আজ বুধবার, ১৬ Jul ২০২৫, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
ইসরাইলে পালটা হামলা চালিয়েছে ইরান। গত কয়েক ঘণ্টায় ইসরাইলে শতাধিক ড্রোন নিক্ষেপ করেছে দেশটি। শুক্রবার (১৩ জুন) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইরানের প্রধান সেনা মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন। খবর এপির।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক ঘণ্টায় ইসরাইলের দিকে শতাধিক ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইরান। তাদের সমস্ত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রতিহত করার জন্য কাজ করছে তেহরান।’
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, যখন ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু হয়। সংঘাতটি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাত থেকে ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন স্থানে একাধিক ধাপে বিমান হামলা চালায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাঁচ ধাপে মোট আটটি স্থানে শতাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে। হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের সামরিক ক্ষমতা দুর্বল করা এবং পারমাণবিক কর্মসূচি ব্যাহত করা।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। এছাড়াও দুইজন উচ্চপর্যায়ের পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। হামলার পর তেহরানে ভীষণ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং তেহরানসহ আশপাশের এলাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর মধ্যেই ইসরায়েল তার আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে, যা নিরাপত্তাজনিত কারণেই নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই সামরিক অভিযান যতদিন প্রয়োজন ততদিন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল তার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কোনও ছাড় দিবে না এবং প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এই হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইতিমধ্যে অস্থির পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার এই সংঘাত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে এবং পরবর্তী দিনগুলোতে উত্তেজনার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
ইসরায়েলের হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরিও নিহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এ তথ্য জানিয়েছে। ১৯৮০ সালে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড এ যোগ দিয়েছিলেন বাঘেরি। পর্যায়ক্রমে তিনি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নেতা হয়ে ওঠেন।
ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, তিনি বলেছেন যে এই হামলা ইসরায়েলের “বর্বর স্বভাবের প্রমাণ”। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে আরও বলেছেন, “এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল নিজেই নিজের জন্য একটি করুণ পরিণতির পথ তৈরি করেছে, যার ফলাফল তারা নিশ্চিতভাবেই ভোগ করবে।”
ইরানে হামলার পরপরই নিজ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইসরায়েলি সরকার। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “খুব শীঘ্রই ইসরায়েলের ওপর পাল্টা হামলা” চালাতে পারে ইরান। ইরানের ওপর যখন হামলা চালানো হয় ইসরায়েলের মানুষ তখন ঘুমাচ্ছিলেন। জেরুজালেমে অবস্থানরত একজন বিবিসি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সাইরেনের বিকট শব্দে এবং মোবাইলে জরুরি সতর্কবার্তা পেয়ে তারা জেগে ওঠেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “এই হামলা ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে।” রাজধানী তেহরান থেকে ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর নাতানজ্-এ হামলা চালানোর কথা জানান মি. নেতানিয়াহু। এটিকে সমৃদ্ধকরণের মূল এলাকা হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। আরও বলেন, ‘ইরানি বোমা বানানোর সঙ্গে জড়িত’ বিজ্ঞানীরা তাদের নিশানায় রয়েছেন। ‘যতদিন প্রয়োজন, ততদিন এ আক্রমণ অব্যাহত থাকবে,’ যোগ করেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের রাজধানী তেহরানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাকে মূল লক্ষ্যবস্তু করে একাধিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও অন্যান্য সামরিক ঘাঁটি।তিনি আরও বলেন, “ইরানের কাছে এত বেশি পরিমাণে পরমাণু উপাদান মজুত রয়েছে, যা দিয়ে তারা কয়েক দিনের মধ্যেই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে।”
সূত্র : বিবিসি বাংলা