আজ শুক্রবার, ১৩ Jun ২০২৫, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন

Logo
পাল্টাপাল্টি হামলা : পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ : পাকিস্তানে ৭০, ভারতে ১০ জন নিহত

পাল্টাপাল্টি হামলা : পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ : পাকিস্তানে ৭০, ভারতে ১০ জন নিহত

 

পাল্টাপাল্টি হামলা : পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ : পাকিস্তানে ৭০, ভারতে ১০ জন নিহত

পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরনো উত্তেজনা নতুন করে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সাম্প্রতিক এক সামরিক অভিযানে। পাহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার প্রায় দুই সপ্তাহ পর ভারত এবার পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বুধবার (৭ মে) ভোরে হামলা চালিয়েছে, যার জেরে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। এই ঘটনায় দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

অপরদিকে, পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রয়ায় ভারত পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’র জবাবে, ভারত শাসিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি পাল্টা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩২ জন।

ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা নয়টি স্থানে অস্ত্র দিয়ে আঘাত হেনেছে, যেখানে কোনও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু ছিল না। তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেনান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী দাবি করেছেন, ভারত ছয়টি অঞ্চলের ২৪টি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে এবং এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়েছে, এই হামলার সময় ভারতের অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে ভারত এসব বিষয়ে নিরুত্তর রয়েছে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে এই হামলায় অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন।

এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দ্রুত প্রকাশ পায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের এই সামরিক পদক্ষেপকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দেন এবং উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের অভিযান শুধু দুই দেশের নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি হতে পারে। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, সামরিক উত্তেজনার পথ না নিয়ে শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান খোঁজা জরুরি। এখন সময়, দুই দেশের নেতৃত্বকে দায়িত্বশীলতা দেখিয়ে সংঘাত এড়িয়ে আলোচনার পথে ফিরে যাওয়ার। তথ্যসূত্র : এনডিটিভি

এদিকে, পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রয়ায় ভারত পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’র জবাবে, ভারত শাসিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি পাল্টা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩২ জন।

নিহতরা সবাই ভারতের পুঞ্চ জেলায় বসবাসকারী সাধারণ নাগরিক। এই অঞ্চলটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছেই অবস্থিত। এর আগে পাকিস্তানি হামলায় ভারতে ৭ জন নিহতের খবর জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গুলো।

এক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার বরাতে বিবিসি জানাচ্ছে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ভারতের চালানো বিমান হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পুঞ্চ ও মেন্ধার অঞ্চলে গোলাবর্ষণ ছিল সবচেয়ে তীব্র। বহু বাড়িঘর, দোকান এবং অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয় এক সাংবাদিক জানায়, বুধবার রাতে টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। কেউ ঘুমোতে পারেনি। অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যান। আমাদের স্থানীয় হাসপাতাল আহত মানুষে পরিপূর্ণ। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।

এই সহিংসতা এমন এক সময়ে ঘটল যখন দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। সীমান্তে নতুন করে সহিংসতা বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেক এলাকা কার্যত জনশূন্য হয়ে পড়েছে। সূত্র : বিবিসি

পাকিস্তানে ভারতের হামলার পরেই ভারতের জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত দোভাল আমেরিকার উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেন। কী পরিস্থিতিতে এই হামলা চালানো হয়েছে সে সম্পর্কে দোভাল বিস্তারিত রুবিওকে জানিয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে বলা হয়েছে। সরকারি সূত্রে খবর, ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন নয়াদিল্লিতে রাত জেগেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঘটনাবলীর উপর কড়া নজর রাখছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন দোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান এবং গোয়েন্দা দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত সেনাবাহিনী, নৌসেনা ও বায়ুসেনার শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় কথোপকথন হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সায় দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই নামেই পেহেলগামে ঘটনার যোগ্য জবাব দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পেহেলগামে পর্যটকদের উপর যেভাবে হামলা হয়েছিল, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে তার ইঙ্গিত রয়েছে। হিন্দু নারীরা সাধারণত কপালে সিঁদুর পরে বিবাহের চিহ্ন বহন করেন। অভিযোগ, পেহেলগামে হামলাকারীরা সেই চিহ্ন মুছে দিয়েছে। নিহতদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন, যাদের সদ্য বিয়ে হয়েছিল। তারা মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর সদ্যবিধবা নারীদের করুণ ছবি সমাজমাধ্যমে ছেয়ে গিয়েছিল। বিশেষভাবে ভাইরাল হয়েছিল হরিয়ানার নৌসেনা কর্মকর্তা বিনয় নওয়ালের স্ত্রী হিমাংশী নরওয়ালের ছবি। উপত্যকার মাঝে স্বামীর নিথর দেহ নিয়ে তাকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল। ঘটনার ৬ দিন আগেই বিয়ে হয়েছিল তাদের। ওই ছবিটিই ভারতের প্রত্যাঘাতের প্রতীকী ছবি হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017
Developed By

Shipon