আজ রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৭ অপরাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আটককৃতদের শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আটককৃতরা হলেন-ছাত্রলীগের ফজলুল হক মুসলিম হল শাখার উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক থেকে পদত্যাগকৃত ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন ও পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মুত্তাকীন সাকিন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জালাল আহমেদ। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন।
একটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, জালাল আহমেদসহ হলের ৮-১০ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে বেধড়ক মারধর করছেন।
বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ওই হলে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করেন শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, তোফাজ্জলকে আটকের পর গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করেন।
একপর্যায়ে তাকে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর পুনরায় মারধর করা হয়। রাত ১০টার দিকে হলের হাউস টিউটররা ঘটনাস্থলে গেলে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা সেখানে রেখেই চলে আসেন।
এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলার এজাহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট অ্যাডভাইজার আমানুল্লাহ উল্লেখ করেন, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে। তাকে প্রথমে হলের মূল ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে সে মোবাইল চুরি করেছে বলে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুসি দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসা করলে তার নাম তোফাজ্জল বলে জানায়। পরে সে মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে খাবার খাওয়ানো হয়। পরে হলের গেস্টরুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে পেছনে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে জানানো হলে তারা সহায়তা করে অচেতন যুবককে ঢামেকে নিয়ে যায়। পরে রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এ ঘটনায় হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। তিনি উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। এর কিছুদিনের মধ্যে অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড়ভাই মারা যান। পরিবার ও অভিভাবক হারিয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে।
গেল ২ থেকে ৩ বছর তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতেন। যারা তাকে চিনতো সবাই সহযোগিতা করতেন। খাবারের বাইরে তার তেমন কোনো চাহিদা ছিল না।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সাহাবুদ্দিন শাহীন গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এজাহার দিয়েছেন। এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।