আজ বুধবার, ১৬ Jul ২০২৫, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
মধ্যপ্রাচ্যের দুর্বৃত্ত ইসরাইলকে আর চেনার উপায় নেই। আকাশছোঁয়া অহংকারে নাক উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পশ্চিমা ফ্যাশনের অভিজাত প্রাসাদগুলো এখন জাত হারিয়ে দুর্ভিক্ষের কাঙাল। হাড়গুলো পর্যন্ত গোনা যাচ্ছে। কর্পূরের মতোই চোখের পলকে উড়ে গেছে কদিন আগের সেই ‘পাঁচতারা’ জৌলুশ। ছাল-চামড়া ছিটকে জীর্ণ পোড়াবাড়ির হাল। ‘কোমর-গর্দানে’ বজ ঝাঁকুনিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে আরব মুল্লুকে যুক্তরাষ্ট্রের ভাড়াটে গুন্ডা এই ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের’ সুরম্য ভবনগুলো। ঠিক যেন গাজার মতো- ধ্বংসাবশেষের উপত্যকা। চোখ খুললেই বিধ্বস্ত জনপদ। ডানে-বামে, সামনে-পেছনে কেবলই ভাঙা অট্টালিকা। ইট-পাথরের মরুভূমি। বাস্তুহারা সেই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের দশা এবার ইসরাইলের বেশ কয়েকটি শহরেও। রাখঢাক ভেঙে রোববার জেরুজালেম পোস্টের খবরেও বলা হয়েছে, শত শত মানুষের মানুষের মাথার ছাদ উড়ে গেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ধামাকায়।
ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে এখন মহাবিপদে কট্টর ইসলামবিদ্বেষী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দেশ ইসরাইল। গাজায় মুসলিম নিধনকারী গণহত্যাকারী দেশটি এখন রীতিমতো ফিলিস্তিনের মতই জ্বলছে ইরানের মুহুর্মুহু সব ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে বেশকিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ইসরাইলের, যেখানে দেখা যায় চারিদিকে সাইরেন বাজছে আর ইসরাইলের ইহুদিরা বেশ আতঙ্কিত অবস্থায় হামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। শেষমেশ তারা আশ্রয় নিয়েছে একটি হাসপাতালের বেসমেন্টে।
এতদিন যে চিত্র নিয়মিত ছিলো গাজার বাসিন্দাদের জন্য আজ তা বিপরীতমুখী হয়ে ইসরাইলের দিকেই পতিত হয়েছে। প্রকৃতির প্রতিশোধ যেনো এবার হারে হারে টের পাচ্ছেন কট্টোর ইসলামবিদ্বেষী ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গত কয়েকদিনে ইরানের ছোড়া ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০ জন ইসরাইলি নাগরিক, আহত হয়েছেন কয়েকশ’ মানুষ। যদিও নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য মতে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। নিহতের সংখ্যা কোনোভাবেই ৫০০-এর কম নয় আর আহতের সংখ্যাও চার হাজারের ওপরে বলে দাবি সূত্রের।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নিহত-আহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ পেলে বিশ্বজুড়ে ইসরাইলের যে দাপট তা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কায় কমিয়ে দেখানো হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ইসরাইলের বিভিন্ন শহরের সাধারণ মানুষ বেসমেন্ট ও বোম শেল্টারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দে একটু পরপরই কেঁপে উঠছে ঘরবাড়ি। রাজধানী তেল আবিব, হাইফা, পেতাহ তিকভা ও বাতে ইয়ামের মতো শহরগুলোতে মানুষজনকে দ্রুত বেসমেন্টে ছুটে যেতে দেখা যাচ্ছে। বিস্ফোরণের শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে মানুষজন দৌঁড়ে নিচতলায় বা বোম শেল্টারে আশ্রয় নিচ্ছে। একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী তার সন্তানকে কোলে নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। অপর এক ভিডিওতে একটি পরিবারকে কম আলোযুক্ত বেসমেন্টে বসে থাকতে দেখা যায়, চারপাশে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।
ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকলেও এখনো সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়নি তারা। তবে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের সংঘাতে টেনে আনতে চাইছে ইসরায়েল। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি মনে করেন, এটা ইসরায়েলের দুর্বলতার লক্ষণ।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে খামেনি বলেন, ‘ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার আমেরিকান বন্ধুদের দৃশ্যপটে প্রবেশ করা ও তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) এ ধরনের (যুদ্ধে জড়ানোর) কথা বলা; সেই (ইসরায়েলি) শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা এবং অক্ষমতার লক্ষণ।’
ইসরায়েল ও ইরানের চলমান সংঘাতের মধ্যে একটি প্রশ্নই সবচেয়ে বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে, ‘এই সংঘাতে কি সরাসরি জড়িয়ে পড়বেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প?’ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত দিলেও ট্রাম্পের বক্তব্যে এখনো কোনো কিছু স্পষ্ট নয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য আহ্বান জানিয়েছে, যুদ্ধে না জড়াতে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধ বেড়ে যাওয়ার বড় রকমের ঝুঁকি আছে।’ তিনি ইসরায়েল ও ইরান, দুই পক্ষকেই কূটনৈতিক পথ খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন। স্টারমার বলেছেন, ‘এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে এবং আমার মতে, এটিই (আলোচনা) এই সমস্যা সমাধানের উপায়।’
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে কি না, সে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংরুম থেকে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কথা পাঠ করেন তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট।
তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, তেহরান টাইমস, টাইমস অব ইসরাইল, তাসনিম, রয়টার্স।