীয় বাস্তব দৃশ্যের চিত্র ফুটে ওঠে।

প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ঈদ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো.আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ঈদের দিন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে এবং প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভন গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

এ ঈদুল ফিতরের মাধ্যমে মুসলিম সমাজের কাছে নেমে আসে এক অনুপম ও অনাবিল আনন্দের জোয়ারধারা। হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূল (স.) বলেছেন- ‘ঈদুল ফিতরের রাতে ফিরিশতাদের মাঝে আনন্দ ও খুশির হিল্লোল বইতে থাকে। এক পর্যায়ে মহান আল্লাহ ফিরিশতাদের জিজ্ঞেস করেন- যারা আমার কাজ করেছে তাদের কি পুরস্কার দেয়া যেতে পারে? তখন ফেরেশতারা বলেন- ওহে আল্লাহ তায়ালা! তাদেরকে পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্যে অনুরোধ করছি। তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন- তোমরা সাক্ষী থেকো, আমি সকলকে ক্ষমা করে দিলাম। -(মিরকাতুল মাফাতিহ শারহে মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং- ২০৯৬) সুনানে ইব্ন মাজাহ গ্রন্থে ঈদের ফজিলত সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। তাই এ খুশি ও আনন্দের রাতে ইবাদত ও নফল নামাজ আদায় করা খুবই প্রয়োজন। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি দু’ই ঈদের রাতে ইবাদত করবে তার অন্তরকে আল্লাহ তায়ালা রহমত ও বরকতের বারিধারা দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেবেন। -(সুনানে ইব্ন মাজাহ, হাদিস নং- ১৭৮২)

ঈদুল ফিতরের ফজিলত সমপর্কে রাসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ঈদুল ফিতরের দিন ফিরিশতাগণ রাস্তার মুখে মুখে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন- হে মুসলিম জাতি! ভালো কাজের ক্ষমতাদাতা ও সাওয়াবের আধিক্যদাতা আল্লাহর কাছে অতি শিগ্গিরই চলো। তোমাদের রাতে ইবাদত করার হুকুম করা হয়েছিলো, তোমরা তা পালন করেছো। তোমরা তোমাদের রবকে খাওয়ায়েছো (অর্থাৎ গরিব-মিসকিনকে খাবার দিয়েছো) আজ তার পুরস্কার গ্রহণ করো। অতঃপর মুসলিমগণ যখন ঈদের নামাজ পড়ে তখন একজন ফিরিশতা উচ্চঃস্বরে বলতে থাকেন- ‘তোমাদেরকে তোমাদের রব ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তোমাদের পুণ্যময় দেহ-মন নিয়ে নিজ ঘরে ফিরো।’ -(আল-মুজামুল কাবির, হাদিস নং- ৬১৮)

উল্লেখ্য, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঈদকে ঘিরে যে আনন্দ-উচ্ছাস থাকার কথা তা দু’টি বছর ম্লান করে দিয়েছিল মহামারি করোনাভাইরাস। করোনামুক্ত পরিবেশে গত বছর এবং এবার কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করেই ধর্মীয় প্রধান উৎসব ঈদ উদযাপিত হবে। শহর বন্দরে কর্মরত সর্বস্তরের মানুষ ঈদকে ঘিরে নাড়ীর টানে প্রচন্ড তাপদাহের মাঝেও পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে গ্রামের বাড়িতে ছুঁটছে। তবে স্বল্প আয়ের অনেক মানুষই যানজট, অতিরিক্ত ভাড়াসহ নানা কারণে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে না।

বরিশাল নগরে ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়

পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল নগরের হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ মাঠে।ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ গোলাম ফারুক।

তিনি জানান, হেমায়েতউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে একটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। মাঠ নামাজ আদায়ের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। এখানে একসঙ্গে ৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধান জামাতে নামাজ আদায় করবেন।

নগরের দ্বিতীয় প্রধান জামাত হবে আমতলা মোড় এলাকার বরিশাল সদর মডেল মসজিদে। এ মসজিদে দুটি জামাত হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা রেজা মো. মোহসীন।

মুসল্লিদের কথা বিবেচনা বরিশাল সদর মডেল মসজিদে ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম সকাল সাড়ে ৮টায় ও দ্বিতীয় জামাত সাড়ে ৯টায় হবে। এছাড়া চকবাজার এলাকার জামে এবাদুল্লাহ ও গীর্জা মহল্লার জামে কসাই মসজিদে দুটি করে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামে এবাদুল্লাহ মসজিদে প্রথম জামাত সকাল ৮টায় ও দ্বিতীয় সাড়ে ৯টায় হবে। জামে কসাই মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টা ও সাড়ে ৯টায় দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই দরবার শরীফে সকাল সাড়ে ৮টায়, উজিরপুরের গুঠিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও নেছারাবাদ দরবার শরিফে সকাল ৮টায় ঈদের বৃহত্তম জামাত হবে।

জাতীয় ইমাম সমিতি বরিশাল মহানগরের সভাপতি মাওলানা কাজী আব্দুল মান্নান জানান, বরিশাল মহানগরীর সাড়ে পাঁচশ মসজিদ রয়েছে। সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে সব মসজিদ ও ঈদগায়ে নামাজ শেষ হবে। সব মসজিদে ঈদের জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঢাকার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ইদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই জামাতে অংশগ্রহণ করবেন। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল হলে বা অন্য কোনও অনিবার্য কারণে এ জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

অপরদিকে, প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ে পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে। আর এক ঘণ্টা পর পর ৮, ৯ ও ১০ টায় তিনটি জামাত এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon