আজ শুক্রবার, ১৩ Jun ২০২৫, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস আজ। ৪৯ বছর আগে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ভারত নির্মিত ফারাক্কা বাঁধের প্রতিবাদ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পদ্মা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ফারাক্কা অভিমুখে লাখো জনতার লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। লংমার্চ শেষে কানসাট হাইস্কুল মাঠে বিশাল সমাবেশে বক্তব্য দেন মওলানা ভাসানী। সেই থেকে ১৬ মে ফারাক্কা দিবস নামে পরিচিতি লাভ করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ১৮ কিলোমিটার উজানে ১৯৭৫ সালে ভারত ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধন করে। এর প্রতিবাদে মওলানা ভাসানীর লংমার্চ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে। সে সময় চুক্তি অনুযায়ী, পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি পূরণ না হওয়ায় মরুকরণের দিকে যাচ্ছিল বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। যদিও সে অবস্থার এখনো পরিবর্তন হয়নি।
১৯৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী খরা মৌসুমে জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ সে পানি পায়নি।
ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল এদেশের লাখ লাখ দেশপ্রেমিক জনতা। যার ডাক দিয়েছিলেন সারা বিশ্বের মজলুম মানুষের অবিসংবাদিত নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আজ থেকে চার দশক আগে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এ নেতা। ডাক দিয়েছিলেন ফারাক্কা লংমার্চের। নিযুত কণ্ঠের গগনবিদারী সেøাগানের মধ্যে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, মরণবাঁধ ফারাক্কা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও। ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বিশ্ববাসী।
রাজশাহী তথা দেশবাসীর কাছে আজ ঐতিহাসিক দিন। মওলানা ভাসানীর আহবানে সারাদেশ থেকে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে লাখ লাখ মানুষ ছুটে এসেছিল ফারাক্কা লংমার্চে যোগ দেয়ার জন্য রাজশাহীতে। বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা মানুষের পদভারে রাজশাহীর আকাশ-বাতাস ছিল প্রকম্পিত। ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের অনেকদূর পর্যন্ত অবস্থান নিয়েছিল জনতা। যা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। মাদরাসা ময়দানের মঞ্চে বিখ্যাত তালের টুপি আর সফেদ লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরিহিত মওলানা ভাসানী লংমার্চ নিয়ে ফারাক্কা অভিমুখে যাওয়ার আগে দশ মিনিটের বজ্র নির্ঘোষ ভাষণ দেন, যা ছিল দিকনির্দেশক ও উদ্দীপক। নিযুত কণ্ঠের শ্লোগানে একই আওয়াজ- মরণবাঁধ ফারাক্কা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও। চল চল ফারাক্কা চল। এরপর তার নেতৃত্বে শুরু হয় ফারাক্কার উদ্দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে যাত্রা। ফারাক্কা অভিমুখী লংমার্চের অংশগ্রহণকারীদের খিচুড়ি, চিড়া, গুড়, রুটি, মুড়ি দিয়ে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে স্বাগতম জানিয়েছিল এখানকার মানুষ। খরতাপ আবার কখনো ঝড়-বৃষ্টির ঝাপটা তোয়াক্কা না করে লংমার্চ এগিয়েছে। যার অগ্রভাগে ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। প্রকাশ্যে মওলানা ভাসানী লংমার্চ করলেও এর পেছনের নায়ক ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি মওলানা ভাসানীর এ ইস্যুকে জাতিসংঘ পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন।
এদিকে ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে ফারাক্কা লংমার্চ ৪৯তম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি আয়োজন করেছে র্যালি ও আলোচনা সভা। র্যালি শেষে রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে প্রধান অতিথি থাকবেন ফরিদা আখতার উপদেষ্টা মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়। অতিথি থাকবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড, সালেহ হাসান নকীব।