আজ শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক॥
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে বিরোধী দলগুলোর সাথে সংলাপের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ”যেদিন ট্রাম্প আর বাইডেন ডায়ালগ করবে, সেদিন আমিও ডায়ালগ করব।” মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর, ২০২৩) বিকেলে বেলজিয়াম সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে যোগদানের জন্য ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর এই সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকালের দিকে নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক শেষে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের সব পক্ষকে শর্তহীন সংলাপে বসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে পিটার হাসের এমন বক্তব্য উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “যারা খুন করছে তাদের সাথে ডায়লগ করতে বলে, ট্রাম্প সাহেবের সাথে কী বাইডেন ডায়লগ করছে? যেদিন ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন ডায়লগ করবে, সেদিন আমিও ডায়ালগ করবো।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং কেউ তা ঠেকাতে পারবে না। তিনি আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত চক্রের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকার কেমন এ বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী সংসদীয় নির্বাচনের নিয়ম ব্যাখ্যা করেন। এবং বলেন, নির্বাচন চলাকালে এখন যারা দায়িত্বে আছেন তারাই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। যাতে সরকার অচল হয়ে না যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরপিও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর মনোনয়ন জমা দেয়ার এবং মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় ঠিক করে দেয় নির্বাচন কমিশন। এরপর প্রতীক বরাদ্দ হয়। তারপর থেকে শুরু হয় নির্বাচনী প্রচারণার কাজ। তখন থেকে মন্ত্রীরা সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা বা ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থাৎ তখন থেকে একজন প্রার্থী হিসেবে তাদের ভোট চাইতে হবে।
নির্বাচিত হওয়ার পর এমপিরা শপথ নেন। প্রথম সংসদ অধিবেশন বসার পর থেকে নতুন এমপিদের সময়কাল শুরু হয়। তবে নতুন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত সরকারি রুটিন অনুযায়ী সব কাজ চলবে। অর্থাৎ এখন যারা দায়িত্বে আছেন তারাই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে সেখানে এভাবেই চলে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, “২০১৮-তে সেভাবেই হয়েছে। ২০১৪-তে আমি কিছু মন্ত্রী অন্যান্য দল থেকে নিয়োগ করেছিলাম। ১৮-তে আর সেই পদ্ধতি করি নাই।”
অতীতে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় বিভিন্ন দলের নেতাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে সরকারে তেমন বড় কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। এবারো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার আকার ছোট হবে নাকি বড় সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আকার ছোট করলে সমস্যা হয়। ২০১৪ সালে দেখা গেছে অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ আর হয় না। কাজগুলো যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে আমাদের সেটাই প্রচেষ্টা।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে বিএনপির সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নিন্দা করেন, যাতে একজন পুলিশ কনস্টেবলকে নির্মমভাবে হত্যা এবং অন্যান্য পুলিশ সদস্য এবং ৪৫ জন সাংবাদিককে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) পুলিশ হাসপাতালেও হামলা করেছে এবং সেখানেও ইসরাইলিদের মতো (ফিলিস্তিনের ওপর হামলা) মানুষ হত্যা করেছে।’ ‘বিএনপি ও ইসরায়েলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই কারণ হামলার বর্বরতা একই ছিল,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশকে হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। আমি বলব এসব কাজ থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত। এতে রাজনৈতিকভাবে তাদেরই ক্ষতি হচ্ছে।’ তিনি বলেন, আর নির্বাচনের ব্যাপারে যেটা আমার ধারণা, এরা আসলে নির্বাচন চায় না। এরা একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরী করতে চায়। তিনি এসব সন্ত্রাসিদের উচিত শিক্ষা দেয়াও প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।
বিশেষ ট্রাইব্যুনালের অধীনে তাদের বিচারের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনার জন্য আমরা আলোচনা করব। তিনি বলেন, ‘তারা জঘন্য কাজ বন্ধ না করলে তাদের এই ধরনের অপরাধমূলক কাজের পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসিদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের সঙ্গে আমরা যতই ভাল ব্যবহার করি না কেন এদের কখনই স্বভাব বদলাবে না। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদে এরা বিশ্বাস করে। কারণ, অবৈধভাবে অস্ত্রহাতে ক্ষমতা দখলকারির হাতে এদের জন্ম। কাজেই এরা ঐটাই (সন্ত্রাস) ভাল বোঝে, আর কিছু নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে মানুষকে কষ্ট দেয়াটাই এদের চরিত্র। কাজেই এখানে আমার বলার কিছু নেই, আন্তর্জাতিকভাবে যেখানেই গিয়েছি সকলেই বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। একমাত্র দুঃখে পড়েছে বিএনপি আর জামায়াত জোট। তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে একটি সন্ত্রাসি সংগঠন। সেই সন্ত্রাসিদের কিভাবে শিক্ষা দিতে হবে সেই শিক্ষাটাই এখন আমাদের দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আর সেটাই আমরা দেব। এদের জন্য এই দেশটা ধ্বংস হোক সেটা সহ্য করা যাবে না। বিএনপি’র সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবহন মালিকদের ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের মত তাঁর সরকার সহযোগিতা করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর লিখিত ভাষণে তাঁর ব্রাসেলস সফরকে ‘অত্যন্ত সফল’ উল্লেখ করে বলেন, “এই সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে অংশীদারিত্ব একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী জাফরুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিএনপি’র সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও প্রকাশ্যে পিটিয়ে পুলিশ হত্যার ভিডিও ফুটেজও প্রদর্শিত হয়।
‘শঠের সঙ্গে শঠের মতো আচরণ করতে হবে’, এমনটা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তারা (বিএনপি) এখানে সেখানে চোরাপথে গিয়ে একেকটা গাড়ি পোড়াচ্ছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে ও গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তি দেয়া হবে। আর যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, আমার তো মনে হয় যে গাড়ি পোড়াবে আর যে ধরা পড়বে, তার হাতও ওই আগুন দিয়ে পোড়ায়ে দেওয়া উচিত। তাহলে তাদের শিক্ষা হবে, না হলে শিক্ষা হবে না।
২৮ অক্টোবর বা পরবর্তীতে যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু অপরাধী জামিন পেয়ে ছুটে এসেছে। জামিন পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেহেতু এরা জামিন পেয়ে গেছে, এরা অপরাধ করছে। এদের দ্রুত সাজা দিয়ে শিক্ষা দেয়া উচিত। এভাবে আগুন লাগাবে আর মানুষের ক্ষতি করবে এটা কখনও মেনে নেয়া যায় না।
এ সময় দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দেশবাসীকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানাই। যারা এসব অগ্নিসন্ত্রাস করছে তাদের ধরিয়ে দিন। এর আগে তারা যখন শুরু করেছে তখনও মানুষ ঠেকিয়েছে। এবারও মানুষই ঠেকাবে।
২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনায় সরকারের পক্ষে গেল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাভ-লোকসানের ব্যাপার না। মানুষকে হত্যা করছে, মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। বরং আমাদের লাভ-লোকসান না জিজ্ঞেস করে বিএনপিকে জিজ্ঞেস করা দরকার- তারা যে গুন্ডামি-সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে তাতে তারা কতটুকু লাভবান হচ্ছে? এটা আপনারা (প্রশ্ন করা সাংবাদিককে প্রধানমন্ত্রী) বরং বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করুন, এসব করে তারা কী অর্জন করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা পরিচয়ে মিয়ান আরাফি নামে এক ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির পল্টন কার্যালয়ে যান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। এসময় সংঘর্ষে আহত বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ওই ব্যক্তি। এসময় ওই ব্যক্তি ভিসানীতির ব্যাপারেও কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকেও ছাড়া হবে না। তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যে যতই বড় হোন না কেন আইন সবার জন্য সমান। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়দানকারী জিজ্ঞাসাবাদে তো সব সত্য বলে দিয়েছেন। বিএনপি বিভ্রান্তি ছড়াতে তাকে যে ভাড়া করে এনেছিল, সে যে ভাড়াটে- তাও বলে দিয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিএনপি তাদের ইমেজ বাড়ানোর জন্য ভাড়াটে লোক নিয়ে এসেছিল।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সংলাপের ওপর জোর দেওয়া সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ করবো? বিরোধী দল কে? সংসদীয় পদ্ধতিতে বিরোধী দলের সংজ্ঞা আছে। সংসদে যাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে, তারাই প্রকৃত বিরোধী দল। এর বাইরে বিরোধী দল গণ্য হয় না, আমেরিকাতেও হয় না। তাহলে কার সঙ্গে সংলাপ করবো? খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ? তিনি বলেন, আজকে যখন এত সন্ত্রাস হলো এত সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হল, তারা চুপ কেন? আমাদেরতো মেরেছেই, এই পুলিশকে পিটিয়ে মারলো।
ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে বাইডেন কী সংলাপ করছে? ট্রাম্প বাইডেনের সংলাপের দিন আমরাও সংলাপ করবো। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে। যেটুকু অর্জন করেছিল তারা আমরাই সুযোগ দিয়েছিলাম সেটা তারা হারিয়েছে। এখন মানুষের কাছে তারা ঘৃণার পাত্র।
রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা আনার এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আবারো নির্বাচন প্রসঙ্গে দৃঢ় কন্ঠে বলেন, নির্বাচন হবে এবং সময় মতই হবে। কে চোখ রাঙ্গালো আর চোখ বাঁকালো সেটা নিয়ে আমরা পরোয়া করি না। কারণ অনেক সংগ্রাম করে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেই আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আর গণতন্ত্র থাকলে নির্বাচিত সরকার থাকলে আর বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের উন্নতি হয় সেটাতো নিশ্চয়ই আপনারা সবাই বিশ^াস করেন।
গার্মেন্টেসে আগুন দেয়ার কঠোর নিন্দা জানিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনার পর্যায়ে হঠাৎ তাদের মাঠে নামানো এবং জ্বালাও-পোড়াও, কোন কোন কারখানায় আগুন দেয়া, যে কারখানা থেকে রুটি রুজি আসে সেই কারখানায়। সেই কারখানা ধ্বংস করলে রুটি রুজিটা আসবে কোথা থেকে, চাকরিটা আর থাকবে কিভাবে? গ্রামেই ফিরে যেতে হবে। এটাতো বাস্তবতা। সেখানেও দুটি জীবন ঝরে গেছে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কেননা তারা যখন দাবি করেছে আমাদের শ্রম মন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছে এবং আলোচনা চলছে। সেখানে সিদ্ধান্ত ছিল এই ডিসেম্বর মাস থেকেই মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থাটা করে দেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর টানা তিন মেয়াদে তিনদফায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করে ১৬শ’ টাকা থেকে ৮ হাজার ৩শ’ টাকা করেছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের বাচ্চাদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা, টিফিনের ভাতা, মাতৃত্বকালিন ছুটি প্রতিটি গামেন্টস ইন্ডাস্ট্রিকে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্তাসহ আন্তর্জাতিকমানের গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি হিসেবেই সরকার প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে। এমনকি করোনার সময় যখন মালিকরা বেতন দিতে পারছিল না তখন সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি গার্মেন্টস কর্মীর নিকট মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি সরকার বেতন পৌঁছে দিয়েছে। পাশাপাশি মালিকদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হয়।
বৈশ্বিক মন্দার কারণে মূল্যস্ফীতিতে জিনিসের দাম বাড়ার বিষয়টির উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা সমগ্র বিশ^ব্যাপীই হয়েছে কেবল বাংলাদেশে নয়। যদিও বাংলাদেশে যে টাকায় খাদ্য কিনে খাওয়া যায় বিশ্বের অনেক দেশে অবস্থা আরো খারাপ। তাঁর সরকারের ভিজিডি ও ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা এবং ১ কোটি মানুষের খাদ্য সহায়তায় পারিবারিক কার্ড করে দেওয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের রেশন দেয়ার জন্য মালিকদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকারের কলেবর যা আছে তাই থাকার ইঙ্গিত দিয়ে এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আরপিও অনুযায়ী যখনই নির্বাচনীর তারিখ ঘোষণা হবে এবং নমিনেশন সাবমিট করা হবে তখন থেকেই মন্ত্রীরা আর কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। তখন একজন প্রার্থী হিসেবে তাদেরকে ভোট চাইতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় কোনো মন্ত্রী তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো রকম সরকারি সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। এটাই নিয়ম। কিন্তু সরকার তো থেমে থাকবে না। সরকারি দৈনন্দিন যে কাজগুলো (রুটিন ওয়ার্ক) সেগুলো কিন্তু করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আকার ছোট করলে অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ আর হয় না। সেগুলো বাধাগ্রস্ত হয়। সেগুলো যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, উন্নয়নের ধারা যাতে অব্যাহত থাকে আমাদের সেটাই প্রচেষ্টা।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েল যেভাবে হামলা করছে ২৮ অক্টোবরে ঢাকায় হওয়া হামলার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি নিয়ে বিএনপি কেন কথা বলে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সরকারপ্রধান। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, গাজায় যেমন ইসরায়েল হাসপাতালে হামলা করল বিএনপি একই কায়দায় পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। মনে হয়, ইসরায়েল আর ওদের মধ্যে ভালো একটা সমঝোতা আছে। ঠিক একইভাবে ওখানেও শিশু-নারী হত্যা। এরাও এখানে পুলিশ হত্যা করছে। আমি কোনো তফাৎ দেখি না।
তিনি বলেন, বিএনপি বা জামায়েত এরা কিন্তু এখন পর্যন্ত টু শব্দ করছে না। অথচ আমরা সবসময় কিন্তু ফিলিস্তিনের সঙ্গে আছি। তাদের জনগণের সঙ্গে সবসময় আছি। আমি আন্তর্জাতিকভাবে যেখানে যাই তাদের কথা বলি। তাদের ন্যায্য অধিকার কিন্তু ফেরত দিতে হবে, এটাই আমরা চাই। সংসদে আমরা ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিন্দা প্রস্তাব নিয়েছি।
তিনি বলেন, আবার যারা ইসলামিভাব ধরে তারাও টু শব্দ করছে না। কাদের স্বার্থে? সেটা আমারও প্রশ্ন। বিএনপি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না কেন? তিনি বিএনপি’ জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাস, পুলিশ হত্যা ও সাংবাদিক নির্যাতন এবং ফিলিস্তিনে নারী শিশু হত্যাতে কথা না বলায় দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেনী এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মানবাধিকার সংস্থাগুলোরও সমালোচনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস যদি আপনারা দেখেন ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠনের পর থেকে আজকে ২০২৩ সালে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এটাতো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর ব্যবস্থা করে ভূমিহীনদের ঘরবাড়ি করে দেয়ার মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা তাঁর সরকার করে দিয়েছে।