আজ শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় দুধল ইউনিয়নের গোমা গ্রামের কালাম হাওলাদারে পুত্র মো: জাবের (১৬) সুন্দরকাঠী জিপিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, এই ঘটনায় সোমবার (২৮ আগস্ট) সকালে নিহতের বাড়ির সামনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা সড়কে জিপিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষকের ধাওয়া ও হামলায় নিহত হওয়ায় বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মিলে বিকেলে পিকনিক করেছি। পিকনিক শেষে অনেকেই চলে গেছে। আমরা কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব মিলে বিদ্যালয়ের মধ্যে রাতে সাউন্ডবক্সে গান বাজাচ্ছিলাম। তখন মোটরসাইকেল যোগে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন। তার সাথে থাকা মন্টু নামে এক ব্যক্তি ও প্রধান শিক্ষক আমাদের ধাওয়া দেয় ও তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। ওই হামলায় জাবেরের বুকে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত লাগে। তখন জাবের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তখন জাবেরকে প্রধান শিক্ষক ও মন্টু লাথি মারে। আমরা রাতে জাবেরকে প্রতিবেশীর এক বাড়িতে রাখি। সকাল হলে জাবেরকে বাড়িতে দিয়ে আসি।
জানা গেছে, সোমবার সকালে বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান শিক্ষকের লোকজন ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন চলে যায়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী পরিবার মৃত জাবেরের লাশ দাফন দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
মিডিয়া ব্যক্তিদের উপস্থিত হলে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সাংবাদিকদের বক্তব্য না দেয়ার জন্য নিহত জাবেরের মা রীনা বেগমকে নিষেধ করে। সন্তান হারানোর বেদনায় সকল বাঁধা উপেক্ষা করে নিহতের মা রীনা বেগম সাংবাদিকদের জানায়, গত ১৭ আগস্ট আমার ছেলে জাবেরসহ তার সহপাঠী বিদ্যালয় বিকেলে পিকনিক করে। ঐ দিন রাতে আমার ছেলে সহ তার কয়েকজন বন্ধুরা বিদ্যালয়ে উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্সে গান বাজায়। আশেপাশের লোকজন প্রধান শিক্ষককে ফোন করলে রাত ১১ টায় মোটরসাইকেলে তিনি বিদ্যালয়ে এসে পিকনিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। তখন আমার ছেলে জাবের দৌড়িয়ে পালাতে গেলে বিদ্যালয়ের পাশে থাকা ইটের তৈরি চুলার উপর পড়ে যায়। সকালবেলা জাবের আহত অবস্থায় বাড়ি আসে। তার কাছে জানতে চাইলে প্রথমে বলে অটো রিক্সা থেকে পড়ে গিয়েছি। তখন আমার ছেলে বারবার বলছিল আমার বুকে ও পেটে প্রচন্ড ব্যথা করছে। আমি ওর গায়ে হাত দিয়ে দেখি অনেক জ্বর। সকালবেলা স্থানীয় ফার্মেসী থেকে ওর জন্য ঔষধ এনে খাওয়াই। তারপর আমার ছেলের সুস্থ না হওয়ায় ওকে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। ঐ রাতের ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পরে। আমার ছেলের কাছে যানতে চাইলে তখন আমার কাছে সত্যটা বলে। এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে গতকাল সকালে জাবেরকে বাড়িতে নিয়ে আসি। বাড়িতে আনার পরে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে সন্ধ্যার পরে প্রধান শিক্ষক মোঃ আহসান হাবিব মোল্লা নিজে ফোন করে একটি অ্যাম্বুলেন্স এনে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে নেয়ার পথে বরিশালের আমতলা মোড় পৌঁছালে আমার ছেলে মারা যায়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিব মোল্লাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। পরবর্তীতে স্থানীয়রা বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ খবর দিলে তারা এসে লাশ থানায় নিয়ে যায়। এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এস এম মাকসুদুর রহমান জানান, নিহত শিক্ষার্থীর লাশ থানায় আনা হয়েছে। নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পুলিশ লাশ ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।