আজ বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
বাউফলের সন্তান পুলিশ সদস্যের রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ‘রহস্যজনক’ মৃত্যু জুলাই আন্দোলনে শহীদ বাবার কবরের পাশেই মেয়ে লামিয়া সমাহিত শহীদ কন্যা লামিয়ার দাদার বিলাপ ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে, যুদ্ধের প্রস্তুতি পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস’র যোগদান ভয়াবহ দাবানলের কবলে ইসরাইল : আহত ৯, পুড়ছে ২৫০০ একর জমি ইউএনও রাসেলের পক্ষে সাফাই গাইতে মানববন্ধনের প্রস্তুতি জনপ্রিয়তা বাড়ছে, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে তারেক রহমান : দ্য উইক ম্যাগাজিন টিপুর জামিন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রথম বিজয় : বিএমএসএফ শিগগিরই অবৈধ সকল সরকারি ভূমি দখলমুক্ত করা হবে
খরচ ও সময় বাঁচাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের

খরচ ও সময় বাঁচাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের

ফাইল ছবি

খরচ ও সময় বাঁচাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের

পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥

আগামী জুনের মধ্যে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে বলে মনে করছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া খরচ ও সময় বাঁচাতে কমিশন স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন একই দিনে করার প্রস্তাব করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়া স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে দেশে কার্যত কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নেই। এই মুহূর্তে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব। কমিশনের মতে, বর্তমানে নতুন একটি স্বচ্ছ ক্যানভাসে নতুন ছবি আঁকা সম্ভব। নতুবা নির্বাচনের আগে অনেক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আইনি জটিলতার উদ্ভব হতে পারে।

সুপারিশে আরও বলা হয়, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সংসদীয় পদ্ধতি চালু করার আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে জনপরিসরে থাকলেও কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। এখন সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী মার্চ অথবা এপ্রিলের মধ্যে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি একীভূত স্থানীয় সরকার আইন প্রণয়ন করে আগামী জুনের মধ্যে সমতল ও পাহাড়ের সব ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশন এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজ এপ্রিলের আগে শেষ করতে পারে। তবে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হলেই তা সম্ভব হবে।

সংস্কার কমিশন বলছে, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া সারা দেশে স্থানীয় সরকারের পাঁচটি মৌলিক আইন রয়েছে, যথা ‘ইউনিয়ন পরিষদ আইন’, ‘উপজেলা পরিষদ আইন’, ‘জেলা পরিষদ আইন’, ‘পৌরসভা আইন’ ও ‘সিটি করপোরেশন আইন’। আইনগুলো ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ কাঠামো অসামঞ্জস্যপূর্ণ। গ্রামীণ স্থানীয় সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে তিনটি পৃথক আইনের বদলে একটি একক আইন ও নগর স্থানীয় সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান যথা পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনকে আরেকটি একক আইনের অধীনে এনে কাঠামোগত সামঞ্জস্য বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে সুপারিশে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন দুটি আইন করা হলে ওই আইনের ক্ষমতাবলে পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো হবে একই ধাঁচের সংসদীয় পদ্ধতির। ফলে দেশের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তথা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানে পাঁচ বছরে মাত্র একবার সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই মাস সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। এতে করে নির্বাচন ব্যবস্থাটিও ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী হবে।

সংস্কার কমিশন বলছে, অভিন্ন বা সমন্বিত দুটি স্থানীয় সরকার আইনের খসড়া এ কমিশন প্রস্তাব আকারে পেশ করছে; যা অন্তর্র্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ আকারে প্রণয়ন করতে পারে অথবা পরে নির্বাচিত সরকার আইন আকারে প্রণয়ন করতে পারে। সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্য ও সেবা প্রয়োজন অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন থাকবে। কার্য ও সেবা, মূল পরিষদের বিধানিক ও নির্বাহী কার্যক্রম, স্থায়ী কমিটির কার্যক্রম, জনবল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে বর্তমান বিধিগুলো পর্যালোচনা করে নতুন আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে নতুন বিধি প্রণয়ন করা প্রয়োজন হবে। বিশেষজ্ঞ-সংবলিত স্থানীয় সরকার কমিশন এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে এবং মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সদস্য, নারী সদস্য ও চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হলেও উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ আসনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী আসনের ভিন্ন পদধারী তিনজন একই আকারের নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। আবার জাতীয় সংসদ সদস্যেরও নির্বাচনী এলাকা প্রায় ক্ষেত্রে অভিন্ন। এই চার প্রতিনিধির মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত তাই অনিবার্য হয়ে ওঠে বলে মনে করছে সংস্কার কমিশন। তাদের সুপারিশে বলা হয়েছে, এখানে নির্বাচনব্যবস্থা ও এখতিয়ারের ক্ষেত্র পরিবর্তন প্রয়োজন। অন্যদিকে জেলা পরিষদে জনগণের ভোট দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আকার ও ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন প্রায় অসম্ভব, সে ক্ষেত্রে ওয়ার্ড সদস্যদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বর্তমানে জেলা ও উপজেলায় কোনো ওয়ার্ড নেই। উপজেলায় নারী সদস্য নির্বাচনের বিধান থাকলেও তা অকার্যকর। তাই ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় প্রত্যক্ষ ভোটে ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচনের বিধান প্রস্তাব করা হলো।

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয় কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসন পদ্ধতি পরিবর্তন করে পুরো পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ ওয়ার্ড (একক আসন) ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে পুনর্গঠন করা যেতে পারে। প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় প্রতিটি পরিষদে ও কাউন্সিলে ওয়ার্ডের এক-তৃতীয়াংশ প্রতি নির্বাচনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা হবে। প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকারের নতুন কাঠামো অনুযায়ী, সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান ও মেয়র কাউন্সিলের নির্বাহী পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ সদস্যপদ লাভ করবেন।

গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনসহ আরও পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্র্বর্তী সরকার। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালীও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে এ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই অধ্যাপকের নেতৃত্বে কাজ করেছেন সাত সদস্য।

স্থানীয় সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনের মুখবন্ধে বলা হয়েছে, কমিশন গঠনের পরপরই এ এম এম নাসির উদ্দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এই কমিশন কাজ শুরু করেছে গেল বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে। কাজের জন্য ১৫টি ক্ষেত্র নির্ধারণ করে প্রতিবেদনের কাঠামো গঠন করা হয়। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চূড়ান্তে আরও সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন কমিশন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান স্থানীয় সরকারকাঠামো গণতান্ত্রিক ক্ষমতা চর্চার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত না হওয়ায় একদিকে যোগ্য নেতৃত্ব বিকাশে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারছে না, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগতভাবে যথাযথ ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে পড়ছে এক ব্যক্তি অর্থাৎ চেয়ারম্যান বা মেয়র-সর্বস্ব। আর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ওপর একদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশাসনিক নজরদারি, অন্যদিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ দিন দিন বাড়ছে। মেয়র ও চেয়ারম্যানের নির্বাচন হয়ে পড়ছে অতিমাত্রায় ব্যয়বহুল, আর সদস্য ও কাউন্সিলরের নির্বাচন হয়ে পড়ছে সম্পূর্ণভাবে গুরুত্বহীন। তাই আমাদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাঠামো সংস্কার করে নির্বাচন পদ্ধতির সহজীকরণ এবং সাংগঠনিক কাঠামোকে ভারসাম্যপূর্ণ করা প্রয়োজন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার অক্টোবরে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রের ছয়টি খাত সংস্কারে কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হয় ৫ ফেব্রুয়ারি।

দ্বিতীয় ধাপে গঠিত পাঁচ কমিশনের মধ্যে ‘স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের’ প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা পড়ায় বাকি থাকল গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদন।

এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ বিবেচনা ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তির সঙ্গে আলোচনা করবে এই কমিশন। এর মধ্যে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ড. ইউনূস।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon