আজ শুক্রবার, ১৩ Jun ২০২৫, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
পবিত্র মাহে রমজান আগমনের আগেই রমজানের প্রস্তুতির মাস রজব ও শাবান। রজব মাস থেকে রমজানের বরকত লাভের দোয়া পড়া শুরু করতেন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। শাবানেও একই দোয়া বেশি বেশি পড়তেন এবং সাহাবিদের পড়তে উৎসাহিত করতেন। শাবান মাসে বরকত লাভের দোয়া পড়ার পাশাপাশি রমজানের প্রস্তুতি উপলক্ষে বেশি বেশি রোজা রাখতেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে দোয়া করতেন যে হে আল্লাহ রজব ও শাবান মাসে আমাদের বিশেষ বরকত দান কর এবং রমজান পর্যন্ত আমাদের পৌছে দাও।
শাবানে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশি পরিমানে নফল রোজা রাখার বিষয়ে এক হাদিসে হজরত উসামা বিন জায়েদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছি, হে আল্লাহর রাসূল, শাবান মাসে আপনি যেভাবে রোজা রাখেন, সেভাবে অন্য কোনো মাসে রোজা রাখতে আমি আপনাকে দেখিনি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এ মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে। এটা এমন মাস, যে মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই, আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার। ’ (নাসাঈ, হাদিস, ২১৭৯)
শাবান মাসজুড়ে রোজা রাখা ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে বহু ধরনের সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া ‘আইয়ামে বিজ’র রোজাও গুরুত্বপূর্ণ। (প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজাকে আইয়ামে বিজ’র রোজা বলে। এই রোজার রাখার ব্যাপারে হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।)
পাশাপাশি দুর্বল সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসে ১৫ তারিখে বিশেষভাবে রোজা রাখার কথা পাওয়া যায়। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত সেই হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা তা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং পরদিন রোজা রাখো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৪)
এ মাসে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত রয়েছে। কোরআনের ভাষায় এটাকে লাইলাতুম মুবারকা বলে। আমাদের দেশীয় পরিভাষায় ‘শবে বরাত’ বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন হাদিসে এ রাতের ফজিলতের আলোচনা এসেছে।
মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৫৬৬৫)
এ মাসে বেশি বেশি বরকত হাসিলের দোয়া করতেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ দোয়ার মাধ্যমে রমজান মাসে ইবাদত করার সুযোগ ভিক্ষা চাইতেন।
ইসলামী বর্ষপঞ্জীকায় অষ্টম মাস হল শাবান মাস। যা রজব ও রমজান মাসের মধ্যবর্তী মাস শাবান। এ মাস বড় পূন্যময় ও ফজিলতময়। রমজানের আগমনী বার্তার মাস। রমজানের পূর্ববর্তী নিকটতম মাস হিসেবে এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। রাসুল (স.) বলেন রজব মাসে চাষাবাদ করে এবাদতের বীজ বপন কর।শাবান মাসে তাতে পানি দাও এবং রমজান মাসে এর ফসল আহরণ কর।
শাবান আরবি শব্দ। যার অর্থ ছড়িয়ে পড়া, বিস্তার লাভ করা। যেহেতু এ মাসে আল্লাহ তায়ালার অপার অনুগ্রহ ও দয়া বিস্তৃতি লাভ করে জগৎবাসীর উপর এবং মুমিনদের প্রতি এ মাসে তার বিশেষ কৃপার দৃষ্টির শাখা প্রশাখা প্রসারিত হয় তাই এ মাসকে শাবান নামকরণ করা হয়েছে।এ মাসে যারা রোজা রাখে তাদের জন্য রয়েছে অনেক কল্যান ও বরকত।
প্রিয় নবী মোহাম্মদ (স.) বলেন- তোমরা রমজানের উদ্দেশ্যে শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রাখবে। কেননা শাবান মাসের চাঁদের হিসাব নির্ভুল হলে রমজানের চাঁদের বিষয়ে মতভেদ হবে না। মুয়াত্বা এ ইমাম মালিকে বর্নীত আছে হযরত আয়েশা (রা.) বলেন- রাসুল (স.) অন্যান্য মাসের তুলনায় শাবান মাসের অধিক রোজা রাখতেন। শাবান মাস এলে রাসুল (স.) স্বীয় আমলের পরিমান স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ব্যাপকহারে বাড়িয়ে দিতেন এবং সকলকে অধিক নেক আমলের প্রতি উৎসাহ প্রদান করতেন।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন : রাসুল (স.) বলেছেন রমজান হল আল্লাহর মাস, কেননা রমজান মাসের রোজা রাখাকে তিনি ফরজ করেছেন। আর শাবান মাস হল আমার মাস,অর্থাৎ এ মাসে রোজা ইত্যাদি নফল কাজ আমি সুন্নাত করেছি।
তাই শাবান মাস হল পরিত্রাণকারী আর রমজান মাস হল মোচনকারী। পুরো শাবান মাস জুড়ে আল্লাহর বান্দাহগণদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পূন্য ও সওয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। আল্লাহর সন্তুষ্টিকামী মুমিনদের জন্য আবশ্যক হল সমগ্র মাসকে তারই এবাদতে মনোনিবেশ করা।
আল্লাহ-তায়ালা যেন মুসলিম উম্মাহকে সুন্দরভাবে রমজানের দিনগুলো অতিবাহিত করার তৌফিক দান করেন, আমিন, ছুম্মা আমিন।