আজ বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ অপরাহ্ন
শামীম আহমেদ॥
ক্রমশ বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেঁয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। আর এই ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবেলায় বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৩ হাজার ৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র এরই মধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সাথে ৬ হাজার ২৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১ হাজার ৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়ের জন্য খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিকেল ৩ টায় অনুষ্ঠিত বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় আরও জানানো হয়, বিভাগে ৩ হাজার ৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্রেই ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৬১০ জন মানুষ ও ১ লাখ ৫২ হাজার ২২৭টি পশু আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া বিভাগের ৫২ টি মুজিবকেল্লাও প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া ১ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২৪ লাখ ৩ হাজার টাকা, ৯৬ বান্ডিল টিন ও ২ হাজার পিচ কম্বল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যা দিয়ে তাৎক্ষনিক ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও শুকনো খাবারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলা সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা যাবে।
সভার সভাপতি বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শওকত আলী বলেন, এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়ের তথ্য চূড়ান্ত ভাবে পাওয়া যায়নি, তবে ঝালকাঠিতে কিছু লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তবে দুর্গম ও চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলে থাকা মানুষদের মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য স্ব স্ব জেলার প্রশাসককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কাজটি পরিচালনা করছেন। সেই সাথে এ কাজে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস)’র স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে।
তিনি বলেন, এ দুর্যোগে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি শেখ হাসিনা সেনানিবাসের সদস্যরা বরিশাল বিভাগে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া নৌবাহিনী ও কোষ্টগার্ডের সদস্যরাও থাকছেন আমাদের সাথে। এছাড়া বিভাগের সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সভায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে গোটা বিভাগে ৪১২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। যারা এখন থেকে দুর্যোগ পরবর্তী সময় পর্যন্ত অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। আর পানিবাহিত রোগের সকল ধরনের ওষুধসহ চিকিৎসা সামগ্রীর কোন ঘাটতি নেই।
এছাড়া আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বরিশাল রেঞ্জের পরিচালক মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের সাড়ে ১১ হাজার আনসার-ভিডিপির সদস্য পূজার দায়িত্বে রয়েছেন, যারা সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের পর আশ্রয়কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত হবেন। উপজেলা প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী বিগত সময়ের মতো তাদের বিভিন্ন কাজে মোতায়েন করা হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বরিশাল বিভাগের উপপরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, বিভাগের দুটি নৌ স্টেশনসহ ৪২টি স্টেশনসহ সাড়ে ৮ শত কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুত কর্মসূচি (সিপিপি) বরিশালের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ শাহাবুদ্দিন মিয়া জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগের ১ হাজার ৮৪৫ টি সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে আগে থেকেই। আর যে কোন ধরনের উদ্ধার কাজে বরিশাল বিভাগের ৫ জেলায় ৩২ হাজার ৫ শত জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন। এছাড়া বিভাগে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস)’র দেড় হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।
অপরদিকে, দুর্যোগে বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিলে তা তাৎক্ষনিক রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তবে বিভাগের যে সকল বেড়িবাঁধ ঝূঁকিপূর্ণ ছিলো তা কিছুদিন আগে মেরামত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মুজিবুর রহমান।