আজ শুক্রবার, ১৩ Jun ২০২৫, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণতে হয়েছে। এর প্রভাবে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে। আর বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালে বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় বাতাস।
বর্ষার এমন মন খারাপের দিনে ঘর থেকে বের হওয়াটাও মুশকিল। চাকরিজীবীসহ কর্মজীবী মানুষের গন্তব্যে পৌঁছাতেও বেগ পেতে হচ্ছে।
সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে করে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলের অনেক জনপদে পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।
বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের জল অনুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর ১২টি পয়েন্টের মধ্যে ৬টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য নদীগুলোর পানিও বিপৎসীমার কাছাকাছি। এর মধ্যে বিষখালী নদীর পানি বরগুনা সদর উপজেলা পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটা উপজেলা পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার, বেতাগী উপজেলা পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার, ভোলা জেলায় মেঘনা নদীর তজুমদ্দিন উপজেলা পয়েন্টে ৬৭ সেন্টিমিটার, পিরোজপুর সদর উপজেলার বলেশ্বর নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার, উমেদপুর পয়েন্টে কঁচা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় তেঁতুলিয়া নদী, বরিশালের কীর্তনখোলা, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা পয়েন্টে পায়রা এবং বরগুনার আমতলী উপজেলা পয়েন্টে বুড়িশ্বর নদীর পানিও বাড়ছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। আশা করা যাচ্ছে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পানি স্বাভাবিক স্তরে চলে আসবে। পানি বৃদ্ধিতে বেড়িবাঁধ, মাছের ঘের, ফসলের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও মনে করেন তিনি।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপের প্রভাবে বরগুনার নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলের অনেক জনপদে পানিতে প্লাবিত সবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বুধবার বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গৌরীচন্না ইউনিয়নের দক্ষিণে অবস্থিত খাকদোন নদের পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মোঃ মাহাতাব হোসেন বলেন, আজ খাকদোন নদের পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা গতকালের চেয়ে বেশি। এদিকে নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় অনেক নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নদের পানি বাড়ায় বাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে গেলেও এসব এলাকায় নদীভাঙনের দেখা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি চার থেকে পাঁচ ফুট বেড়ে যাওয়ায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বিচ্ছিন্ন চর ও বাঁধের বাইরের হাজার হাজার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী মানুষজনের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মেঘনা ও তেতুলিয়ার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলেরা নদীতে নামতে পারেননি। তারা নদী তীরে অলস সময় পার করছেন।
অন্যদিকে, তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসগেট এলাকায় সদ্য নির্মিত রিং বাঁধ উপচে মেঘনার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ ও ‘মন্থা’র সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় ভোলা জেলা প্রশাসন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলায় ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১৪টি মাটির কিল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ১৩ হাজার ৮৬০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, জেলার বিচ্ছিন্ন চরগুলো থেকে মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সাত উপজেলায় ৮টি কন্ট্রোল রুম চালু রয়েছে এবং গঠন করা হয়েছে ৯৮টি মেডিকেল টিম।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে, রাজধানী ঢাকায় এবং আশপাশের অঞ্চলে সকাল থেকে দিনভর বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে বজ্রপাতও থাকতে পারে। ফলে দিনের তাপমাত্রা আগের দিনের তুলনায় ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।