আজ মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০১ পূর্বাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
জানুয়ারির শুরুতেই পৌষের শীতে জবুথবু সারাদেশ। তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ৮ ডিগ্রির ঘরে। কুয়াশা ঝরছে বৃষ্টির মতো। সেই সঙ্গে হিমেল হাওয়া। এমন অবস্থায় দেশের ১৩ জেলা ও এক বিভাগে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার দেশের রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগা এবং কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
এসময় সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি ও দিনের তাপমাত্রা দেশের পশ্চিমাংশে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিনের বেলা শীতের অনুভূতি বিরাজ করতে পারে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, আগামী সাপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে দেশে সামান্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এসময় উত্তারঞ্চলে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ১৩ দশমিক ৮, যা বুধবার ছিল ১৫; রাজশাহীতে ছিল ১২, ২ ডিগ্রি কমে ১০ দশমিক ৫; রংপুরে বুধবারেও ১২ দশমিক ৫, বৃহস্পতিবারও তাই ছিল; ময়মনসিংহে বৃহস্পতিবার দুই ডিগ্রি কমে ১৩ দশমিক ৫, ছিল ১৫; সিলেটেও ছিল ১৬ দশমিক ২, বৃহস্পতিবারও ১৬ দশমিক ২, চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার ১৬ দশমিক ৫, ছিল ১৫ দশমিক ৭; খুলনায় বৃহস্পতিবার দুই ডিগ্রি কমে ১২ দশমিক ৩, যা বুধবার ছিল ১৪ দশমিক ৫; বরিশালে ছিল ১৪ দশমিক ৩, বৃহস্পতিবার প্রায় একই ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর বাইরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকা জেলাগুলো হচ্ছে— ঈশ্বরদীতে ১০, দিনাজপুরে ১০ দশমিক ২, বাঘাবাড়ি ও বদলগাছিতে ১০ দশমিক ৪ এবং যশোরে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রসঙ্গত, তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়, ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি আর ৪ দশমিক ১ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
এদিকে, হাড় কাঁপানো শীতে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছেন হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। তীব্র শীতে মিলছে না কাজ। দিনমজুর-নিম্ন আয়ের মানুষের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। তাদের এই তিক্ত অবসর কাটছে আগুন জ্বালিয়ে। এই তাপই যেন শীতে তাদের একমাত্র ভরসা।
কনকনে ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে সর্ব দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজন। সন্ধ্যা নামতেই উপকূলজুড়ে বাড়ে শীতের তীব্রতা। কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে শীতকষ্টে পড়েছে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাতে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। মৃদু বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। কনেকনে ঠান্ডায় কষ্টে পড়েছে হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা।
অপরদিকে, কুয়াকাটায় শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ পর্যটকই হোটেলে অবস্থান নিয়েছেন সন্ধ্যার পরপরই। তবে অনেকে আবার বাইরে আগুন জ্বালিয়ে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমানোর চেষ্টাও করছে। রাত গভীর হওয়ার আগেই অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান পাট বন্ধ করে বাসায় চলে গিয়েছে।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় তেমন একটা শীত নেই। কিন্তু কুয়াকাটায় এত পরিমাণ ঠান্ডা লাগছে যে, বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে থাকতে পারছি না। এমনিতে তো ঠান্ডা পরছে অনেক তার মধ্যে আবার চলছে হালকা বাতাস। সব মিলিয়ে খুবই ঠান্ডা পরছে এ এলাকায়।
পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার জাহান বলেন, গত এক মাস ধরে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবেই ওঠানামা করছে। কিন্তু বর্তমানে পুরো উপকূলজুড়ে শীতের তীব্রতা অনেকটা বেড়েছে। বর্তমানে ১৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রয়েছে এ জেলায়। তবে এ মাসেই ২-৩টি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।