আজ শুক্রবার, ১৩ Jun ২০২৫, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন

Logo

পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ

পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ

পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥

আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে শবে কদরের রজনী। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে সারা দেশে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।

লাইলাতুল কদর‎‎ এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হচ্ছে; ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। ইসলাম ধর্ম অনুসারে, এ রাতে মহানবী (স.) এর সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

মহান আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তাঁর অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফেরাত। পবিত্র শবেকদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগি করবেন।

পবিত্র রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে পবিত্র আল কুরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিবাগত রাতে মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। এ রাতে মুসলমানগণ নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন।

পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে পরেরদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।

তাই প্রতিটি মুসলমানের কাছে এই রাত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও মহাসম্মানিত হিসেবে পরিগণিত। পবিত্র কোরাআন শরীফের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর উপাসনা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবছর মাহে রমজানে এই মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর মুসলিমদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে।
লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব আল্লাহ এ রাতকে সকল রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এ রাতকে প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেছেন আল্লহ নিজেই। তিনি তাঁর কালাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আমি এটি নাজিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, আমার নির্দেশে। নিশ্চয় আমি রাসুল প্রেরণকারী। তোমার রবের কাছ থেকে রহমত হিসেবে; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। যিনি আসমানসমূহ, জমীন ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর রব; যদি তোমরা দৃঢ় বিশ্বাস পোষণকারী হও। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। তিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পিতৃ পুরুষদের রব। (দুখান ৩-৮)

বরকতময় রজনী হলো লাইলাতুল কদর। আল্লাহ বরকতময় বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এ রাতে রয়েছে যেমন বরকত তেমনি কল্যাণ ও তাৎপর্য। বরকতের প্রধান কারণ হল এ রাতে আল-কোরান নাজিল হয়েছে। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-সিদ্ধান্ত লওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয় বাস্তবায়নের জন্য। এ রাতের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহ তাআলা এ রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ করেছেন। যা কিয়ামত পর্যন্ত পঠিত হতে থাকবে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় আমি এটি নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তোমাকে কিসে জানাবে লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সে রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত। (সূরা কদর: ১-৫)

আল-কোরআনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি লাইলাতুল কদর কোন রাত। তবে কোরআনের ভাষ্য হলো লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। কিয়ামত পর্যন্ত রমজান মাসে লাইলাতুল কদর অব্যাহত থাকবে। এবং এ রজনী রমজানের শেষ দশ দিনের মধ্যে হবে বলে সহিহ হাদিসে এসেছে। এবং তা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে হাদিসে এসেছে।

হাদিসে আছে, ‘রমাযানের শেষ দশ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ করো। ’ (বোখারি ২০২০ মুসলিম :১১৬৯)

এবং রমজানের শেষ সাত দিনে লাইলাতুল কদর থাকার সম্ভাবনা অধিকতর। যেমন হাদিসে আছে, তোমরা রমাযানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ করো। (বোখারি: ২০১৭)

অধিকতর সম্ভাবনার দিক দিয়ে প্রথম হলো রমজান মাসের সাতাশ তারিখ। দ্বিতীয় হল পঁচিশ তারিখ। তৃতীয় হল ঊনত্রিশ তারিখ। চতুর্থ হল একুশ তারিখ। পঞ্চম হল তেইশ তারিখ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে গোপন রেখেছেন আমাদের উপর রহম করে। তিনি দেখতে চান এর বরকত ও ফজিলত লাভের জন্য কে কত প্রচেষ্টা চালাতে পারে। লাইলাতুল কদরে আমাদের কর্তব্য হলো বেশি বেশি নিজের জন্য আত্মীয় স্বজনদের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন।

লাইলাতুল কদর উপলক্ষে আমাদের করণীয় :

ক. কদরের ফজিলত পাওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু নফল ইবাদত করা, নফল নামাজ আদায় করা। কোরআন তেলাওয়াত করা, তাছবীহ তাহলীল পাঠ করা কর্তব্য। দুই দুই রাকআত করে নফলের নিয়ত করে যেকোনো সূরাই সূরা ফাতেহার সঙ্গে মিলিয়ে নামাজ পড়া যাবে। তাতে কোনো অসুবিধা নেই। উত্তম হলো নফল নামাজ ধীরে সুস্থে লম্বা লম্বা ক্বেরাত দিয়ে পড়া এবং ধীরস্থিরে রুকু-সিজদা আদায় করা।

খ. লাইলাতুল কদর হলো বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। এ রাতের শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো ক্ষমা চাওয়ার দোয়া। এ রাতে মহানবী (সা.) ক্ষমা চাওয়ার দোয়া শিক্ষা দিলেন যে, তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও, ক্ষমা পাওয়ার জন্য দোয়া করো। হাদীস শরীফে আছে হযরত আয়েশা (রা.) মহানবী (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ইয়া রাসূল আল্লাহ! যদি আমি বুঝতে পারি শবে কদর কোন রাত, তাহলে ঐ রাতে আমি কি বলব? আল্লাহর কাছে কি চাইব? প্রিয় নবী (স.) তদুত্তরে বলেন তুমি বলবে, ‘হে আল্লাহ আপনি বড়ই ক্ষমাশীল। ক্ষমা করতে আপনি ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন। ’ আরবি দোয়া হলো- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা, আফুউন তুহেববুল আফওয়া, ফাওফু আন্নি (ইবনে মাজাহ)।

কেউ যদি জীবনে অনেক কিছু পায় কিন্তু ক্ষমা না পায়, তাহলে তার জীবন ব্যর্থ। তাই এ রাতে অন্তরকে নরম করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার পূর্বে খাঁটি দিলে তওবা ইস্তেগফার করতে হয়। খাঁটি তওবার চারটি শর্ত:

১. পূর্বের গুনাহ থেকে ফিরে আসা বা গুনাহ ছেড়ে দিতে হবে;

২. গুনাহর জন্য মনে মনে অনুতপ্ত হতে হবে যে, আমি বড়ই অন্যায় করেছি;

৩. ভবিষ্যতে ওই গুনাহ আর করবো না বলে মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে;

৪. বান্দাহর কোনো হক নষ্ট করে থাকলে যথাসাধ্য সে হক আদায় করে দিতে হবে।

গ. এ রাতের আরেকটি আমল ফুকাহায়ে কিরামগণ বলেছেন যে, এ রাতে ইবাদাতের পূর্বে যদি কেউ গোসল করে নিতে পারে তার সেটাই উত্তম। উক্ত আমলগুলো শুধু ২৭ রমজান নয় বরং রমজানের শেষ দশ দিনের প্রত্যেক বিজোড় রাতে শবেকদর তালাশ করতে হবে। এজন্য মহানবী (স.) রমজানের শেষ দশ দিনে ইতেকাফ করতেন। আর উম্মতের জন্য শরীয়তে ইতেকাফের বিধান কিয়ামত পর্যন্ত জারি রেখে গিয়েছেন যেন তারা ইতেকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব দিয়ে প্রত্যেকটি বেজোড় রাতে এবাদত করতে পারেন। আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরে কুরআন নাজিল করেন। এ রাত বছরে একবার আসে আর চলে যায়। কিন্তু এ রাতের মহান নিয়ামত কুরআন মানব সমাজেই বিরাজমান থাকে চিরদিন। মানব জীবনে সাফল্য এই কুরআনের আমলের উপরই নির্ভরশীল। এই রাতের মর্যাদা মূল্যায়ন তখনই যথার্থ হবে। যখন আমরা কুরআনের নির্দেশিত পথে চলবো, আর কুরআনের বাহক মুহম্মদ (স.) এর পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য করবো। এ রাতের সর্বাপেক্ষা মহৎ প্রাপ্তি হলো কুরআনের হক আদায় করা এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে কুরআন প্রদর্শিত পথে পরিচালিত করার জন্য নিজেদেরকে সর্বদা প্রস্তুত করা।

দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।

পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।

আল্লাহ যেন সবাইকে লাইলাতুল কদর তালাশ করার তৌফিক দান করেন। সে অনুযায়ী আমল করার তৌফিক এনায়েত করেন। আমিন। ছুম্মা আমিন।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon