আজ শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৮ অপরাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনও সেদেশে আছেন তিনি।
৮ অগাস্ট ক্ষমতা নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই থেকে গত দেড় মাসে শেখ হাসিনার নামে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে অভিযোগের পর অভিযোগ জমা পড়ছে, তবে এখনও কোনোটির বিচার শুরু হয়নি।
এদিকে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের ৪৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তবে ৪৫ দিনের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় তিনি এখন আর ভারতে অবস্থানের কূটনৈতিক দায়মুক্তি পাবেন না। এখন তিনি দিল্লির ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ মোতাবেক ভারতে আছেন। মানবিক কারণ বিবেচনায় তাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত।
শেখ হাসিনা কিসের ভিত্তিতে ভারতে অবস্থান করছেন-সে সম্পর্কে দিল্লির তরফ থেকে প্রকাশ্যে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। যদিও দিল্লি বলছে, ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘আমরা যে সরকার ক্ষমতায় (গভর্নমেন্ট অব দ্য ডে) থাকে, তার সঙ্গে কাজ করি’। শেখ হাসিনা যে ভারতে আছেন, সেটা স্বীকার করলেও কিসের ভিত্তিতে তিনি আছেন সে সম্পর্কে দিল্লির তরফে কিছুই বলা হয়নি।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনা ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে পরিচিত। এ কারণে তাকে মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়েছে বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে। ১৯৫৯ সালে চীন তিব্বত অধিগ্রহণ করলে দালাইলামাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল।
১৯৯২ সালে আফগানিস্তানের ভারতপন্থি নেতা মোহাম্মদ নজিবুল্লাহকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হলে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রিত ছিলেন।
কোন আইনে ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘সবকিছু আইন দিয়ে চলে না’।
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলছেন। এটা অস্বস্তিকর।’ বিষয়টি ভারত সরকারকে অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার সরকারই চুক্তিটি সই করেছিল। এই চুক্তির আওতায় অন্তর্বর্তী সরকার ইচ্ছা করলে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইতে পারে।
ভারত শরণার্থী সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করেনি। তাই শেখ হাসিনা শরণার্থী হিসাবে ভারতে আশ্রয় পাবেন না। তবে ভারত একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে প্রত্যেকটি আলাদা ঘটনা বিচার-বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এখানে মানবিক বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা একটি সামরিক বিমানযোগে দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন।
এদিকে, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেই ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফেরত চাওয়া হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মন্তব্য করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) সন্ধ্যায় ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে বৈঠকের পর আলোচনার বিষয়বস্তু অবহিত করতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আসিফ নজরুল।
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা খুব দ্রুত আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আপনাদের জানাব, ছাত্র-জনতার ‘বিপ্লবকালে’ যে গণহত্যা হয়েছে, যে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে; সেটার বিচারের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি। দৃশ্যমান কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তদন্ত দল, প্রসিকিউশন দল গঠন করা হয়ে গেছে, আদালত পুনর্গঠনের চিন্তা চলছে। অচিরেই দেখবেন, বিচার শুরু হয়েছে।”
“বিচার শুরু হওয়ার পর অবশ্যই আমরা (শেখ হাসিনার) প্রত্যর্পণ চাইব।”
আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী ভারতে যদি কোনো দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি থাকেন, উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোন; আর যাই হোন না কেন, উনার প্রত্যর্পণ আমরা চাইতে পারি।”
তবে কোন স্ট্যাটাসে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা, সে বিষয়ে অবহিত নয় অন্তর্বর্তী সরকার।
১৭ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কীভাবে, কোন ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে’ ভারতের অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে ‘অফিসিয়ালি কিছু জানে না ঢাকা’।
সেদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “না,আমরা অফিসিয়ালি কিছু জানি না। যেটুকু বলেছিলেন তাদের (ভারতের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যে ‘উনি এসেছেন, তাকে খুব তাড়াতাড়ি আশ্রয় দিতে হয়েছে’।”