আজ শুক্রবার, ১৩ Jun ২০২৫, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, আলোচনা ছিল বিস্তৃত, ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক। এই আলোচনা সৌহার্দ্যের আবহে সম্পন্ন হয়।
প্রেসিডেন্ট শি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি চীনের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এটি অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। এখন পর্যন্ত এটি অত্যন্ত সফল।
প্রেস সচিব জানান, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অধ্যাপক ইউনূসকে বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ উৎসাহিত করবে এবং চীনা উৎপাদন কারখানাগুলো বাংলাদেশে স্থানান্তরের জন্য উদ্যোগ নেবে।
প্রেসিডেন্ট শি বলেন, চীন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে, যার মধ্যে চীনা ঋণের সুদের হার কমানো এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত।
চীনা প্রেসিডেন্ট তার বাংলাদেশে দুটি সফরের কথা স্মরণ করেন। ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর থাকাকালীন তিনি ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক গবেষণা করেছিলেন বলেও জানান।
এদিকে, চীন ও বাংলাদেশ তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তিতে উভয় দেশ বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বিনিময় বৃদ্ধিতেও একমত হয়েছে।
চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ, ২০২৫) হাইনানের উপকূলীয় শহরে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই গণআন্দোলন ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের পথ সুগম করেছে। পাশাপাশি, চীনের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা স্মরণ করে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসার প্রসারের ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরেন।
এ বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের তাদের আদি ভূমিতে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনে চীনের সক্রিয় ভূমিকা কামনা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, চীনের কূটনৈতিক প্রভাব এই সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আপনার সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন।’ তিনি আরো বলেন, চীন আশা করে, প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধি অর্জন করবে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওয়ান-চায়না নীতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দেওয়া প্রথম দক্ষিণ এশীয় দেশ হিসেবে ঢাকা গর্ব অনুভব করে।
বৈঠকে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন প্রকল্পে চীনের সহায়তা চেয়েছে এবং চীনা ঋণের সুদের হার ৩ শতাংশ থেকে ১-২ শতাংশে নামিয়ে আনার অনুরোধ করে।
এছাড়া, বাংলাদেশ চীনা অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর কমিটমেন্ট ফি মওকুফের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা চীনের তৈরি পোশাক কারখানা, বৈদ্যুতিক যানবাহন, হালকা যন্ত্রপাতি, উচ্চ প্রযুক্তির ইলেকট্রনিকস, চিপ উৎপাদন এবং সৌর প্যানেল শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তর সহজ করতে বেইজিংয়ের সহায়তা চান।
উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং জানান, ২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনে বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে, যা বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের দুই বছর পর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
তিনি আরও জানান, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী।
উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশ মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন এবং দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের উন্নয়নেও অর্থায়ন করবে।
তিনি উল্লেখ করেন, গত বছর চীন বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির জন্য একটি প্রোটোকল স্বাক্ষর করেছে।
এ বছরের গ্রীষ্মকাল থেকেই বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। বেইজিং কাঁঠাল, পেয়ারা এবং অন্যান্য জলজ পণ্য আমদানি করতেও আগ্রহী, যাতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের বিশাল ব্যবধান কমানো যায়।
চীনা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরও বেশি স্কলারশিপ প্রদান করবে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।
উপপ্রধানমন্ত্রী ঢাকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে চীনের অর্থায়নের আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের প্রচেষ্টায় চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে সংলাপ করবে।
প্রফেসর ইউনূস চীনের নেতৃত্বের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বৃহস্পতিবারের এই বৈঠক ‘ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশ-চীন অংশীদারিত্বের আরেকটি মাইলফলক চিহ্নিত করল।’
তিনি বলেন,‘আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করার সংকল্প গ্রহণ করি যাতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয় এবং বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও পারস্পরিক অংশীদারিত্বের একটি নতুন যুগের সূচনা হয়।’
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।