আজ বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪১ অপরাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
রাষ্ট্র সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব করেছে জামায়াতে ইসলামী। বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরের পক্ষে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়৷ এসব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
যেখানে ১০টি ধাপে রয়েছে আইন ও বিচার, সংসদ বিষয়ক সংস্কার, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা সংস্কার (পুলিশ বাহিনী ও র্যাব বিষয়ক সংস্কার, জনপ্রশাসন সংস্কার, দুর্নীতি, সংবিধান সংস্কার, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্কার, সংস্কৃতি সংস্কার, পররাষ্ট্র বিষয়ক সংস্কার ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সংস্কার।
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের আমলে বহু মানুষ নির্যাতন, গুম,খুনের শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন, “ সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত দলের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যার এক থেকে শুরু করে এগারজন শীর্ষ নেতাকে মিথ্যা অভিযোগে তাদেরকে সাজানো আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। শুধু তারাই বিদায় হয় নি। অপশাসনের প্রতিবাদ করেছে এমন হাজার হাজার মানুষকে দুনিয়া থেকে তুলে নেয়া হয়েছে”।
সংস্কার প্রস্তাবনায় দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচনকে অবাধ,সুষ্ঠু ও অর্থবহ করার জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ব্যতীত নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রভাব মুক্ত রাখতে হবে।
বিচার বিভাগের সংস্কার প্রস্তাবনায় বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার সুপারিশ করেন তাহের।
তাহের বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। আইন মন্ত্রনালয় থেকে আলাদা করে সুপ্রিম কোর্টের পৃথক অফিস স্থাপন করতে হবে। দেওয়ানী মামলা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং ফৌজদারি মামলা সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা সংস্কারের মধ্যে পুলিশের ব্রিটিশ আইন বাতিল, নিয়োগে দলীয় হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং পুলিশের ট্রেনিংয়ে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাবনা দেয় দলটি। নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাবনা দেয় জামায়াতে ইসলামী।
রিমান্ড চলাকালে আসামিপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা, পুলিশের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব করে দলটি।
র্যাব ও অন্যান্য বিশেষায়িত বাহিনীর প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, গত সাড়ে ১৫ বছরে যারা র্যাবে কাজ করেছেন তাদের স্ব স্ব বাহিনীতে ফিরিয়ে আনা এবং আবার র্যাবে ফেরানো যাবে না বলে প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
সংসদের বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার মনোনয়নের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেয় জামায়াতে ইসলামী।
সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করার পরামর্শও দেয় দলটি।
কোন সরকারি চাকরিজীবী চাকরি ছাড়ার পর কমপক্ষে কোন ধরনের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলে প্রস্তাব রাখে দলটি।
তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরিতে আবেদন বিনামূল্যে করতে হবে, আবেদনের জন্য কোনো ফি রাখা যাবে না। আবেদনের ক্ষেত্রে আগামী দুই বছরের জন্য বয়সসীমা ৩৫ বছর, পরবর্তীতে ৩৩ বছর আর অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর রাখতে হবে।
আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে, যারা বিগত সরকারের কথায় নিয়োগ পেয়েছে তাদের বাতিল করতে হবে।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। একই ব্যক্তি পর পর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না এমন প্রস্তাবনা দেন।
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দুর্নীতি দমন কমিশন করতে হবে। বিগত সরকারের আমলে পাচার করা টাকা ফেরানোর ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব করেন।
শিক্ষার সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি শ্রেণিতে মহানবী (স.) – এর পাঠ থাকতে হবে এবং কারিগরি শিক্ষাকে মূল ধারায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতি জেলায় একটি করে কামিল মাদ্রাসাকে সরকারি করতে হবে।