আজ বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন

Logo
শিরোনামঃ
বাউফলের সন্তান পুলিশ সদস্যের রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ‘রহস্যজনক’ মৃত্যু জুলাই আন্দোলনে শহীদ বাবার কবরের পাশেই মেয়ে লামিয়া সমাহিত শহীদ কন্যা লামিয়ার দাদার বিলাপ ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে, যুদ্ধের প্রস্তুতি পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস’র যোগদান ভয়াবহ দাবানলের কবলে ইসরাইল : আহত ৯, পুড়ছে ২৫০০ একর জমি ইউএনও রাসেলের পক্ষে সাফাই গাইতে মানববন্ধনের প্রস্তুতি জনপ্রিয়তা বাড়ছে, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে তারেক রহমান : দ্য উইক ম্যাগাজিন টিপুর জামিন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রথম বিজয় : বিএমএসএফ শিগগিরই অবৈধ সকল সরকারি ভূমি দখলমুক্ত করা হবে
মুলাদীর এক মাদ্রাসা সুপারের তেলেসমাতি!

মুলাদীর এক মাদ্রাসা সুপারের তেলেসমাতি!

মুলাদীর এক মাদ্রাসা সুপারের তেলেসমাতি!

স্টাফ রিপোর্টার ॥

মুলাদী উপজেলার সফিপুর মুন্সীর হাট নূর এ তাজ দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুল হক’র অনিয়ম দূর্নীতি, খামখেয়ালিপনায় ধ্বংস হতে চলেছে ঐ অঞ্চলের দ্বীনি শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি। দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

১৯৯৩ সালে দুর্গম এলাকা সফিপুরে নিজের তিন একর পৈত্রিক জমিতে এলাকার শিক্ষানুরাগী হাজী ফিরোজ আহমেদ মুন্সী মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এমপিওভুক্তির পর থেকে বয়োঃবৃদ্ধ ফিরোজ আহমেদ মুন্সীকে পাশ কাটিয়ে একক ভাবে মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছিলেন সুপার মাওলানা আবদুল হক। মাদ্রাসাটি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠাতার জামাতা জানে আলম দুলাল চৌধুরীর প্রচেষ্টায় তৎকালীন বরিশাল ০৩ আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন মঙ্গুর সুপারিশে এমপিওভুক্তি লাভ করে মাদ্রাসাটি। এমপিওভুক্তির কথা বলে সুপার মাওলানা আবদুল হক গোপনে শিক্ষক কর্মচারীদের কাছ থেকে তৎকালীন সময়ে ১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। এমপিওভুক্তির আগে দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা হাজী ফিরোজ আহমেদ মুন্সীর আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সম্মানী দেয়া হতো। এমপিওভুক্তির পর সরকারি সম্মানী পাওয়া শুরু হলেই প্রতিষ্ঠাতা হাজী ফিরোজ আহমেদ মুন্সীকে পাশ কাটিয়ে নিজের ইচ্ছামত মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছিলেন সুপার আবদুল হক।

অভিযোগ সূত্র জানা যায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ মুন্সী এবং তার ভাই বাচ্চু মুন্সীকে সভাপতি বানিয়ে তিনজন মিলে গত ১৫ বছর নিজেদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে মাদ্রাসাটি। গত ১৫ বছরে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এই চক্রটি। সর্বশেষ লাইব্রেরীয়ান পদে মোঃ মহসিনের নিয়োগে ৫ লাখ, আয়া মনিকার নিয়োগে ৪ লাখ এবং কর্মচারী নয়নের নিয়োগে ৪ লাখ টাকা নিয়াছেন সিরাজ মুন্সী ও সুপার আবদুল হক।

এছাড়া গত ১৫ বছরে প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য সরকার থেকে বরাদ্ধ পাওয়া ২৫ লাখ টাকার কোন কাজ না করে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন সুপার মাওলানা আবদুল হক, দুই সভাপতি সিরাজ মুন্সী ও বাচ্চু মুন্সী। সর্বশেষ মাদ্রাসায় নব নির্মিত চারতলা ভবনের নির্মাণ কাজে নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার প্রতিবাদ করে মাদ্রাসায় কতিপয় শিক্ষক ও এলাকাবাসী তখন সিরাজ মুন্সীর ক্যাডার বাহিনী দিয়ে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মুখ বন্ধ করেন। অভিযোগ রয়েছে নিম্নমানের কাজ করে বিল উত্তোলনের সময় ঠিকাদারের সাথে চুক্তি করে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন সুপার আবদুল হক ও সিরাজ মুন্সী গং।

এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে সরকার সকল প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে এডহক কমিটি অনুমোদন করে। বর্তমানে এডহক কমিটি বাদ দিয়ে পূনাঙ্গ কমিটি করার প্রজ্ঞাপন জারি করলে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন সুপার মাওলানা আবদুল হক। অতীতের অনিয়ম, দুর্নীতি চাপা দিতে পতিত স্বৈরাচারের পলাতক দোসর সিরাজ মুন্সীর পরিকল্পনায় কোন প্রকার নির্বাচনী তফসিল না দিয়ে অতি গোপনে মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী জাহাঙ্গীর সরদারের ছেলে মোঃ আরিফ সরদারকে সভাপতি বানিয়ে খসড়া কমিটি গঠন করেন সুপার মাওলানা আবদুল হক। গোপনে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া জানতে পেরে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাজী ফিরোজ আহমেদ মুন্সীর পুত্র বর্তমান দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মিজানুর রহমান মুন্সী বাধা দিলে তাকে বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন সুপার।। তিনি মিজানুর রহমানকে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ মুন্সী ও বাচ্চু মুন্সীর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। দাতা মিজানুর রহমান সিরাজ মুন্সীর সাথে কেন যোগাযোগ করবে সুপারের কাছে জানতে চাইলে সুপার আবদুল হক বলেন এসব দাতা, ফাতা কোন কাজে লাগেনা, সিরাজ মুন্সীই সফিপুরের সরকার তিনি যা বলবেন তাই হবে।

এসব ব্যাপারে মাদরাসার বর্তমান একমাত্র দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মিজানুর রহমান মুন্সী মুলাদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা দুর্নীতি দমন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়াছেন।

এসব ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুল হক’র কাছে জানতে তিনি বলেন আমি দূরের মানুষ এখানে চাকরি করি সিরাজ মুন্সী ও বাচ্চু মুন্সী যা বলেছেন তাই করেছি। সফিপুরে সিরাজ মুন্সী, বাচ্চু মুন্সীই সরকার। এখানে কোন সরকার, দাতা, ফাতা কাজে লাগেনা। আমি শুরু থেকেই এই মাদ্রাসায় আছি কেউ আমার কিছু করতে পারেনি, আমার নামে অভিযোগ দিয়ে, পত্রিকায় নিউজ দিয়ে কেউ কিছু করতে পারবেনা।

এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান আমরা সফিপুর মুন্সীর হাট নুরে তাজ দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুল হক’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এব্যাপারে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon