আজ শুক্রবার, ১৩ Jun ২০২৫, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণে আশার আলো দেখা দিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপজেলা ভোলার মানুষের পাঁচ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের মুখে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভোলা-বরিশাল সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজ আগামী বছরের জানুয়ারিতে শুরুর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মহিউদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (০৮ মে) বিকেলে সেতু বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আয়োজনে ভোলা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী অংশীজনদের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ভোলাবাসীর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মতবিনিময় সভা শেষে এ ঘোষণা দেন।
আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই ১৭ হাজার ৪৬৬.৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হচ্ছে ভোলা-বরিশাল সেতুর কাজ। জাপানি একটি বেসরকারি কোম্পানি এই কাজের ব্যাপারে আগ্রহ প্রাকাশ করছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারীর মধ্যেই ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। সেই লক্ষ নিয়েই ইতোমধ্যে জাপান সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিনসহ সেতু বিভাগের একটি টিম ভোলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাটে থেকে স্পিডবোট যোগে তেঁতুলিয়া ও কালাবদর নদীর সেতুর জায়গা পরিদর্শন করেন।
সেতু বিভাগের সচিব আরো জানান, সরকারের যে কয়টি সেতুর পরিকল্পনা রয়েছে তার মধ্যে প্রথম প্রাধান্য হলো ভোলা-বরিশাল সেতু। আর এটি নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, ভোলা-বরিশাল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ১০ দশমিক ৮৭৬ কিলোমিটার। চার লেনের এ সেতুটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৬ দশমিক ৩২ কোটি টাকা। সেতুর সংযোগ সড়ক হবে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভোলা প্রান্তে ২ দশমিক ৬০ ও বরিশাল প্রান্তে ২দশমিক ৯০ কিলোমিটার। সেতুটি নির্মাণে ৫০৭ দশমিক ৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। বরিশালের লাহার থেকে ভোলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাটে এসে শেষ হবে সেতু। মাঝে শ্রীপুরসহ এ সকল চরাঞ্চলের ১৮ কিলোমিটার নদী শাসন করা হবে। ২০২৬ সালে সেতুটির কাজ শুরু হয়ে ২০৩৩ সালে শেষ হবে। বাংলাদেশ সরকারের সেতু মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটিই এখন অগ্রাধিকারে রয়েছে।
শুধু ভোলা-বরিশাল সেতু নয়, ভোলা-লক্ষ্মীপুর সেতু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সেতু সচিব। জাপানি কোম্পানি তো সেতু নির্মাণ করবেই, এরপরও যদি কোনা কারণে সেটি মিস হয় তাহলে কোরিয়ান সরকারের অর্থনৈতিক সহযোগিতায় এটি করা হবে। সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সেখান থেকেও যদি না হয় তাহলে সরকারি অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা হবে।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন জানান, ভোলা-বরিশাল সেতু বর্তমানে সরকারের প্রথম প্রাধান্য। আমরা আগামী জানুয়ারীর কথা বলছি কাজ শুরু হবে। হয়ত এর আগেও হতে পারে আবার কিছুদিন পরেও হতে পারে। তবে এতটুকু নিশ্চিত এটা হবে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভোলার পুলিশ সুপার মো. শরীফুল হক, ভোলার নৌ কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মো. শরীফ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর, সদস্য সচিব রাইসুল আলম, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা হারুন অর রশিদ, জাতীয় পার্টির (বিজেপি) জেলা সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন, ইসলামী আন্দোলন ভোলা জেলা উত্তরের সেক্রেটারি মাওলানা তরিকুল ইসলাম, হেফাজত ইসলাম ভোলা জেলার যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মিজানুর রহমান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক, ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষক নাজমুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন শাহিন, ভোলা থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তালহা তালুকদার বাঁধন, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল আমিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা শরীফ হাওলাদার সাগর, ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্র প্রতিনিধি মো. রাহিম ইসলাম প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির কাছে ভোলায় চলমান পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন বক্তারা। এ সময় ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস, মেডিকেল কলেজ, ভোলা-বরিশাল সেতু, গ্যাস ভিত্তিক শিল্পকারখানা, বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ছাত্রজনতা জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সকল দাবি নিয়ে তারা গত ১৯ এপ্রিল থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বর্তমানেও তাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন ও সেতু সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ। তারা বলেছেন, এ সকল দাবিগুলো প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তুলে ধরবেন। এদিকে মতবিনিময় সভা চলা কালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন কারিরা নানা স্লোগান দিয়ে ভোলার মানুষের ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন।
এদিকে এলাকাবাসী মনে করছেন, বরিশাল-ভোলা সেতু বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে ভোলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের ফলে সময় ও ব্যয় কমে আসবে, বাণিজ্য ও পর্যটনে আসবে গতি।