আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১০:০২ পূর্বাহ্ন
বিসিসি নির্বাচন : ‘নিরব ভোট বিপ্লবের গুঞ্জন, শায়খে চরমোনাই এগিয়ে’
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর বাকী মাত্র ১ দিন। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। ভোটাররা হিসেব-নিকেশ কষতে শুরু করেছেন। তারা এ বছর আর ভুল করতে চান না। বিগত দিনে নির্বাচনকালীন প্রতিশ্রুতি কেউ রাখেনি। এমনটাই বলছেন অনেকে। ভোটাররা ইতোমধ্যে মুখ খুলতে শুরু করেছে।
আবার গত ৫ বছরে বরিশালে চোখেপরার মতো উন্নয়নমূলক কোন কাজ হয়নি বলে অকপটে দায় স্বীকার করছেন কাউন্সিলররা। আর বেশির ভাগ কাউন্সিলর ছিলেন আওয়ামী ঘরোনার। সেক্ষেত্রে তাদের প্রচার-প্রচারণায় দলীয় প্রার্থী ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন বলে ধারণা করছেন অভিজ্ঞমহল।
সোমবার (১২ জুন) অনুষ্ঠিতব্য বিসিসি নির্বাচনে ০৭ জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বরিশালের জনগণের কাছে তেমন পরিচিত নন। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের ভেতরে রয়েছে বিভাজন-দ্বন্দ্ব-অবিশ্বাস।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম শায়খে চরমোনাই (হাত পাখা) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীদের মধ্যে হেভিওয়েট হিসেবে তাকেই ভাবছেন ভোটাররা। কারণ হিসেবে ভোটাররা বলছেন তার দাদা মরহুম সৈয়দ মুহাম্মাদ এছহাক (রহ.) ইসলামের খেদমত করে গেছেন। তার বাবা মরহুম সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম (রহ.) তিনি আমৃত্যু ইসলামের খেদমত করে গেছেন। তার আপন বড় ভাই আলহাজ মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। তিনি বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তারা সাত ভাই সবাই উচ্চ শিক্ষিত এবং ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত আছেন। ফলে এবারের সিটি নির্বাচনে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন মনোনীত ‘হাতপাখা’।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ ইকবাল হোসেন তাপস (লাঙ্গল প্রতীক) নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জাতীয় পার্টির ভেতরে রয়েছে ফাটল। ৩/৪ খন্ডে বিভক্ত তারা।
এছাড়াও সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ আসাদুজ্জামান (হাতী মার্কা), জাকের পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু (গোলাপ ফুল মার্কা), স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান (টেবিল ঘড়ি মার্কা) ও আলী হোসেন (হরিণ মার্কা) নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত এলাকাগুলোতে উন্নয়নের তেমন কোন আঁচড় লাগেনি। উন্নয়নবঞ্চিত মানুষগুলো বলছে এবার শায়খে চরমোনাইকে ভোট দিয়ে দেখি তিনি কী করতে পারেন। অপরদিকে, নগরীর নারী ভোটারদের আকর্ষণ হাত পাখা প্রতীকে। তবে পুরুষদের আকর্ষণও কম নয়। প্রায় সমানে সমান। এছাড়া নতুন ভোটারদের প্রিয় প্রতীক হাত পাখা। তাদের ভাবনা হুজুর ভাল লোক। তাকেই আমরা ভোট দেব।
ভোটের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে সুশীল সমাজসহ নগরীর সাধারণ ভোটারগণ হিসেব-নিকেশ কষতে শুরু করেছে। বরিশালে বিএনপির রয়েছে ভোট ব্যাংক। তারা নির্বাচনে আসছে না। তবে কাউন্সিলর পদে তাদের স্ত্রী পরিজন, আত্মীয়-স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সেক্ষেত্রে বিএনপির সিংহভাগ ভোটার তাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
আবার জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নির্বাচনী মাঠে ওপেন না থাকলেও তাদের মধ্য থেকে চারজন প্রার্থী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সেক্ষেত্রে তারাও ভোট প্রদান করবে বলে কানাঘুষা চলছে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ‘হাতপাখা’ প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই শুরু থেকেই নির্বাচনী মাঠে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে হাতপাখা প্রতীকের পক্ষে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মুসলমান-হিন্দু-বৈদ্য-খ্রিষ্টান সব ধর্মের লোকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে কুশলবিনিময় করছেন। ব্যাপকভাবে সাড়াও মিলছে। তাকে পেয়ে মানুষ স্বত:স্ফূর্ত অভিবাদন জানাচ্ছেন। সুশীলসমাজের ধারণা, ভোটের মাঠে কৌশলের খেলায় এগিয়ে রয়েছেন শায়খে চরমোনাই।
প্রথমেই তিনি বিশাল শোডাউনের মধ্যদিয়ে প্রচারাভিযান শুরু করেন। যা নগরবাসীকে চমকে দেয়। ওই শোডাউনের পর থেকেই তিনি কর্মি-সমর্থকদের নিয়ে নগরীর ওলি-গলি এমনকি ঘরে ঘরে তার ‘হাতপাখা প্রতীকের দাওয়াত পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক, গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে নগরী জুড়ে হাতপাখার পোস্টার ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। শায়খে চরমোনাইর কুশল বিনিময়কালে ভোটাররা উল্লেখ করেন, সৎ এবং যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের বিকল্প নেই। ফয়জুল করীম ভোটারদের আশ্বস্ত করে বলেন, আমি জনগণের সেবার মধ্যদিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। তিনি আরো বলেন- সিটি কর্পোরেশন এলাকার জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিমুক্ত বরিশাল নগরী গড়ে তোলাই আমার মূল্য লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ।
নির্বাচনের ব্যাপারে নগরীর ২১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ মিজানুর রহমান তালুকদার বলেন- আমরা ঘুষখোর অফিস-আদালত চাই না, বেদায়েতি কাজকর্ম চাই না, সিটি কর্পোরেশনে লিপিষ্টিক মার্কা বে-পর্দা নারীদের দেখতে চাই না। রাস্তা-ঘাটে নির্লজ্জহীন নারীদের চলাফেরা দেখতে চাই না। বরিশাল নগরীকে আমরা সুশৃঙ্খল শহর হিসেবে দেখতে চাই। উন্নয়নমূলক কাজের স্বচ্ছতা দেখতে চাই। আর এ জন্যই দলমত নির্বিশেষে মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই সাহেবকে মূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো ইনশাআল্লাহ।
নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডের জনৈক এক মহিলা বলেন, আমরা বর্ধিত এলাকাবাসী সিটি কর্পোরেশনের সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নির্বাচনের পর কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয় না। বর্ষা মৌসুমে নৌকায় চেপে চলাফেরা করতে হয়। এবারের নির্বাচনে আল্লাহভীরু প্রার্থীকে ভোট দেব।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের বিসিসি নির্বাচনে যেসব ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে- লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের ভেলকিবাজি, মশার উপদ্রব্য বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুসমান জলাবদ্ধতা, নগরী জুড়ে ময়লার দুর্গন্ধে ছয়লাব। আর এসব কারণে নিরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে হাত পাখার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।