আজ শুক্রবার, ১৩ Jun ২০২৫, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত এক প্রবাসী বাংলাদেশির একটি ভিডিও ঘিরে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, তিনি মরু অঞ্চলের এক ধরনের সরীসৃপ প্রাণী— ‘সান্ডা’ ধরছেন রান্না করার জন্য এবং সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন সবার সঙ্গে। তার কথার ধরন ও উপস্থাপনার ভঙ্গিমা ভিডিওটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শুরু হয় হাস্যরস ও নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া। ‘সান্ডা’কে ঘিরে তৈরি হচ্ছে অসংখ্য মিম, কৌতুক ও ব্যঙ্গচিত্র। কেউ বলছেন ‘সান্ডা চ্যালেঞ্জ’, কেউ আবার এই প্রাণী খাওয়ার পুষ্টিগুণ নিয়ে মজা করছেন।
প্রশ্নও উঠেছে—এই প্রাণীটি খাওয়া কি ইসলামসম্মত? সান্ডা খাওয়া কি হালাল, না হারাম?
সান্ডা মূলত এক ধরনের মরু অঞ্চলের টিকটিকি, বৈজ্ঞানিকভাবে যাকে বলা হয় ‘Uromastyx’, আর আরবি ভাষায় এর নাম ‘দাব্ব’ (ضبّ)। এটি আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরু অঞ্চলের প্রাণী। এর শরীর শক্ত, লেজ মোটা ও খাঁজযুক্ত, যা আত্মরক্ষায় ব্যবহার হয়। অনেক দেশে এর তেল ব্যবহৃত হয় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়, বিশেষত যৌন শক্তি বৃদ্ধির ওষুধ হিসেবে।
অনেকেই এই ঘটনাকে নিছক বিনোদনের অংশ হিসেবে দেখলেও, কেউ কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন—এই ধরনের কনটেন্টে কী বার্তা যাচ্ছে, তা নিয়ে সচেতন থাকা জরুরি কিনা।
মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির বেদুঈন বা স্থানীয় গোষ্ঠীর কিছু মানুষ সান্ডা শিকার এবং খেয়ে থাকেন। কেউ কেউ সান্ডার বিরিয়ানিও রান্না করেন।
ভারত ও পাকিস্তানে স্থানীয় কিছু জনগোষ্ঠীও সান্ডা শিকার করেন। মুরগীর মাংসের মতো সান্ডার সাদা মাংসের স্বাদ বিবেচিত হয় এবং কিছু হিন্দু জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে এটি একটি সুস্বাদু খাবার। বিশেষ করে লেজের অংশটি খাবারের অন্যতম আগ্রহের কেন্দ্র।
প্রাকৃতিক পরিবেশে সান্ডা বিভিন্ন শিকারী পাখি যেমন, লাগর বাজ ও টনি ঈগলের খাদ্য। মরুভূমির শিয়াল ও সাপরাও এদের গর্তে হানা দেয়।
নবী করিম (স.)-এর সামনে একবার তার সাহাবীরা সান্ডা পরিবেশন করেন। তখন তিনি সেটি খাননি। সে সময় তার সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি এটি খেতে অপছন্দ করেন, এটি হারাম?’
এই প্রশ্নের উত্তরে নবী করিম (স.) বললেন- ‘এটি আমার কওমের খাদ্য নয়, তাই আমি খাই না।’ (সহীহ বুখারী: ৫৫৩৭, সহীহ মুসলিম: ১৯৪৪)
অর্থাৎ, এটি তিনি নিজে না খেলেও সাহাবীদের খেতে মানা করেননি। এমনকি সাহাবীরা তার সামনে এটি খেয়েছেন।
ফকিহ বা ইসলামি আইনবিশারদগণ সান্ডা খাওয়ার বিধানের ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। হানাফি ফকিহদের মতে সান্ডা খাওয়া হারাম। কারণ এটা তাদের দৃষ্টিতে খাবাইস বা নাপাক ও অরুচিকর প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। যেসব হাদিসে সান্ডা খাওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়, সেগুলোকে তারা ইসলামের শুরুর সময়ের ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন—অর্থাৎ, সেই সময়ের, যখন কোরআনের এই আয়াত অবতীর্ণ হয়নি,
وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ
আর তিনি তাদের জন্য অপবিত্র বস্তুসমূহ হারাম করেছেন। (সূরা আ’রাফ: ১৫৭)
অন্যদিকে ইমাম মালেক, শাফেঈ ও আহমদ (রহ.) সান্ডা খাওয়াকে হালাল বলেছেন। তাদের দলিল ওপরে উল্লিখিত হাদিস ও এ ব্যাপারে বর্ণিত অন্যান্য হাদিস।