আজ সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১০ অপরাহ্ন
পল্লী জনপদ ডেস্ক ॥
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ‘পরিকল্পিত’ বলে মনে হয়েছে অগ্নি নির্বাপণে অংশ নেওয়া নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তার কাছে।
নৌবাহিনীর সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বলেছেন, “শর্ট সার্কিট থেকে নয়, এটা পরিকল্পিতভাবে হয়ত আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।”
বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় দশ ঘণ্টা পর সেই আগুন নেভানো সম্ভব হয়। নৌবাহিনীর একটি দলও আগুন নেভাতে কাজ করে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে সচিবালয়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের আমিনুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের নৌবাহিনীর টিম এখানে কাজ করছেন। শর্ট সার্কিট থেকে নয়। মনে হল, পরিকল্পিতভাবে লাগছে। মনে হল বিভিন্ন জায়গা থেকে হয়েছে। শর্ট সার্কিট হলে একটা জায়গা থেকে হয়। এক জায়গা থেকে নয়, এটা হয়েছে কয়েকটা জায়গা থেকে।”
রাতে অগ্নিকাণ্ডের সময় দশ তলা ওই ভবনের উপরের দিকের একটি ফ্লোর এমাথা-ওমাথা জ্বলতে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় সন্দেহ প্রকাশ করেন।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল অবশ্য এর ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, যেভাবে আগুন ছড়িয়েছে সেটা ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কারণে হতে পারে। এক জায়গা আগুন ধরলে বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে সব জায়গা ছড়িয়ে পড়ে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এরকম ঘটতে পারে। তবে তদন্ত শেষ না করে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে তদন্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেছেন । তবে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সরাসরিই ‘ষড়যন্ত্রের’ কথা বলেছেন।
এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল।
“আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনো জানা যায়নি। আমাদেরকে ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে, তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।”
ওই ভবনের ভেতরের পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে নৌবাহিনীর সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার আমিনুল সাংবাদিকদের বলেন, “ভেতরের সব নথিপত্র পুড়ে গেছে। যেখানে যেখানে আগুন গেছে সব জায়গায় পুড়ে গেছে। আমরা সময়ে সময়ে আপডেট করব।”
আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। রাতে খবর পাওয়ার পর আমাদের ফায়ার টিম সচিবালয়ে চলে আসে।
সচিবালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একটা ভবনের নানা জায়গায় কীভাবে আগুন লাগলো- জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি তো দেখিনি কীভাবে আগুন লেগেছে। তবে আমরা ভেতরের পরিস্থিতি দেখে ধারণা করছি, শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগেনি। যদি শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতো তাহলে নানা স্থানে আগুন লাগতো না। কে, কারা বা কীভাবে আগুন লাগালো সেটার সঠিক তথ্য এখনও আমাদের হাতে আসেনি। প্রাথমিকভাবে আমার মনে হয় কেউ পরিকল্পিতভাবে এ কাজটি করেছে।
আপনার এ ধারণা কেন হলো- জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এখানে যে আগুনটা লেগেছে সেটা বিভিন্ন স্থান থেকে লেগেছে। শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগলে যেকোনো এক পাশ থেকে লাগতো। এখানে দেখা গেছে বিভিন্ন স্থান থেকে আগুন লেগেছে। শর্টসার্কিটে হয়নি পরিকল্পিতভাবে কেউ হয়তো আগুন লাগিয়েছে।
ভেতরে কী রকম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে- জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বলেন, ক্ষয়ক্ষতি কী পরিমাণ হয়েছে সেটা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। যেসব স্থানে আগুন লেগেছে সেখানে কোনো নথিপত্র নেই, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে মোটামুটি সবই পুড়েছে। আমরা সব এখনও চিহ্নিত করতে পারিনি। কাজ করছি।
আপনাদের কোনো সদস্য এখন ভেতরে আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছু সদস্য এখনও ভেতরে রয়েছে, তারা কাজ করছে। আমাদের পুরো টিম আছে।