আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০১:৪০ অপরাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
বরিশাল সদর উপজেলার ঐক্যবদ্ধ বিএনপিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা!

বরিশাল সদর উপজেলার ঐক্যবদ্ধ বিএনপিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা!

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
সাংগঠনিকভাবে সু-সংগঠিত বিএনপির ঘাঁটি খ্যাত বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপিকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে একটি চক্র। বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফটোসেশনখ্যাত বিতর্কিত বিএনপি নেতা এ্যাডঃ কাজী এনায়েত হোসেন ওরফে বাচ্চু ও তার দোষর দলের দুঃসময় ও দলীয় নেতাকর্মীদের পদ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ধান্দাবাজী করা ও আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে শীর্ষ নেতাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও তাদের উপর হামলা করা মন্টু খান। এই দুই নেতার সাথে যোগ হয়েছে চরবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাতকারী অনৈতিক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি, মেডিক্যাল রিপেনজেটিটিভ সুবিধাভোগী নেতা জিয়াউল ইসলাম সাবু। এই বিতর্কিত নেতা দীর্ঘ বছর ধরে (১৯ জুলাই ২০২২ইং তারিখের সদর উপজেলা বিএনপির কর্মীসভার আগ পর্যন্ত) দল থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো। কর্মীসভার পরপরই ঘুমন্ত ইউনিয়ন নেতা উপজেলার নেতৃত্ব দেয়ার স্বপ্ন দেখে। মন্টু ও বাচ্চু সদর উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বে থেকে চাঁদাবাজি, দূর্নীতি, সংগঠন পরিপন্থী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার কারণে সাংগঠনিকভাবে দলের অবস্থা হ য ব র ল হয়ে যায়। ফলে তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সদর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথ ছেড়ে ঘর মুখী হয়ে পরে। দলের এই দৈণ্যদশা থেকে উত্তরণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরিশাল জেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুনদের নেতৃত্বে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এরপর ঘুরে দাড়ায় বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপি। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে নতুন মিশন নিয়ে মাঠে নামে বিতর্কিত বাচ্চু মন্টু ও সাবুরা। এই তিন ষড়যন্ত্রকারী দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান করে গুটি কয়েক আ’লীগ ঘরনা লোক নিয়ে বানোয়াট সংবাদ সম্মেলন পরবর্তী জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানারে ঝাড়ু পেটা করে এবং দলীয় কার্যালয়ে তালা লটকিয়ে দেয়। গত ১৬ জানুয়ারি কেন্দ্র ঘোষিত সদর উপজেলা বিএনপির কর্মসূচী বিতর্কিত করতে অবৈধভাবে সদর উপজেলা বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের লোকজনের সহায়তা নিয়ে চরবাড়ীয়া ইউনিয়নের কাগাশুরা নামক একটি গ্রামে গিয়ে স্বল্প সংখ্যক লোক নিয়ে একটি মিছিল করে। দেখাগেছে ওই মিছিলের ব্যানারে দলের গঠনতত্ত্ব অমান্য করে এনায়েত হোসেন বাচ্চু নিজেকে ওই অনুষ্ঠানের স্বঘোষিত সভাপতি উল্লেখ করে একের পর এক সংগঠন পরিপন্থী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। ফলে সু-সংগঠিত সদর উপজেলা বিএনপিকে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী ৩ বিতর্কিত নেতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

সদর উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী প্রতিবেদককে জানায়, দীর্ঘ ১৪ বছর স্থবির থাকা বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে এবং সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে বিতর্কিতদের গুরুত্বপূর্ন পদে না দিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে দলের পরীক্ষীত, ত্যাগী, নির্যাতিত ও নিবেদিত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা স্থান পান। আহ্বায়ক করা হয় সরকারদলীয় হামলা-মামলার শিকার ৪ বার কারাবরণকারী ২২ মামলার (যা সদর উপজেলার সর্বাধিক মামলার আসামী) সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি, বারবার জনগনের ভোটে নির্বাচিত স্বর্ণপদক প্রাপ্ত তিন বারের জেলার শ্রেষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল আমিন কে। ২ বার কারাবরণকারী ৮ মামলার আসামি দলের পরীক্ষীত ও সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক ত্যাগী নেতা মোঃ রফিকুল ইসলাম সেলিমকে সদস্য সচিব করে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে ২নং যুগ্ন আহবায়ক পদে মন্টু খান এবং ১নং সদস্য পদে জিয়াউল ইসলাম সাবুকে রাখা হয়। নতুন কমিটি গঠনে সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ্ব নুরুল আমিন এবং সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম সেলিম এর নেতৃত্বে বরিশাল সদর উপজেলার অবহেলিত বিএনপি একটি শক্তিশালী সু-সংগঠিত সংগঠনে রুপ নেয়। এদের নেতৃত্বাধীন বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপি যখন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, নেতাকর্মীরা প্রাণ চঞ্চল্যতা ফিরে পেয়েছে, আন্দোলন সংগ্রাম বেগবান হচ্ছে, ঠিক তখনই আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাতকারী ষড়যন্ত্রকারীরা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলীয় কর্মসূচীর নামে অহেতুক গ্রুপিং সৃষ্টি করে সু-সংগঠিত বিএনপির মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে দলের ক্ষতি করার অপচেষ্টায় মেতে ওঠেছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ ফটোসেশন নেতা খ্যাত কাজী এনায়েত হোসেন ওরফে বাচ্চু দলীয় পদে থেকে সরকার দলের মামলা হামলার শিকার নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মামলা পরিচালনার নামে ব্যাপক অর্থ বাণিজ্য করে নিঃস্ব করে দিয়েছে অনেক নেতাকর্মীকে। দলীয় সব কর্মসূচীতে দায়সারাভাবে উপস্থিত থেকে ফটোসেশান করে ছিটকে পরতেন। আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ ১৪ বছরে একটি মামলায়ও আসামি হওয়ার দৃষ্টান্ত নেই দলের এই বিতর্কিত নেতা বাচ্চুর। সবাই জানে দলের একনিষ্ঠ নেতা মন্টু খান। কিন্তু এই নেতা দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে জীবন যাপন করতেন, যা অনেকেরই অজানা। মন্টু খান প্রতিদিন সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে জেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বাসায় গিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা এনে বাজার করে বাসায় ফিরতেন। বাজারের ডিম ওয়ালা, মুরগীওয়ালা, মাংসওয়ালা সবারই আতংক মন্টু খান বলে অভিযোগ রয়েছে। তার স্বেচ্ছাচারীতা ও অনৈতিক কারণে তার নিজ এলাকা জাগুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরে আলম চান্নু, সাবেক সভাপতি ডাঃ হোসেন আলী, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাক আলম চৌধুরী, হাফেজ কূট্টি, মিজান কাজী, মাসুম তালুকদার, নুরু গাজী, জাকির আকনসহ ২৫ জন কর্মীবান্ধব জনপ্রিয় নেতা বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, মন্টু খানের সাথে দলের হাইকমান্ডের সম্পর্ক ভালো বলে প্রচার করে মন্টু খান বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে ব্যাপক। এছাড়া বিএনপি অফিসের প্রতি মাসের বিদ্যুৎ বিল নিতেন কমপক্ষে ২৫ জন নেতার কাছ থেকে। দলের কর্মকাণ্ডের আড়ালে এটাই ছিলো তার মূল কাজ।

বিএনপি সরকারদলীয় থাকাকালে মেডিকেল রিপেনজিটিটিভের চাকুরীর পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতি না করেও জিয়াউল ইসলাম সাবু ব্যাপক সুবিধা গ্রহণ করে। তৎকালীন ক্ষমতাধর এক নেতার আশীর্বাদ পুষ্ট হওয়ার সুবাদে দলীয় সমর্থন বাগিয়ে নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। কিন্তু দল ক্ষমতায় না থাকায় ভোল পাল্টিয়ে কাজ করেন আওয়ামী লীগের পক্ষে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার ১৪ বছরে অনৈতিক ব্যবসার সাথে জড়িত খেতাব অর্জন করেন। আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত থাকলেও তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করেন বলে একটি সূত্র জানায়। বিএনপি নেতা আব্বাস জানায়, বিগত ১৪বছরে দলীয় সব কর্মসূচীতে সাবু অনুপস্থিত থাকলেও মোটা অংকের আর্থিক লাভবান হয়ে তাকে নিয়ে মাঠে নামে বরিশাল সদর আসন থেকে সাংসদ নির্বাচনে নতুন প্রার্থী হতে চান এমন একজন। আব্বাস বলেন, জিয়াউল ইসলাম সাবু ওই সম্ভাব্য প্রার্থীকে এককালীন মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন। আব্বাসসহ একাধিক নেতা জানায়, আমরা স্বীকার করি আহবায়ক নুরুল আমীন ও সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম সেলিম মোল্লার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সদর উপজেলা বিএনপি বেশ শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই নতুন সম্ভাব্য প্রার্থী বরিশাল সদর আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য দলীয় মনোনয়ন পেতে জোরালো চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে নিজ ঘরানার লোক দিয়ে কমিটি করার অপচেষ্টা তার দীর্ঘদিনের। এ কারনেই তিনি নিজের স্বার্থের জন্য দলের ক্ষতি করে হলেও বাচ্চু-মন্টু-সাবুদের দ্বারা দল ভাঙার নতুন খেলায় মেতে ওঠেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাজী এনায়েত হোসেন ও জিয়াউল ইসলাম সাবু’র কাছে জানতে চাইলে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

উপরোক্ত অভিযোগের ব্যাপারে মন্টু খান’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ডাহা মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং বানােয়াট। সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ করছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি পকেটের টাকা খরচ করে রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণের জন্য, নিজের জন্য না। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন বরিশাল বিএনপিতে আমার মতো ত্যাগী নেতা আর কয়জন আছে?

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon