আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১২:৪৩ অপরাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
ভূমিকম্প : বিপদ-আপদ মানুষের নিজেদের হাতের উপার্জন

ভূমিকম্প : বিপদ-আপদ মানুষের নিজেদের হাতের উপার্জন

ভূমিকম্প : বিপদ-আপদ মানুষের নিজেদের হাতের উপার্জন

 

ভূমিকম্প : বিপদ-আপদ মানুষের নিজেদের হাতের উপার্জন

বিশেষ প্রতিবেদক ॥

মানুষের চারপাশে ছোট-বড় যা কিছু ঘটে তার অনেক কিছুই মানুষের জন্য আকস্মিক। তা নিয়ন্ত্রণ করা তো দূরের কথা, এ ‘বিজ্ঞানের যুগে’ তার পূর্বাভাসও মানুষের ক্ষমতার বাইরে। একটি, দু’টি বিষয় নয়, মানুষের জীবনের অনেক কিছুই এমন। এ মানুষের দুর্বলতা ও জ্ঞানস্বল্পতার এক দৃষ্টান্ত। মানুষকে তো অতি অস্পষ্ট জ্ঞান দেওয়া হয়েছে আর তাকে সৃষ্টিও করা হয়েছে দুর্বল করে।

কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যিনি এই জগতের স্রষ্টা, এই প্রকৃতি ও প্রকৃতির নিয়মের সৃষ্টিকর্তা, তাঁর কাছে কোনো কিছুই ‘আকস্মিক’ নয়। সবকিছুই তাঁর ইচ্ছাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন। প্রকৃতির যে সূক্ষ্ম ও শক্তিশালী নিয়ম তা তাঁর অসীম জ্ঞান ও কুদরতের প্রমাণ। তাঁর ইচ্ছায় এ নিয়মের গতি ও পরিণতি। সুতরাং জীবন ও জগতে যা কিছু ঘটে তা সেই মহাজ্ঞানী মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। সুতরাং ছোট-বড় সকল ঘটনার বার্তা আল্লাহকে স্মরণ করা এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করা।

কিন্তু যুগ যুগ ধরে মানুষ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। কোরআন মাজীদে খুব পরিষ্কারভাবে এ দুই শ্রেণির মানুষের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের কর্তব্য, কুরআনের আয়নায় নিজেদের দেখে নেওয়া। এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট এবং এতেই পরিতৃপ্ত থাকে এবং যারা আমার নিদর্শনাবলী সম্বন্ধে গাফিল, ওদেরই আবাস অগ্নি, ওদের কৃতকর্মের কারণে। যারা মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণ, তাদের রব তাদের ঈমান হেতু তাদের পথ নির্দেশ করবেন; তাদের (বাসস্থানের ) পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে। (সূরা ইউনুস : ৭-৯)।

তো যারা আখিরাতে বিশ্বাসী নয়, আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা ও ভয় যাদের অন্তরে নেই, যারা পার্থিব জীবনেই তুষ্ট ও নিমগ্ন এদের স্বভাব, আল্লাহ তা’আলার কুদরতের বিভিন্ন নিদর্শন সম্পর্কে উদাসীন থাকা। অর্থাৎ তা থেকে যে শিক্ষাগ্রহণ কাম্য ছিল তা না করা।

পবিত্র কুরআন মাজীদের আরো ইরশাদ আছে : আর আমি তোমার পূর্বেকার জাতিসমূহের কাছে অনেক রাসূল পাঠিয়েছি, (কিন্তু নবীগণকে অমান্য করার কারণে) আমি তাদের প্রতি ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগ-ব্যাধি চাপিয়ে দিয়েছি, যেন তারা নম্রতা প্রকাশ করে আমার সামনে নতি স্বীকার করে। সুতরাং তাদের প্রতি যখন আমার শাস্তি পৌঁছল, তখন তারা কেন নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করল না? বরং তাদের অন্তর আরও কঠিন হয়ে পড়ল, আর শয়তান তাদের কাজকে তাদের চোখের সামনে শোভাময় করে দেখাল।

অতঃপর তাদের যা কিছু উপদেশ ও নসীহত করা হয়েছিল তা যখন তারা ভুলে গেল তখন আমি তাদের জন্যে প্রতিটি বস্তুর দরজা উম্মুক্ত করে দিলাম, শেষ পর্যন্ত যখন তারা তাদেরকে দানকৃত বস্তু লাভ করে খুব আনন্দিত ও উল্লাসিত হলো, তখন হঠাৎ একদিন আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম, আর তারা সেই অবস্থায় নিরাশ হয়ে পড়ল। অতঃপর অত্যাচারী সম্প্রদায়ের মূল শিকড় কেটে ফেলা হলো। (সূরা আনআম : ৪২-৪৫)।

ভূমিকম্প কেন হয়?

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের উপার্জন।’ (সুরা শূরা: ৩০)

বস্তুত সমাজে যখন অন্যায়-পাপাচার, জুলুম নির্যাতন বেড়ে যায়। মানুষ বেপরোয়া হয়ে যায়। আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করে। বান্দার হক নষ্ট করে। তখনই আল্লাহ তায়ালা ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগ দিয়ে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দীর্ঘ হাদিসে ইরশাদ করেন- ১. যখন গণিমতের মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে। ২. আমানতের খেয়ানত করা হবে, ৩. জাকাত আদায়কে জরিমানা মনে করা হবে, ৪. দুনিয়ার স্বার্থের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করা হবে, ৫. পুরুষ স্ত্রীর অনুগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, ৬. বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, আর পিতার সঙ্গে করবে দুর্ব্যবহার, ৭. মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে, ৮. পাপাচারী সমাজের নেতা হবে, ৯. নিম্নশ্রেণির লোকেরা দেশের শাসক হবে, ১০. ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য, ১১. গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের সয়লাব হবে, ১২. প্রকাশ্যে মদপান করা হবে, ১৩. পূর্ববর্তী উম্মতদের (সাহাবা, তাবে-তাবেঈন) প্রতি অভিসম্পাত করা হবে… ওই সময় তোমরা রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (অ্যাসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টি প্রভৃতির জন্য অপেক্ষা করো।

একের পর এক বালা মুসিবতের অপেক্ষা করো যেমন মুক্তার দানা ছিঁড়ে ফেলা হলে তার দানাগুলো একের পর এক পড়ে যায়।(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং- ১২১১)

তাই ভূমিকম্পসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের পাপ বর্জন করতে হবে। অন্যায়ের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দান-সদকার প্রতি অগ্রসর হতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন। -আমিন।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon