আজ সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদসহ অন্যদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম উর্মির বিরুদ্ধে মানহানির মামলার আবেদন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বাদী হয়ে এ আবেদন করেন। বিচারক বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড শেষে এ বিষয়ে আদেশ পরে হবে বলে জানান আদালত।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. খাদেমুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ অক্টোবর আসামি উর্মি শুধু শহীদ আবু সাঈদ নয়, সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা সত্ত্বেও ছাত্র-গণআন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকার ও সরকার প্রধান নোবেলবিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধেও অবমাননাকর বক্তব্য ফেসবুক লিখেন।
আবেদনে আরো বলা হয়, মন্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেফারেন্সের ভিত্তিতে সংবিধান সম্মতভাবে গঠিত একটি সরকার প্রধান সম্পর্কে বিষোদগার করা হয়েছে এবং সরকার উৎখাতের হুমকি দিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার (৭ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মিকে বরখাস্ত করা হয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বরখাস্তের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর আগে, তাকে ওএসডি করার তথ্য জানিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট করায় এ সিদ্ধান্ত বলেও জানা গেছে।
সমালোচিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মি ফেসবুকে লেখেছিলেন, ‘সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ! কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।’
পরে স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে চাইলে উর্মি মোবাইল ফোনে বলেন, আমি পোস্ট দিয়েছি এটাই তো যথেষ্ট। অনলি মি করেছি। বদলি বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এর জন্য যদি আমার চাকরি চলে যায়, সমস্যা নেই। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, এটা মীমাংসিত সত্য। রিসেট বাটন মুছে ফেলে অতীত মুছে ফেলা, এর মানে কি? তাহলে তো আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি আমাদের দেশে সরকার হিসেবে আছে। আমার মনে হয়েছে, আমার দায়িত্বশীল জায়গা এটাই। বলা হচ্ছে জুলাই গণহত্যা, এগুলো সবই তদন্তসাপেক্ষ, মীমাংসিত সত্য না। এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি তো।
এদিকে তাপসী তাবাসসুম উর্মির ফেসবুকে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বেশ কিছু স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। এছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েও বেশ কিছু স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্রী এই ঊর্মি বিতর্কিত শিক্ষক ও লেখক অধ্যাপক জাফর ইকবালের সঙ্গী ছিলেন। গণজাগরণ মঞ্চেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
তিনি চাকরির বিধি লঙ্ঘন করেছেন। এটা তার ঠিক হয়নি। এটা একটা বড় অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন উর্মির মা নাসরিন জাহান।
তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করিনি, যুদ্ধ দেখিনি। যে যুদ্ধ হয়েছে, সেটা ইতিহাস। তবে ইতিহাসকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা আমাদের মা-বাবাকে অস্বীকার করতে পারবো কি?’
সোমবার (৭ অক্টোবর) রাতে তাপসী তাবাসসুম উর্মির মা নাসরিন জাহান জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘উর্মি ছাত্রজীবনে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তবে ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল। তখন তার ৪০তম বিসিএস পরীক্ষা ছিল। সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছে। সেখান থেকে মাস্টার্স করেছে। আমার সন্তানরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। আমরা খুব সাধারণ জীবনযাপন করি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাপসী তাবাসসুম উর্মি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। তার বাবা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ। এছাড়াও তিনি ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। তবে বর্তমানে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন।
এছাড়া উর্মির মা নাসরিন জাহান বর্তমানে মুক্তাগাছার হাজী কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তারা ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের পেছনে কাশর জেল রোড এলাকায় নিজ বাসায় বসবাস করেন।
পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিম উদ্দিন জানান, উর্মি ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে ২০২২ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে উর্মি সবার বড়। ছোট ভাই জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গোলাম মাওলা রনি। পটুয়াখালী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এই সংসদ সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ভেরিফায়েড আইডিতে করা পোস্টে তুলেছেন প্রশ্ন।
রনি লিখেছেন, ‘তাবাসসুম ঊর্মিকে কেন ওএসডি করা হলো! যেখানে দালালি করার জন্য পুরস্কৃত করা হয়! দলবাজির জন্য পদোন্নতি হয়! দুর্নীতির জন্য সম্মান করা হয় সেখানে তো সরকারি চাকরিবিধির দোহাই দেওয়া হয় না! একজন নবীন সরকারি কর্মকর্তার একান্ত ব্যক্তিগত একটি কথা যারা হজম করতে পারেন না তারা কিসের রাষ্ট্র সংস্কার করবেন! কিসের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন! শুধু মুখে মুখে লন্ডন-আমেরিকার গণতন্ত্র এবং অন্তরে উগান্ডার আমিন দাদার মতো স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণকারীদের সঙ্গে যদি গুণগত পার্থক্য না থাকে তবে আমরা কিভাবে অগ্রসর হবো!’