আজ শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
শাওয়াল মাসের ছয় রোজার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত

শাওয়াল মাসের ছয় রোজার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত

 

শাওয়াল মাসের ছয় রোজার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত

বিশেষ প্রতিবেদক ॥

আল্লাহ-তা’আলার ইবাদত ও গোলামী করার জন্যই মানুষ ও জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আমি জ্বীন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এ জন্য যে তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে” (সূরা আল-জারিআত- ৫৬)। আল্লাহর কাছে নফল ইবাদত ও নফল সিজদা’র গুরুত্ব অনেক বেশি।

আল্লাহপাক মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধির এক সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম রোজাকে বান্দার জন্য নির্ধারণ করেছেন। রোজা মানুষের গুনাহমাফির মাধ্যমে নিষ্কলুষ ও নির্ভেজাল করে। রোজার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যক্তি যাতে শুধু মাহে রমাদানের ফরজ রোজা রেখে থেমে না যান, বরং তিনি কিভাবে সহজেই পূর্ণ বছরটা মহান আল্লাহ’তায়ালার প্রিয় বান্দা ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে থাকতে পারেন এবং কী করে চিরস্থায়ী জান্নাতের বাসিন্দা হতে পারেন এবং পরকালে তিনি কিভাবে সফলকাম থাকতে পারেন রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতের সামনে এই পথ সুস্পষ্ট করে দিয়ে গেছেন।

ইতোমধ্যেই বিদায় হয়েছে রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজান। এখন মহাবরকতের বারতা নিয়ে চলছে পবিত্র শাওয়াল মাস। রমজানে মাসব্যাপী যারা সিয়াম সাধনা করেছেন তাদের জন্য এ মাসে শুভ সংবাদ রয়েছে। তা হলো- শাওয়াল মাসের ৬ রোজা। হজরত আবু আইউব আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (স.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল এবং এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল’ [মুসলিম]।

হিজরি ১০ম মাস তথা রমজানের পরবর্তী মাস ‘শাওয়াল’। এ মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা সুন্নাত, যদিও তা শরীয়তী পরিভাষায় ‘নফল’ হিসেবে পরিচিত। হাদিস শরীফে এর বহু ফজিলতও বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখলো, এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখলো, সে যেন গোটা বছর রোজা রাখলো” (সহিহ মুসলিম)। হযরত সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রমজানের রোজা দশ মাসের আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দু’মাসের রোজার সমান, সব মিলিয়ে এক বছরের রোজা” (নাসায়ী শরিফ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “রমজান মাসের রোজা হচ্ছে ১০ মাসের সমান। আর ছয় দিনের রোজা হচ্ছে দুই মাসের সমান। এভাবে এক বছরের রোজা হয়ে গেল” (সহিহ ইবনে খুজাইমা)।

উপযুক্ত হাদিসে বলা হয়েছে, রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যাবে। হিসেবটি হলো এরূপ- আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “যে ১টি নেক আমল করবে, সে ১০ গুণ সাওয়াব পাবে” (সূরা আনআম- ১৬০)। আর এ হিসেবে মাহে রমজানের ৩০ টি ফরজ রোজায় ৩০০ রোজার সাওয়াব পাওয়া যাবে (৩০১০=৩০০)।

অন্যদিকে, মাহে শাওয়ালের ৬টি রোজায় ৬০ রোজার সাওয়াব পাওয়া যাবে (৬১০=৬০)। তাহলে দেখা যায়, মাহে রমজানের ৩০ রোজার বিপরীতে ৩০০ রোজা ও মাহে শাওয়ালে ৬ রোজার বিপরীতে ৬০ রোজার সাওয়াব পাওয়া যাচ্ছে, মোট ৩৬০ রোজার সাওয়াব। আমরা জানি, ৩৬০ দিনে হিজরি বা চন্দ্র এক বছর হয়ে থাকে। তাই মাহে রমজানের ৩০ রোজা ও মাহে শাওয়ালে ৬ রোজা আদায় করলে এক বছর রোজার সাওয়াব পাওয়া যায় (সুবহান আল্লাহ)।

শাওয়াল শব্দের বিশ্লেষণ : পবিত্র রমাদানের পরবর্তী মাস এবং চন্দ্র মাসের দশম মাস হচ্ছে শাওয়াল মাস। শাওয়াল শব্দটি ‘শাওলুন’ থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে বের হওয়া। যেহেতু এ মাসে আরববাসী আনন্দ-উল্লাসের জন্য ভ্রমণে বের হয় এজন্য শাওয়ালকে শাওয়াল বলা হয়। (গিয়াসুল্লুগাত-২৮৭)

শাওয়ালের আমল : শাওয়াল মাসে অনেক আমল রয়েছে এসব আমলের ফজিলতও অনেক বেশী। এ মাসের গুরত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে শাওয়ালের ‘ছয় রোজা’। রমজানের ফরজ রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা মুস্তাহাব। আর এ রোজাকে শাওয়ালের ছয় রোজা বলে। এই রোজার অনেক ফজীলত রয়েছে যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুল আকরাম স. নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণকে ও রাখার জন্য নির্দেশ দিতেন।

শাওয়ালের রোযার ফজিলত : এই রোজার ফজীলত সর্ম্পকে রাসুলুল্লাহ (স.) হাদিসের মধ্যে ইরশাদ করেন, “যারা মাহে রমজানের ফরজ রোজা রাখবে, অতপর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে তারা সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব অর্জন করবে। (মুসলিম শরীফ :১ম.খন্ড ৩৬৯পৃ:)

হযরত মুসলিম কারশী রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন একদা আমি রাসুলুল্লাহ স. কে জিজ্ঞেস করলাম সারা বছর রোযা রাখা সর্ম্পকে; রাসুলুল্লাহ সা. বললেন তোমার উপর তোমার পরিবার পরিজনের হক রয়েছে। অতঃএব তুমি রামাদান মাস ও এর পরবর্তী মাস তাতে রোযা রাখবে এবং প্রত্যেক বুধবার, বৃহস্পতি বার রোযা রাখবে। আর যখনই এরূপ করলে যেন সারা বছর রোযা রাখলে। (আবু দাউদ, তিরমিযি: হাদীস নংÑ৭৪৮)

এই হাদিসে বলা হয়েছে যে, রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। এই সওয়াব এভাবে যে, মহান রাব্বুল আলামিন মানবতার মুক্তির সনদ মহা গ্রন্থ আল কুরআন কারীমের সুরায়ে আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, “যে লোক একটি নেক কর্ম আঞ্জাম দিবে সে লোক দশগুণ বেশী সওয়াব পাবে। সে হিসেবে রমজানের ত্রিশ রোজায় তিনশত রোজার সওয়াব হয়। আর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজায় ষাট রোজার সওয়াব হয়। এভাবে রমজানের ৩০ রোজা এবং শাওয়ালের ৬ রোজা মোট ৩৬ রোজা দশ দিয়ে গুণ দিলে ৩৬০ রোজার সমান হয়ে যায়, আর ৩৬০ দিনে এক বছর। সুতরাং ৩৬ টি রোজায় সারা রছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।

একজন মানুষ ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি অধিকহারে নফল ইবাদত-রিয়াজত করতে করতে আল্লাহর বান্দা হতে বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়। নফল ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহ নৈকট্য লাভ করা যায়। হযরত হাসান বসরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সহ বিশ্ব বিখ্যাত যত অলি-বুজুর্গ রয়েছেন, তাদের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তারা প্রচুর পরিমাণে নফল ইবাদতে সময় ব্যয় করেছেন। আর এ কারণেই তাঁরা সকলেই আল্লাহ নিকটবর্তী হয়েছেন। তাদের ইন্তেকালের পরও ভিন্ন দেশ থেকে তাদের আলোচনা করা হচ্ছে। কুরআনুল কারিমে এসেছে, “আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবেন না” (সূরা ইউনুস- ৬২)।

আসুন, মাহে রমজানে সকল রোজা সঠিকভাবে আদায়ের পর মাহে শাওয়ালে ৬টি রোজা রাখার নিয়ত করি। শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখ তথা ঈদুল ফিতর দিবস ব্যতীত শাওয়ালের সকল দিবসের মধ্যে এ নফল রোজা রাখা যাবে। আল্লাহ আমাদের সকলের মাহে রমজানের ফরজ রোজা কবুল করুন ও শাওয়ালের ৬টি রোজা থাকার তাওফিক প্রদান করুন। -ছুম্মা আমিন

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon