আজ বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন

Logo
ধ্বংসস্তূপে পরিণত ৩২ নম্বর বাড়ি, সকালেও চলছে গুঁড়িয়ে দেবার কাজ

ধ্বংসস্তূপে পরিণত ৩২ নম্বর বাড়ি, সকালেও চলছে গুঁড়িয়ে দেবার কাজ

ধ্বংসস্তূপে পরিণত ৩২ নম্বর বাড়ি, সকালেও চলছে গুঁড়িয়ে দেবার কাজ

পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥

রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সকালেও শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙা চলছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভাঙতে দেখা গেছে। বাড়ির সামনের অংশে তিনতলা পর্যন্ত অনেকটাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভারত থেকে শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের প্রতিবাদে বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) রাত ৮টার পর থেকেই বিপুলসংখ্যক মানুষ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হয়।

সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে ছাত্র-জনতা। লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে যোগ দেয় অনেকে। কেউ কেউ বাড়ির দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করে।

জানালার গ্রিল, কাঠ ও ফটকের অংশ ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা যায় কাউকে কাউকে। এ সময় ভেতর থেকে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘স্বৈরাচারের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’—এসব স্লোগানের পাশাপাশি ‘দিল্লি না ঢাকা, আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগানও শোনা যায়।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিন শেখ মুজিবুর রহমানের এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। গতকাল ব্যাপক ভাঙচুরের পর ভেতরে পোড়ার মতো যা কিছু আছে, তাতে আবারও আগুন দেওয়া হয়।

এ সময় নারকেলগাছের পাতাও জ্বলতে দেখা যায়। আগুন জ্বলতে দেখা যায় ৩২ নম্বরের ওই বাড়ির পাশের একটি ভবনেও।

ঐতিহাসিক এই বাড়ি ঘিরে মানুষের বিক্ষোভের মধ্যে রাত পৌনে ১১টার দিকে সেখানে বুলডোজার-ক্রেন পৌঁছে। মানুষের উল্লাসধ্বনির মধ্যে সেটি মূল সড়ক থেকে ৩২ নম্বরের সড়কে ঢোকে। বুলডোজারের ওপরে উঠে স্লোগান দিতে থাকে অনেকে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে ৩২ নম্বর বাড়ির উল্টো পাশে খোলা জায়গায় প্রজেক্টরে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হচ্ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই আয়োজন করে। সেখানে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, ‘আমরা আন্দোলনের প্রামাণ্যচিত্র দেখাচ্ছি। আপনাদের যাদের ভাঙার ইচ্ছা আছে, তারা সামনে গিয়ে ভেঙে আসেন। এখানে যারা প্রামাণ্যচিত্র দেখতে চান, তাদের সুযোগ দিন।’

শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হয় গতকাল। আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেওয়া হয়, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে, যারা গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়।

সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’ পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে।’

এর আগেই গতকাল বিকেলে আলোচিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমণ্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন। একটি ফটোকার্ডও শেয়ার করেন তারা। তাতে বলা হয়, ‘হাজারো ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আজ (বুধবার) রাত ৯টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের এই তিনতলা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এই বাড়িতে থেকেই তিনি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, একাত্তরের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলনসহ বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী এই বাড়ি। এই বাড়ি থেকেই একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে এই বাড়িতেই সপরিবারে তাঁকে হত্যা করা হয়।

১৯৮১ সালে তার মেয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে শুরুতে তাকে ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে ওই বছরের ১০ জুন ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার পর শেখ হাসিনা বাড়ির মালিকানা পান। তবে তিনি সেখানে থাকেননি। শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে এবং নাম দেয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর থেকে বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত ছিল।

এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া নিয়ে ফেসবুকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচি।

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের কথা ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। রাত ৯টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে কর্মসূচি বদলে রাত ৮টায় নিয়ে আসা হয়।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon