আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্নাসহ আটক ১০, মুক্তি দাবি

বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্নাসহ আটক ১০, মুক্তি দাবি

 

বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্নাসহ আটক ১০, মুক্তি দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্নাসহ ১০ জনের আটকের ব্যাপারে নগরীতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। আটকের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সয়লাব হয়ে গেছে। ফেসবুকে পোস্ট, কমেন্ট, লাইকের বন্যা। আটক খবর ‘টক অব দ্য বরিশালে’ পরিণত হয়েছে। আবার তাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা। সোমবার (১৫ মে) বেলা ১১টার দিকে সদর রোড বিবির পুকুর এলাকার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তাঁরা।

এ সময় মান্নাকে গ্রেপ্তারের নিন্দাও জানান নেতারা। রোববার রাত ১টার দিকে নগরীর হাসপাতাল সড়ক থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কাউনিয়া থানা পুলিশ। দলীয় মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের তিন কর্মীকে ওই রাত ৮টার দিকে কাউনিয়া শ্মশান এলাকায় হামলার অভিযোগে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় মান্নাকে।

রইজ আহমেদ মান্না বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। তবে এখন পর্যন্ত খোকন সেরনিয়াবাতের হয়ে নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি সাদিক আব্দুল্লাহ ও তাঁর অনুসারীদের।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ.কে.এম জাহাঙ্গীর। তিনি নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদেও আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মান্নাকে যে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঘটনাস্থলের দুই কিলোমিটারের মধ্যেও তিনি ছিলেন না। এলাকাটি সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে জানিয়ে তাঁরা ভিডিও ফুটেজ যাচাইয়ের আহবান জানান। এছাড়া হামলার ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবিও করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নাঈমুজ্জামান লিটু ও আনোয়ার হোসাইন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন, হাসান মাহামুদ বাবু প্রমুখ।

কাউনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুল হক বলেন, তিনজনকে কুপিয়ে আহত করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে নগরীর হাসপাতাল সড়কের একটি বাড়ির বাগান থেকে মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক মান্নাসহ দু’জনকে আটক করা হয়। অন্য ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় কাউনিয়া বিসিক এলাকা থেকে।

এ ঘটনায় আহত হন ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম, জাহিদ ভুঁইয়া ও মনা আহমেদ। তাঁরা শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে (শেবাচিম) চিকিৎসাধীন। আহত মনা আহমেদের ভাষ্য, প্রয়াত এক বন্ধুর সৎকারে অংশ নিতে তাঁরা কাউনিয়া শ্মশানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার সময় রাত ৮টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা মান্নার নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা তাঁদের ওপর হামলা চালায়।

এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁরা আহত হন। মনা দাবি করেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাঁরা নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের হয়ে কাজ করছেন। এ কারণে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবি : সংগৃহিত

আহত মনার ছেলে ইরফান বলেন, সন্ধ্যায় কাউনিয়া মহাশ্মশান এলাকায় নৌকার পক্ষে প্রচারে যান তার বাবাসহ ৬/৭ জন। এ সময় মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক মান্নার নেতৃত্বে অর্ধশত ‘ক্যাডার’ তাদের ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে তারা রড দিয়ে পিটিয়ে বাবার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। অপর তিনজনকে বেধরকভাবে রড দিয়ে পিটিয়েছে। আহত সবাই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।

এদিকে, নৌকার নির্বাচনী কার্যালয়ে দায়িত্বে থাকা লস্কর নুরুল বলেন, “ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এখনও নির্বাচনী কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। যারাই জড়িত থাকুক না কেন কঠোর হস্তে দমন করা হবে। আমি সেই নির্দেশনা দিয়েছি।”

এর আগে গত ৬ মে রাত পৌনে একটায় বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর নৌকা প্রতীকের পক্ষে মিছিল করায় মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়কের নেতৃত্বে দুই কর্মীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে কাউনিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

এর আগে গত ৭ মে কাউনিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কর্মী মো. সোহাগ।

জিডিতে মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইস আহম্মেদ মান্না ও তার ভাইসহ ১৭ জনের নামসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকির অভিযোগ করা হয়।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের ব্যক্তিগত সহকারী মো. রুবেল রাতে জানিয়েছেন, খোকন সেরনিয়াবাত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কর্মীদের দেখতে গিয়েছিলেন।

তবে ঘটনার পরপর মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না হামলার কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। গত ৫ দিন ধরে তিনি সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত রয়েছেন। ঘটনার সময়ের সিসি ক্যামেরা চেক করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল সোমবার দুপুর ২টার দিকে বলেন, ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon